পরিচয় ফেসবুক কিংবা অন্য কোনো সামাজিক মাধ্যমে। তারপর সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা। বিদেশ থেকে দামি উপহার এসেছে, অথবা লটারিতে জিতেছেন কোটি টাকা- এমন প্রলোভনে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া। রাজধানীতে এমন অভিনব প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে একটি চক্র। দেশি বিদেশি এই প্রতারক চক্রের তিন জন গ্রেফতার হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।
সুন্দরী নারীর ছবি ফেসবুক প্রোফাইলে। পাঠানো হয় বন্ধুত্বের অনুরোধ। ম্যাসেঞ্জারের কথোপোকথনে গভীর হয় বন্ধুত্ব। এক পর্যায়ে সেই বিদেশি বন্ধুর কাছ থেকে আসে দামি উপহার। বিমানবন্দর থেকে কাস্টমস কর্মকর্তা ফোন দিলে প্রথমে কিছুটা দ্বিধা থাকলেও, বিস্তারিত তথ্য একের পর এক ফোন আসতে থাকলে এক পর্যায়ে বিশ্বাস না করে আর কোনো উপায় থাকে না। কারণ এরই মধ্যে বিদেশি বন্ধুটিও জানিয়েছে উপহার পাঠানোর কথা।
বিদেশি বন্ধু জানিয়েছিলো পার্সেলে আছে সামান্য কিছু উপহার। কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তা কাজী সালাহউদ্দিন দিতে থাকে একের পর এক চমক। প্রথমে বলা হয় পার্সেলে আছে সোনা যা ছাড়াতে লাগবে ৬৫ হাজার টাকা। কিছুক্ষণ পর তথ্য, স্ক্যান করে পার্সেলে ৬০ হাজার পাউন্ড আছে। ছাড়াতে লাগবে মোটা অংকের টাকা। কয়েক কিস্তিতে ৮ লাখ টাকা পরিশোধের পর হুঁশ হয় ভুক্তভোগীর।
ঠিক একই রকম প্রতারণার শিকার হয়ে ৫৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা খুইয়েছেন আরেক নারী। তার কাছে আসা পার্সেলে রয়েছে ৫০ হাজার পাউন্ড- জানতে পেরেছে জাতিসংঘের মানি লন্ডারিং বিভাগ। এই টাকা সন্ত্রাসবাদে ব্যবহার হবে কি না বিষয়টি নিশ্চিত হতে লাগবে জাতি সংঘের অ্যান্টি টেরোরিস্ট ইউনিটের ছাড়পত্র। শুধু তাই নয় ইন্টারপোলের ছাড়পত্রও প্রয়োজন। প্রতিটি দফতর থেকে চিঠিও আসে ইমেইলে। প্রত্যেক সনদের জন্য লাগবে লাখ লাখ টাকা।
এসব প্রতারণার পেছনে আছে বাংলাদেশি নাগরিক বাচ্চু ও তার স্ত্রী। আছে ঢাকায় বসবাসরত নাইজেরিয়ান নাগরিক হেনরি। বিদেশ থেকে এসব চিঠি পাঠায় মাইকেল। আর কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে ফোন দেয় বাকি সহযোগীরা।
তবে বাচ্চুর স্ত্রী ফাতেমাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি এখনো। গ্রেফতার লিটন, জসিম ও শাওনের ব্যাংক হিসাবে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
গোয়েন্দা বিভাগ উপ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষরা এই অন্যায়ভাবে লোভী হবেন না, যে বিদেশি বন্ধুরা দামি দামি উপহার পাঠাবে।
এই চক্রের সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা।