ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয়ার জন্য এখনো হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে হ্যাকাররা। এর অংশ হিসেবে হ্যাকাররা ব্যবহারকারীদের বন্ধুর বেশ ধরছে কিংবা এসএমএসের মাধ্যমে সিকিউরিটি কোড প্রদানের জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। খবর বিবিসি।
এক বছর ধরে এ সাইবার আক্রমণ চলছে এবং এখনো অনেকে এ হামলার শিকার হচ্ছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ভয়ংকর এ অভিজ্ঞতার ব্যাপারেও জানাচ্ছেন। এ ব্যাপারে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের নিজস্ব অ্যাকাউন্টের কোনো কোড বা পাসওয়ার্ড কাউকে না দেয়ার ব্যাপারে জোরালোভাবে সতর্ক করে দিয়েছে। যদি সেই ব্যক্তি ঘনিষ্ঠজনও হয়ে থাকে তবু কোড দেয়া যাবে না।
যদি আপনাকে এসএমএসের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপের ছয় ডিজিটের কোড পাঠানো হয়, যেটির ব্যাপারে আপনি একেবারেই অজ্ঞাত, তাহলে আপনিও এ হামলার শিকার হওয়ার সম্ভাবনায় রয়েছেন। সাধারণত হোয়াটসঅ্যাপে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে অথবা নতুন কোনো ডিভাইস থেকে অ্যাকাউন্ট লগ ইন করার ক্ষেত্রে কোডের প্রয়োজন হয়। যদি আপনি এ দুটির কোনোটিই না করে থাকেন, তাহলে বুঝে নিতে হবে হ্যাকাররা আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে।
মোবাইলে কোড পাঠানোর পর হ্যাকাররা আপনার হোয়াটসঅ্যাপে সেই কোড দেয়ার জন্য মেসেজ প্রদান করবে। যদি এ রকম কিছু হয়, তবে বুঝে নিতে হবে সেই অ্যাকাউন্টিও হ্যাক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে এক ভুক্তভোগী বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাত্কারে জানান, তিনি তার খুবই কাছের একজন বন্ধুর কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ পান। যেখানে সেই বন্ধু তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে এবং তার নিজের ফোনের পরিবর্তে ভুক্তভোগীর ফোনে ভুলে অ্যাকসেস কোড পাঠিয়ে দিয়েছে। এরপর সে ওই কোড অথবা কোডের স্ক্রিনশট তাকে পাঠানোর অনুরোধ জানায়। কাছের বন্ধুর বিপদে সাহায্য করতে ওই ভুক্তভোগী সেই কোড পাঠিয়ে দেন। এর প্রায় একদিন পর তিনি বুঝতে পারেন যে এ মেসেজ তার বন্ধুর ছিল না।
কোনো ব্যবহারকারীর হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট দখলে নেয়ার পর হ্যাকাররা ব্যবহারকারীর বেশ ধরে তার পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছে মেসেজ পাঠাতে পারে। এছাড়া আপনি আর্থিকভাবে সমস্যায় আছেন এমন কথা বলে তাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে। সেই সঙ্গে আপনার অ্যাকাউন্টে অন্য যারা রয়েছেন তাদেরও একই ফাঁদে ফেলার চেষ্টা চালাতে পারে। আপনার অ্যাকাউন্ট দখলের মাধ্যমে হ্যাকাররা আপনার ব্যবহূত গ্রুপগুলোতেও ছদ্মবেশ ধারণ করে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল তথ্য হাতিয়ে নিতে পারবে।
এক বিবৃতিতে হোয়াটসঅ্যাপ বলে, ব্যবহারকারীদের আদান-প্রদানকৃত বার্তা, ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও নিরাপত্তা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত আমরা ফোন নাম্বারের সাহায্যে যেভাবে ফোন কল বা মেসেজ প্রদান করতে পারি, সেভাবে হোয়াটসঅ্যাপে যাদের কাছে আপনার ফোন নাম্বার আছে তারা যোগাযোগ করতে পারবেন।
নিরাপত্তার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের কিছু নির্দেশনা প্রদান করেছে। প্রথমত, পরিবার-পরিজন কারো কাছেই অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড কিংবা সিকিউরিটি কোড দেয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত, অ্যাকাউন্টের সুরক্ষার জন্য টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করতে হবে এবং তৃতীয়ত, সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। যদি কেউ মেসেজের মাধ্যমে অর্থ দাবি করে, তবে সঙ্গে সঙ্গে সে বিষয়ে পরিবার-পরিজন ও আইন-শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে।