বিশ্বজুড়ে এক দশকের মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিকে সবচেয়ে মন্দা সময় পার করেছে স্মার্টফোনের বাজার। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত, চিপস্বল্পতা ও বিশ্ব অর্থনীতিতে শ্লথগতির কারণে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বৈশ্বিক স্মার্টফোন বিক্রি ৮ শতাংশ কমেছে। প্রযুক্তি বাজারবিষয়ক বিশ্লেষক সংস্থা কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
উন্নত বিশ্বের বাজারে অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মতো জনপ্রিয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর চাহিদা কমে গেছে। বিক্রি কমে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ হিসেবে এ বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়েছেন গবেষকরা। শাওমি, অপো, ভিভোসহ বৈশ্বিক শীর্ষ পাঁচ স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের সম্মিলিত বাজারও তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে।
গত প্রান্তিকে আইফোন বিক্রি ৮ শতাংশ কমেছে। এটি কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ বাজার সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। অন্যদিকে বাজারের আরেক স্মার্টফোন নির্মাতা স্যামসাংয়ের বিক্রি ১৩ শতাংশ কমেছে। তবে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও সামগ্রিক স্মার্টফোন শিল্প কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস মিলছে। তাই বছরের শেষ প্রান্তিকে স্মার্টফোন বাজার চাঙ্গা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তৃতীয় প্রান্তিকে বাজার হিস্যায় এগিয়ে থাকা অ্যাপলের চীনা প্রতিদ্বন্দ্বী হুয়াওয়ে বেশ অগ্রসর হয়েছে। কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চলতি বছরের শুরুতে চীনের বাজারে হাই এন্ড বা ফ্ল্যাগশিপ ক্যাটাগরিতে নতুন স্মার্টফোন মেট ৬০ প্রো উন্মোচন করেছে তারা।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বরে নতুন আইফোন ১৫ সিরিজ বাজারে আসার ঘটনাও স্মার্টফোন বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাব্য অনুঘটক হতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও কোরিয়ার মতো উন্নত বাজারগুলোয় বিক্রি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বাজার গবেষণা সংস্থাটি আশা করছে, চলতি বছর সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া বিক্রি বৃদ্ধির প্রবণতা বছরের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া ভারতে উৎসবের মৌসুম ও চীনের ১১.১১ বিক্রয় ইভেন্ট বছরের শেষ প্রান্তিকে স্মার্টফোন বাজারকে কিছুটা ইতিবাচক ধারায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী উৎসব মৌসুমকে সামনে রেখে বিক্রির সঙ্গে কর্মসংস্থান বাড়তে পারে। ফাইভজি স্মার্টফোনের চাহিদা, সরবরাহ ও বিক্রি বাড়ার সঙ্গে গ্রাহকের ইতিবাচক মনোভাব কোম্পানিগুলোর বিক্রি বাড়াতে সহায়তা করবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব, যন্ত্রাংশ সরবরাহ সংকট, অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তবে এটি লক্ষণীয় সামগ্রিক স্মার্টফোন শিল্পের নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও উদীয়মান বাজারগুলো স্মার্টফোন বিক্রির জন্য একটি ভালো জায়গা হয়ে উঠেছে। কাউন্টারপয়েন্টের তথ্যানুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় অবশ্য তৃতীয় প্রান্তিকে বছরওয়ারি বাজার প্রবৃদ্ধির রেকর্ড তৈরি হয়েছে।