প্রথমবারের মতো সিউল থেকে নতুন ফোন উন্মোচন করতে যাচ্ছে স্যামসাং। গ্যাংনামের কোয়েক্স কনভেনশন সেন্টারে ২৬ জুলাই আয়োজিত হবে উন্মোচন অনুষ্ঠান। এর মাধ্যমে স্মার্টফোনের জগতে নতুন আদর্শ স্থাপন করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রায় এক দশক ধরে স্যামসাং নতুন ফোনের উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। ২০১০ সালের মার্চে প্রথম আসর আয়োজিত হয় লাস ভেগাসে। তারপর নিউইয়র্ক, লন্ডন, বার্লিন ও বার্সেলোনায় আয়োজিত হয় উন্মোচন অনুষ্ঠান।
স্যামসাংয়ের প্রধান রোহ তাই মুন দাবি করেছেন, ফোল্ডেবল ঘরানার স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে স্যামসাং নতুনত্বকে প্রাধান্য দেয়ার দর্শনকে লালন করে। ভবিষ্যতের মোবাইল ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে এটি। সিউলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করাটা একই সঙ্গে শহর ও ফোনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সিউল আবিষ্কার ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে সাম্প্রতিক দিনগুলোয়।
নতুন ফোন উন্মোচনের মাধ্যমে কোম্পানি ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন সিরিজের আরো একটা অধ্যায় যুক্ত করতে যাচ্ছে। তালিকায় রয়েছে গ্যালাক্সি জি ফ্লিপ ফাইভ, গ্যালাক্সি জি ফোল্ড ফাইভ ও গ্যালাক্সি ওয়াচ সিক্স। স্যামসাং দাবি করেছে, স্যামসাং তাদের ফোল্ডেবল ডিভাইসের জন্য আয়োজনের কেন্দ্র পরিবর্তন করতে চায়। বিশেষ করে গুরুত্ব দিতে চাচ্ছে পৃথিবীর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোয়। তার জন্য প্রতিটি আসরের জন্য থাকবে বিশেষ থিম।
চলতি বছর সিউলকে নির্বাচিত করার কারণ বৈশ্বিক ট্রেন্ডকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে শহরটির ভূমিকা। এটি স্যামসাংয়ের আত্মবিশ্বাসকেও প্রতীকায়িত করবে।
ফেব্রুয়ারিতে স্যামসাং সান ফ্রান্সিসকোতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নতুন তিনটি মডেলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য। গ্যালাক্সি এস২৩ সিরিজের ফোন তিনটি হলো গ্যালাক্সি এস২৩, এস২৩ প্লাস ও এস২৩ আল্ট্রা। সঙ্গে ছিল গ্যালাক্সি বুক থ্রি ল্যাপটপ ও অন্যান্য বিষয়াবলিও। এদিকে গত মাসে গুগল প্রথম ফোল্ডেবল স্মার্টফোন বাজারে আনে। নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে স্যামসাংয়ের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে।
গত সপ্তাহে কোম্পানিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা লি ইয়ং হি দাবি করেছেন, আগামী দুনিয়ার ভেন্যু বিবেচনা করতে হলে সিউল অর্থবহ ও গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া স্যামসাংয়ের তালিকায়ও সিউলের নাম সবার ওপরেই ছিল। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ অনুসারে, ফোল্ডেবল ফোনের বার্ষিক চালানে সিউলের শেয়ার শীর্ষে। ২০২২ সালে মোট সরবরাহের ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল সিউল থেকে।
স্যামসাং এখন থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক শহরগুলোয় আসরের আয়োজন করবে। যদিও বিশ্লেষকদের ধারণা অনুযায়ী, ২০৩০ ওয়ার্ল্ড এক্সপোর আয়োজক হওয়ার দৌড়ে রয়েছে বুসান। স্যামসাং সিউলে আয়োজন করার মাধ্যমে একধরনের প্রচারণা চালাচ্ছে বুসানের পক্ষে। স্যামসাংয়ের পণ্য উন্মোচনের আগেই বুসানের আধিপত্য ছিল। অন্যান্য শহরকে আলোচনায় আনার চেষ্টা করছে প্রযুক্তি জায়ান্টটি।
অবশ্য কয়েকজন বিশ্লেষকের মুখে ভিন্ন অভিমত পাওয়া যাচ্ছে। তারা বলছেন, ‘স্বদেশী শহরে উন্মোচন কেবল বাজারজাতের খরচ কমানোর জন্য। প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটির আয় কমেছে ৯৬ দশমিক ৬ শতাংশ। গত ১৪ বছরের মধ্যে যা সর্বনিম্ন। জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে স্যামসাংয়ের বিক্রি ছিল ৬৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ওন। আয় দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ওনে।’
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো গ্যালাক্সি ফোল্ড সামনে আনে স্যামসাং। তার পর থেকেই ফোল্ডেবল সিরিজ স্মার্টফোনের নতুন ঘরানা হিসেবে এগিয়ে নিচ্ছে স্যামসাং। তবে নতুন উন্মোচনের ক্ষেত্রে আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। সবশেষে গ্যালাক্সি ফোল্ডেবল ফোন উন্মুক্ত করা হয়েছে গত বছরের আগস্টে। তখন থেকেই গুঞ্জন ছিল নতুন ফোন বাজারে আনার ব্যাপারে। রোহ বলেছেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে ফোল্ডেবল ফোন হবে স্যামসাংয়ের মোট সরবরাহ করা প্রিমিয়াম স্মার্টফোনের ৫০ শতাংশের বেশি। স্মার্টফোনের জগতে ফোল্ডেবল নতুন আদর্শ স্থাপন করবে।’