রাজধানী থেকে ‘সুন্দরী’ নারী সেজে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করা চক্রের ১৫ নাইজেরিয়ান নাগরিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আমেরিকান নারী সেনা কর্মকর্তা কিংবা ‘সুন্দরী’ নারী সেজে ভুয়া ফেসবুক আইডি বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত ছবি পাঠিয়ে বন্ধুত্ব গড়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয় আন্তর্জাতিক এই চক্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষকে বোকা বানিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপহার দেয়ার প্রতারণার ফাঁদে ফেলত এই চক্রটি।
তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন সিআইডির অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শেখ রেজাউল হায়দার।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গতকাল (বৃহস্পতিবার) পল্লবী থেকে এই ১৫ নাইজেরিয়ানকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পল্লবী থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি জানান, এই চক্রটি আমেরিকান নারী সেনা কর্মকর্তা বা ‘সুন্দরী’ নারী সেজে ভুয়া ফেসবুক আইডি বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত ছবি পাঠিয়ে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। পরবর্তী সময়ে মেসেজের মাধ্যমে তারা জানায়, সে ইয়েমেন/আফগানিস্তান বা সিরিয়াতে আছে এবং তার কাছে কয়েক মিলিয়ন ডলার রয়েছে, কিন্তু ওই দেশে যুদ্ধ চলমান থাকায় যে কোনো সময় মূল্যবান সম্পদ নষ্ট হতে পারে। তাই নতুন বন্ধুকে ওই সম্পদ উপহার দিতে চায়। যদি সে বেঁচে ফেরে, তাহলে পরে তা ফেরত নেবে।
তিনি আরও জানান, এই ধরনের প্রলোভন দিয়ে প্রথমে বন্ধুদের ঠিকানাসহ মোবাইল নম্বর নেয় এবং ওই ঠিকানায় বন্ধুদের মেসেঞ্জারে/হোয়াটসঅ্যাপে উপহারের প্যাকেটের ছবি পাঠায়। পরবর্তী মেসেজে কোনো একটি এয়ারলাইন্সের প্যাকেটের বুকিং দেয়া হয়েছে- এমন রসিদ পাঠায়। ঠিক দুই দিন পর বন্ধুর (ভুক্তভোগীদের) মোবাইলে ফোন করে ভিডিও কলে এয়ারপোর্ট কাস্টমস অফিসে থাকা উপহার প্যাকেট দেখায় এবং কাস্টমসের ভ্যাট বাবদ বিভিন্ন ধাপে টাকা নিতে থাকে।
তিনি জানান, ফরহাদ হোসেন তালুকদার নামের এক ভুক্তভোগী প্রতারণার শিকার হয়ে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে সংবাদমাধ্যমে জানতে পেরে আর টাকা না পাঠিয়ে তিনি সিআইডিকে জানান। এই চক্র পুনরায় আবার টাকা চেয়ে ফোন করলে পুলিশ ও সিআইডির দিক নির্দেশনায় তাদের হাতনাতে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া ব্যক্তিকে মোবাইল, ল্যাপটপসহ বিপুল পরিমাণ আলামতসহ গ্রেফতার করা হয়।
ডিআইজি জানান, এ চক্রটি ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মানুষকে এভাবে বোকা বানিয়ে দামি উপহার দেয়ার নামে নিজ নিজ দেশের সহযোগী ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এরা একটি আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র, তাদের সহযোগীরা উল্লেখিত দেশে অবস্থান করছে।
ডিআইজি আরও জানান, গ্রেফতার হওয়া ১৫ জনের সঙ্গে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৯টি ল্যাপটপ, ২২টি মোবাইল ও ৫টি হিসাবের ডায়েরি উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত দুই জুলাই তিনজনকে এবং ২১ জুলাই ১৩ জনকে একই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে জানায় সিআইডি।
তারা আরও জানায়, প্রতিটি ঘটনায় প্রতারণার টাকা গ্রহণে ব্যবহৃত এক বা একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম মিলে যাচ্ছে। অর্থাৎ এরা বাংলাদেশ বিভিন্ন স্থানে থাকলেও মূলত একই সংঘবদ্ধ একটি চক্র।