খুব ছোট আকারে প্রাইভেট সেক্টরের উদ্যোগে , BTRC প্রতিষ্ঠার আগে ইন্টারনেট সার্ভিস কোম্পানী শুরু হয়। অনেক উত্থান পতন এবং সমস্যার মধ্য দিয়ে ইন্টারনেট কোম্পানীগুলো দেশের ডিজিটাল সেক্টরে ভূমিকা রাখা শুরু করে। ভিস্যাট ইন্টারনেট থেকে সাবমেরিন এবং দেশের ভিতরে ফাইবার ইন্টারনেটের ইনভেস্টমেন্ট হতে থাকে। NTTN প্রোভাইডার লাইসেন্সের সুবাদে দুটি কোম্পানী একটু বড় আকারের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করলেও ইন্টারনেট কোম্পানীগুলো তাদের নিজস্ব ইনভেস্টমেন্ট এ ফাইবার নেটওর্য়াক স্থাপন করা লাগে। নিম্ন থেকে উচ্চমানের ইকুইপমেন্টগুলোতে খরচের তারতম্য অনেক বেশি, ফলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইন্টারনেট কোম্পানীগুলো তাদের সক্ষমতা অনু্যায়ী ইকুইপমেন্টে ইনভেস্ট করে। নিতান্ত ভালো ব্যবস্থাপনা বা বেশি ইনভেস্টমেন্ট এর কোম্পানী ছাড়া বেশিরভাগ কোম্পানীর ইকুপমেন্ট ও সফটওয়্যার নিম্নমানের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেটের চাহিদা বাড়ার কারনে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয়। উল্লেখ্য, ওভারহেড ক্যাবল এর ব্যবহারও ইন্টারনেট ইকোসিস্টেম এর জন্য ভালো নয়।
ফায়ারওয়াল:
ব্যাংক, টেলিকম বা বড় করর্পোরেট ছাড়া কারো জন্যই ফায়ারওয়াল ব্যবহারের প্রয়োজন তেমন একটা পড়ে না । এর ফলে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেক্টরে ফায়ারওয়াল ব্যবহারের গুরুত্ব তৈরী হওয়ার সময় সুদীর্ঘ নয়। ইন্টারনেট ও কন্টেন্ট কন্ট্রোলের জন্য বিভিন্ন রকমের ফায়ারওয়াল ব্যবহার করা হয়। যেমন – মেইল ফায়ারওয়াল, কন্টেন্ট ফায়ারওয়াল ও নেটওয়ার্ক ফায়ারওয়াল। সমস্যা হলো, খুবই শক্তিশালী ফায়ারওয়াল বা অনেক বেশি থ্রুপুট এর না হলে আইএসপি’র পুরো নেটওয়ার্ক স্লো হয়ে যায়। কারন ফায়ারওয়াল এর মধ্যে দিয়ে সব ডাটা যেতে আসতে থাকে।
কন্টেন্ট ক্যাশিং:
লোকাল আইএসপিগুলো বিভিন্ন সিডিএন বা এপ্লিকেশনের ডাটা ক্যাশ সার্ভার ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে ক্যাশ করে রাখতে পারে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার হয় না। ডাটাগুলা প্রয়োজন অনুযায়ী লোকাল সার্ভার থেকে সার্ভ হয়। যেমন আপনি একটা মুভি ইন্টারনেটে প্রথমবার দেখলেন, সেটি ইন্টারনেট থেকে ক্যাশ সার্ভারে আসবে – সেটা আমি দেখতে গেলে আর ইন্টারনেট ব্যবহার হবেনা, ক্যাশ সার্ভার থেকে আমাকে দেখাবে। ক্যাশিং সার্ভারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক – যদি রেগুলার আপডেট না হয়, তাহলে ক্যাশ এর ডাটা অটোমেটিক ডিলিট হয়ে যাবে। ইন্টারনেট ব্যাহত হওয়ার কারনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যাশ ক্লিয়ার হয়ে যায় যেগুলো এখন ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি আসার ফলে আবার ক্যাশিং হচ্ছে এবং সেখানে ইন্টারনেট লোড এর পরিমান বেশি হচ্ছে।
কনটেন্ট মনিটরিং:
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ইউজারের লগ মনিটরিং এর একটা ব্যবস্থাপনা সব আইএসপি তে আছে। সেখান থেকে ইউজার কোন কোন সাইট, এপ্লিকেশন এবং নেটওয়ার্ক এক্সেস করে সেটার ইনফরমেশন পাওয়া যায়। কনটেন্ট এর ডিটেইল মনিটরিং করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয় না কারন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কন্টেন্ট এপ্লিকেশনে encrypted ভাবে সার্ভ করা হয় – যেমন ফেইসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ। এই ক্ষেত্রে মনিটরিং করতে এপ্লিকেশন প্রোভাইডার এর সাপোর্ট প্রয়োজন হয়৷ এপ্লিকেশন প্রোভাইডার যদি অন্য-দেশের হয় সেক্ষেত্রে ডিপ্লোমেটিক রিলেশনশীপে সেটা চাওয়া যেতে পারে। একান্ত ডিপ্লোমেটিক প্রক্রিয়ায় সেটা পাওয়া না গেলে যেকোন দেশ তার লোকাল পলিসি দিয়ে মেইনস্ট্রিম ফায়ারওয়ালগুলোতে ওই এপ্লিকেশন গুলো বন্ধ করে দিতে পারে। ফেইসবুক আর ইউটিউব বন্ধ ব্যাপারটা ঠিক এরকমই। কিন্তু এগুলোর গুরুত্ব বিজনেসে বেশি হওয়ার কারনে এগুলোকে কোথাও বন্ধ করা হয় না।
ইন্টারনেট কন্ট্রোল:
পৃথিবীতে খুব কম দেশ আছে যারা ইন্টারনেট পুরোপুরি কন্ট্রোল করতে পারে নিজের দেশের জন্য, চীন – সম্ভবত একমাত্র দেশ যারা যুগ যুগ ধরে ইনভেস্টমেন্ট করে অন্য দেশের এপ্লিকেশনের ব্যবহার কমিয়ে এনেছে, বা একটা পর্যায়ে কন্ট্রোল করতে পারছে। কারন তারা নিজেদের টেকনোলোজিকে যথেষ্ঠ শক্ত অবস্থানে নিয়ে আসতে পেরেছে। খুবই সহজ বা দ্রুততার সঙ্গে অন্যদের এই কাজটি করার সুযোগ নেই।
NIX এর সক্ষমতা:
বাংলাদেশে বর্তমানে ৯ টা NIX আছে, তার মধ্যে BDIX জনপ্রিয়। আমাদের দেশের ভিতরে ডাটা ট্রান্সফারের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলছে, এই প্রেক্ষিতে NIX নেটওয়ার্ক ক্যাপাসিটি নিয়মিতহারে বৃদ্ধি করা খুবই জরুরী।
কর্পোরেট ভার্সেস রিটেইল ইন্টারনেট:
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হোম ইউজারের কাছে ইন্টারনেট পৌছায় মোবাইল ইন্টারনেট দিয়ে৷ কিন্তু বাংলাদেশে হোম ইন্টারনেটে ফাইবার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা ইউজারের সংখ্যা কম না। বেশিরভাগ আইএসপি রিটেইল এবং কর্পোরেট একসঙ্গে দুটো সার্ভিস দিয়ে থাকে। রিটেইল এর ক্ষেত্রে শেয়ারড এবং কর্পোরেটের ক্ষেত্রে ডেডিকেটেড চ্যানেল দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে যেসব আইএসপির ভালো ডিজাইন এবং ইনভেস্টমেন্ট নেই, তারা কর্পোরেট ও রিটেইলে একই রাউটার পয়েন্ট থেকে সার্ভ করে । যার ফলে ইন্টারনেট ফ্লাকচুয়েট করে এবং কর্পোরেট ভালো সার্ভিস পায় না। কর্পোরেটের ক্ষেত্রে ভালো ইন্টারনেট মানে আপলিংক ও ডাউনলিংকের ডেডিকেটেড চ্যানেল/ব্যান্ডউইথ বরাদ্দ করাকে বুঝায়। বিদেশী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো এক্ষেত্রে খুবই কম ভোগান্তির শিকার হয়, কারন তারা বাংলাদেশের অফিস থেকে ইন্টারন্যাশনাল অফিস পর্যন্ত ডেডিকেটেড প্রাইভেট চ্যানেল ব্যবহার করে।
বর্তমান সমাধান:
আপনার বর্তমান আই এস পির সঙ্গে কথা বলুন, ডেডিকেটেড চ্যানেল কনফার্ম করুন অথবা ব্যান্ডউইথ বাড়িয়ে নিন। ক্যাশ সার্ভার আপডেট হচ্ছে কিনা সেটা জানুন, ফায়ারওয়াল ব্যবহার থাকলে সেটার ক্যাপাসিটি ভালো কিনা সেটা জেনে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি নিন। ব্যাবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে অবশ্যই রিডান্ডেন্ট কানেক্টিভিটি থাকা জরুরী।
লেখক : ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফাইন্যান্স), বেসিস।
ফাউন্ডার, ডিভাইন আইটি লিমিটেড