ইউটিউব ও নেটফ্লিক্স থেকে যে ট্যাক্স পাওয়ার কথা সরকার তা পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘ওটিটি প্লাটফর্ম একটি ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্র এবং এখানে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসার সুযোগ রয়েছে, যা অবশ্যই করযোগ্য। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য প্লাটফর্ম যেমন নেটফ্লিক্স, ইউটিউব প্রভৃতির কাছে দেশের অনেক অর্থ চলে যাচ্ছে, কিন্তু সেখান থেকে সরকার যেভাবে ট্যাক্স পাওয়ার কথা তা পাচ্ছে না।’
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় অংশ নেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো.নূর-উর-রহমান, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক প্রমুখ।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যারা সরকারের অনুমতি না নিয়ে এ ধরণের ব্যবসা করছে, তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা, আর কেউ যদি অনুমতি নিয়ে ব্যবসারত কিন্তু অননুমোদিত কন্টেন্ট প্রচার করে, তাদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে গ্রামীণফোন এবং রবি’র কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল ‘গ্রামীণফোন যে উত্তর দিয়েছে সেখানে ঠিকভাবে ব্যাখ্যা নেই, আর ‘রবি’ উত্তর প্রস্তুত করছে বলে জানিয়েছে। এগুলোকে একটি সমন্বিত নিয়ম-নীতির মধ্যে আনার লক্ষ্যেই আজকের সভা।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রবক্তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের দেশে এবং সারা পৃথিবীতেই এ নতুন বাস্তবতা মূল্যবোধ ও আইনগত নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ফলে যে বিষয়গুলোর সাথে আমরা আগে সংযুক্ত ছিলাম না, সেগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।’
অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি করে সামাজিক অস্থিরতা প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ওটিটি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। ফলে এসব মাধ্যম ব্যবহার করে সমাজ বিনির্মাণের যেমন সুযোগ আছে, সমাজকে অস্থিতিশীল করারও সুযোগ থাকে। আমরা সময়ে সময়ে দেখতে পাচ্ছি এ সমস্ত মাধ্যম ব্যবহার করে গুজব রটানো, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। একইসাথে যুবা ও কিশোরদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও তৈরি হয়েছে। এটি একটি বাস্তবতা। এই মাধ্যমগুলো আমাদেরকে ব্যবহার করতে হবে ঠিকভাবে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্লাটফর্ম বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অডিও-ভিডিওসহ নানা কন্টেন্ট প্রচার বর্তমান যুগের একটি ক্রমবর্ধমান বাস্তবতা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সমগ্র পৃথিবীতে এ ধরণের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বিনোদন থেকে শুরু করে নানা কন্টেন্ট সেখানে স্ট্রিমিং করা হচ্ছে, আমাদের দেশেও হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি, এ নিয়ে নানা বিতর্ক হয়েছে, সেন্সরবিহীন কন্টেন্ট প্রদর্শিত হয়েছে এবং এক্ষেত্রে সরকার ঠিকভাবে ট্যাক্স পাচ্ছে না।’
ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ সব বিষয়ে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ওটিটি প্লাটফর্ম পরিচালকদের দায়িত্ববোধ প্রত্যাশা করি। আমাদের দেশের আইন ও সংস্কৃতিকে সম্মান দিয়েই তাদেরকে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।’
সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ওটিটি প্লাটফর্মে কন্টেন্ট ও বিজ্ঞাপন প্রচারসহ সামগ্রিক বিষয়টিকে যুগোপযোগী নিয়ম-নীতি ও করের আওতায় আনার লক্ষ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রচার)-কে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়, যার অপর চার সদস্য হিসেবে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিটিআরসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন করে প্রতিনিধি ও একজন আইন বিশেষজ্ঞ।
অন্যান্যের মধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাহানারা পারভীন এবং মো. মিজান-উল-আলম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. মাসুদ সাদিক, বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সিনিয়র সিস্টেমস এনালিস্ট মসিউজ্জামান খান সভায় অংশ নেন।