বাংলাদেশ থেকে যদি রকেট উৎক্ষেপণ করা যায় তাহলে অনেক কম শক্তিতে রকেট পৃথিবী ছেড়ে মহাশুন্যে যেতে পারবে। এতে করে রকেট উৎক্ষেপণ করার ক্ষেত্রে বিপুল সাশ্রয় হবে। এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সাবেক সিস্টেম অ্যাডমিন আজাদুল হক। আজ (২০ জুলাই) তিনি তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে তিনি এমন তথ্য দেন।
আজাদুল হকের স্ট্যাটাসটি নিচে হুবহু দেওয়া হলো-
শুনতে খুবই অদ্ভুত মনে হচ্ছে তাই না? আসলেই কি এটা সম্ভব? তা হলে কিভাবে সম্ভব? আসুন চায়ের কাপে ঝড় তুলি, করি এই নিয়ে কিছু সহজ আলাপন।
একটি রকেটের পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টান ছেড়ে যাবার জন্য প্রয়োজন প্রচন্ড শক্তি। এটাকে এস্কেপ ভেলোসিটি বলে। যখন কোন রকেট এই এস্কেপ ভেলোসিটির থেকেও বেশী শক্তিশালী হয় তখনই সে মাধ্যাকর্ষণের টান ছেড়ে মহাশূন্যে যেতে পারে। এদিকে পৃথিবী তো নিজেই ঘুরছে প্রচন্ড গতিতে, ঘণ্টায় প্রায় ১৬৭০ কিলোমিটার গতিতে। এই গতি সবচেয়ে বেশী অনুভূত হয় ইকোয়েটর বা বিষুবরেখায়। মানে বিষুবরেখার যত কাছে আপনি থাকবেন তত বেশী এই গতি অনুভূত হবে। তবে আমরা নিজেরাই যেহেতু এই পৃথিবীর ওপর থাকি এবং পৃথিবীর তুলনায় আমাদের আয়তন খুবই সামান্য তাই আমরা তা অনুভব করি না।
কিন্তু একটা রকেট যখন পৃথিবী ছেড়ে যাবে তখন এই ঘুর্নন গতির কথা তাকে হিসাবে ধরতে হবে। মনে করুন আপনি একটি চলন্ত বাসে বা ট্রেনে উঠবেন। আপনি যেহেতু স্থির, তাই আপনার থেকে বাস বা ট্রেনের আপেক্ষিক গতি বেশী। আপনি যদি সহজে উঠতে চান তবে আপনাকে একটু দৌড়ে ঐ বাস বা ট্রেনের গতির কাছাকাছি গতিতে যেতে হবে। তাহলে আপনার এবং বাস বা ট্রেনের আপেক্ষিক গতি হবে সমান সমান এবং আপনি সহজেই উঠতে পারবেন। দাঁড়িয়ে থেকে হঠাত করে আপনি উঠতে পারবেন না।
এই একই কারনে আমেরিকার সব রকেট ফ্লোরিডায় থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। ফ্লোরিডা হচ্ছে বিষুবরেখার সবচেয়ে কাছে। সেই দূরত্বও প্রায় ১১,০০০ কিলো মিটারের মতন। এখান থেকে রকেট উৎক্ষেপণ করলে পৃথিবীর ঐ ঘুর্নন গতিতে কাজে লাগিয়ে রকেট সহজেই মহাশূন্যে যেতে পারে।
এবার ভাবুন বাংলাদেশের কথা। বাংলাদেশ বিষুবরেখার থেকে মাত্র ২৬০০ কিলোমিটার দূরে!!! তাই বাংলাদেশ থেকে যদি রকেট উৎক্ষেপণ করা যায় তাহলে আরো কম শক্তিতে রকেট পৃথিবী ছেড়ে মহাশুন্যে যেতে পারবে। তারমানে, রকেটের এসআরবি বা সলিড রকেট বুস্টারের ওজন কমানো যেতে পারে যার বদলে বেশী ওজনের পে লোড নেয়া যাবে। এতে করে রকেট উৎক্ষেপণ করার ক্ষেত্রে বিপুল সাশ্রয় হবে।
বাংলাদেশে এখন ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে এবং এজন্য বিশাল পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এমন তো হতে পারে যে উপকুলীয় অঞ্চলে একটি বিশাল জায়গা নিয়ে বাংলাদেশ একটি অত্যাধুনিক স্পেস পোর্ট বা রকেট লঞ্চিং স্টেশন তৈরী করবে। এরপর সারা পৃথিবীর সব রকেট প্রস্তুতকারীদের উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে বাংলাদেশ থেকে রকেট পাঠানোর জন্য। সমুদ্র পথে অনায়াসে রকেট গুলো নিয়ে আসা সম্ভব এবং সহজেই তা উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। যেমন স্পেস-এক্স-এর সাথে চুক্তি করা যেতে পারে তাদের সব রকেট এখান থেকে পাঠানোর জন্য। তাঁরা যদি দেখে যে অনেক কম মূল্যে তাঁরা রকেট পাঠাতে পারছে তবে কেন তাঁরা রাজী হবে না?
এটা কিন্তু অবাস্তব কল্পনা নয়। আজ থেকে ২০ বা ২৫ বছর পর এমন কিছু করে ফেলা আসলেই কিন্তু সম্ভব। মনে করুন আজ ত্থেকে ২০ বছর পর একটা রকেট যাচ্ছে আর সব মিডিয়াতে শুধু বাংলাদেশের নাম! অন্তত এ নিয়ে একটা স্টাডি করা যেতে পারে।
বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে সম্মানজনকভাবে পরিচয় করে দেবার জন্য এটা কি যথেষ্ট নয়? আপনাদের কি মনে হয়?