২০২৫ সাল নাগাদ ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের জাহাজীকরণ চার গুণ ছাড়াবে। কেননা বর্তমানে অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট উৎপাদনকারীরা (ওইএম) প্রিমিয়াম ডিভাইসের ব্যবসায় মনোনিবেশ করছে। সম্প্রতি এক জরিপ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক শ্বেতপত্রে কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ জানায়, ২০২৫ সাল নাগাদ ওইএমগুলো ৫ কোটি ৫০ লাখ ইউনিট ফোল্ডেবল ডিভাইস জাহাজীকরণ করবে। ২০২২ সালে প্রিমিয়াম সেগমেন্ট ডিভাইসের এ খাতটি মাত্র ১ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে এ সময় সমগ্র স্মার্টফোন মার্কেট ১২ শতাংশ পতনের মুখে ছিল।
অর্থনৈতিক দুর্দশার সময় প্রিমিয়াম সেগমেন্ট যে শুধু স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করে তা নয়, পাশাপাশি মুনাফার হারও বাড়িয়ে দেয়। হংকংভিত্তিক কাউন্টারপয়েন্টের এক গবেষক এ কথা জানান। তার মতে, প্রিমিয়াম অফারিংয়ের মাধ্যমে ফোল্ডেবল স্মার্টফোন নতুন মাধ্যমে পরিণত হয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের উন্নত অভিজ্ঞতা দিয়ে থাকে।
মূলত স্যামসাংয়ের উদ্যোগের কারণে ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি প্রথম গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড উন্মোচন করে। এর পরের বছরই ক্ল্যামশেল ডিজাইনের গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ প্রকাশ্যে আনে দক্ষিণ কোরিয়ার এ প্রযুক্তি জায়ান্ট। শিগগিরই সিউলে আয়োজিত হতে যাওয়া আনপ্যাকড ইভেন্টে গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড৫ ও ফ্লিপ৫ উন্মোচন করবে কোম্পানিটি।
বৈশ্বিক পর্যায়ে স্মার্টফোনের চাহিদা প্রতিনিয়ত কমছে। অন্যদিকে ওইএমগুলো প্রিমিয়াম সেগমেন্টের দিকে মনোযোগ বাড়াচ্ছে। মূলত ৬০০ বা তার বেশি মূল্যের ডিভাইসগুলোকে প্রিমিয়াম ক্যাটাগরিতে রাখা হয়। ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার ৮ শতাংশ এবং প্রান্তিক হিসেবে ৫ শতাংশ অবনমনের শিকার হয়েছে। কাউন্টারপয়েন্টের অন্য এক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, টানা আট প্রান্তিক ধরে এ হার নিম্নমুখী।
কাউন্টারপয়েন্টের এক গবেষক জানান, আগে স্মার্টফোনের বৈশ্বিক বাজার যে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বর্তমানে সে সময় আর নেই। এখন গ্রাহক সহসা সেলফোন পরিবর্তন করেন না। এছাড়া স্মার্টফোনের বাজারেও পরিবর্তন আসছে। বর্তমানে প্রিমিয়াম ও ফ্ল্যাগশিপের প্রতি গ্রাহকের আগ্রহ বাড়ছে। এদিক থেকে প্রিমিয়াম সেগমেন্টের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে প্রিমিয়াম সেগমেন্ট। কেননা এ সময় বিক্রি হওয়া প্রতি পাঁচটি স্মার্টফোনের মধ্যে একটি ছিল প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির। ২০১৯ সালে ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের বাজার হিস্যা ছিল মাত্র দশমিক ৩ শতাংশ। এরপর প্রতিনিয়ত এ ক্যাটাগরির বাজার বেড়েছে। ২০২২ সালে যা ৫ শতাংশে উন্নীত হয়। জরিপের তথ্যানুযায়ী, এ খাতের প্রবৃদ্ধি চলমান থাকবে। কাউন্টারপয়েন্টের তথ্যানুযায়ী, খুব অল্প সময়ের মধ্যে ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের বাজার দ্রুত বেড়েছে এবং প্রিমিয়াম ক্যাটাগরিতে বড় অংশ দখল করতে পেরেছে। প্রযুক্তিবিদদের মতে, বর্তমানে প্রিমিয়াম সেগমেন্টে অ্যাপলের আইফোনের যে আধিপত্য রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস সেটিতে এখন অংশ নিতে পারবে।
প্রিমিয়াম ক্যাটাগরিতে আইফোন এখন শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে স্বীকার করেছে কাউন্টারপয়েন্ট। তবে বিশ্লেষকদের অভিমত, নতুন ডিজাইন ও ফিচারের মাধ্যমে ফোল্ডেবল ডিভাইস এ খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারবে।
ফোল্ডেবলের বাজারে স্যামসাংকে অগ্রদূত ভাবা হলেও, চীনের অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানিগুলোও এ পথ অনুসরণ করছে। অনেক কোম্পানি এরই মধ্যে নিজস্ব ফোল্ডেবল ডিভাইস বাজারে এনেছে। এ খাতে এখন শীর্ষে চীন। ২০২২ সালের তথ্যানুযায়ী, ২৬ শতাংশ হিস্যা নিয়ে এ খাতে শীর্ষে ছিল দেশটি।