অ্যাপল ইনকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুক সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোর ব্যবসা অনুশীলন, মেরুকরণ এবং ভুল তথ্য ছড়ানো নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন, যা আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ফেসবুক ইনকরপোরেশনের চলমান বিরোধে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স।
গত বৃহস্পতিবার ‘কম্পিউটার্স, প্রাইভেসি অ্যান্ড ডাটা প্রটেকশন’ শীর্ষক এক সম্মেলনে টিম কুক বলেন, কিছু সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ অত্যধিক মাত্রায় ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও সহিংস উসকানি সমর্থন করে। অ্যাপগুলো এমন কাজ না জেনে-বুঝেই করে তা নয়। প্লাটফর্মে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং ব্যবসায় ফায়দা নিতেই এমন কাজে সমর্থন দেয় অ্যাপগুলো। এটা অন্যায় এবং বড় ধরনের গোপনীয়তা নীতিমালার লঙ্ঘন। কিন্তু অনেক সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম বছরের পর বছর এমন ঘৃণ্য কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, আমরা অ্যালগরিদম নিয়ে কথা বলছি, যা সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং ভুয়া তথ্যের বিস্তার ঠেকাতে কাজ করছে। কিন্তু আমরা কেন ভাবছি না, সোস্যাল মিডিয়ায় সব ধরনের সম্পৃক্ততা ইতিবাচক। এসব প্লাটফর্মের ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা দেয়া সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের। প্রকৃতপক্ষে লক্ষ্য যখন তথ্য সংগ্রহ করা, তখন নিরাপত্তা গোপনীয়তার বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে যায়।
টিম কুক সম্মেলনে নিজের বক্তব্যে একবারের জন্য ফেসবুকের নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু তথ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টানাপড়েন দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে আগেও একাধিকবার টিম কুক এবং ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গকে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। অ্যাপল নিজেদের সেবাগুলোয় প্রাইভেসি নোটিফিকেশন চালুর লক্ষ্যে কাজ করছে। এ উদ্যোগ ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্লাটফর্মগুলোর সঙ্গে গ্রাহক সম্পৃক্ততা কমাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ফেসবুকের পক্ষ থেকে অ্যাপলকে প্রতিযোগিতাবিরোধী বলে অভিহিত করা হয়েছে। ফেসবুকের অভিযোগ, অ্যাপল ক্রমে পেইড অ্যাপের সংখ্যা বাড়াচ্ছে এবং নিজস্ব ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে বিজ্ঞাপন থেকে আয়ও হয়েছে যথেষ্ট। তবে চলতি বছরের জন্য বিজ্ঞাপনী আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ফেসবুক, তা অনেক কম হবে বলে মনে করছেন ফেসবুকের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ডেভিড ওয়েনার।
ডেভিড ওয়েনারের মতে, এর একটি বড় কারণ হতে পারে আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম আইওএস ১৪-এ সম্ভাব্য নতুন প্রযুক্তি সংযোজন। যদিও আইওএস ১৪-এর প্রাইভেসি নীতিমালা পরিবর্তনের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে এর প্রভাব চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে পড়বে বলে ধারণা করছে ফেসবুক।
অ্যাপল তাদের গোপনীয়তাসংক্রান্ত নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। যেখানে আইওএস ১৪ প্লাটফর্মে অ্যাপ চালানোর সময় বিজ্ঞাপনদাতা শনাক্তকরণ (আইডিএফএ) প্রক্রিয়ায় ব্যবহারকারীর অনুমতি চাইবে। এতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে পরিবর্তন আসবে। অবশ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর প্রভাব পড়বে ছোট ব্যবসার ক্ষেত্রে, ফেসবুকে নয়।
অ্যাপলের উদ্যোগ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, অ্যাপলের আইডিএফএ-সংক্রান্ত পরিবর্তনের মূল কারণ ফেসবুকের ক্ষতি করা, গ্রাহকের প্রাইভেসি জোরদার নয়।
তিনি বলেন, অ্যাপল হয়তো বলছে, তারা মানুষের ভালোর জন্য এমনটা করছে। তবে এমন পদক্ষেপের কারণ পরিষ্কারভাবেই প্রতিদ্বন্দ্ব্বীমূলক মনোভাব। শুধু তা-ই নয়, অ্যাপলকে ফেসবুকের সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীগুলোর একটি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।