অভিভাবকরা অভিযোগ করেন এখনকার শিশুরা স্মার্টফোন কিংবা টেলিভিশন না দেখে খেতেই চায় না। ডিজিটাল ডিভাইসের নেশায় বুঁদ! কার্টুন ছাড়া এক গ্রাস খাবার মুখে তুলতে চায় না! এই যুগের সম্ভবত শতভাগ মা-বাবা এই সমস্যায় পড়েছেন। জেনে নিন কী কী নিয়মে সামান্য বদল আনলেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। হতে পারেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী কোনও সন্তানের বাবা-মা।
ছোটরা নরম মাটির তালের মতো। যেমন আকার দেবেন সে ঠিক সেভাবে বড় হয়ে উঠবে। তাই ছোট থেকে আপনি যেমন দেখাবেন সে তেমনই শিখবে। আপনার পরিবারের ছোট্ট সদস্যের কাছে টিভি কিংবা মোবাইল খুবই আকর্ষণীয় বস্তু। তাই ছোটবেলায় সেগুলোর নেশায় শিশুকে বুঁদ করে রেখে কাজ সেরে নেওয়ার চেষ্টা করেন বহু মা।
কিন্তু আজকের সুবিধার কথা ভেবে আগামীর জন্য বিপদ ডেকে আনছেন না তো? হয়তো আপনি কাজ সেরে নেওয়ার ফুরসত পাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত টিভি বা মোবাইলের নেশা দূর করতে গিয়ে ভবিষ্যতে আপনার ঘাম ছুটতে পারে। তাই শুরু থেকেই স্থির করুন দিনের মধ্যে ঠিক কতটা সময় তাকে টিভি দেখতে দেবেন।
স্বাভাবিকভাবেই দিনে অন্ততপক্ষে ৩-৪ ঘণ্টা হাতে স্মার্টফোন পাচ্ছে শিশুরা। তাই আলাদাভাবে অন্য সময় আর তাদের হাতে স্মার্টফোন দেবেন না। পরিবর্তে তাদের সঙ্গে গল্প করুন। খেলাধুলা করুন। আপনার কাজে তাকেও সঙ্গী করুন।
এ তো নয় গেল দিনের অন্যান্য সময়ের কথা। এবার খাবার সময়ের কথায় আসা যাক। অনেক বাচ্চাই আছে যারা টিভি বা মোবাইল ছাড়া খেতেই চায় না। তাদের মা-বাবার দায়িত্ব কিন্তু অনেক বেশি। কারণ, বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় টিভি কিংবা মোবাইলের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা শিশুরা পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খায় না। কখনও তারা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার খেয়ে নেয়। আবার কোনও কোনও সময় কম খাবার খায়। সন্তানকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে তুলতে চাইলে খাবার সময় টিভি, মোবাইল না দেয়াই উত্তম।
বলা মাত্রই সমস্ত কুঅভ্যাস ছেড়ে সন্তান আপনার কথামতো চলতে শুরু করল, তা তো হয় না। কারণ, শিশুরা নিজের ভালো বুঝতে পারে না বলে বাবা-মায়ের উপর এতটা নির্ভরশীল। তাই চলুন জেনে নিই ধীরে ধীরে কীভাবে শিশুর মোবাইল, টিভির নেশা দূর করবেন।
সবার প্রথমে আপনাকে অনেক বেশি ধৈর্যশীল হয়ে উঠতে হবে। একদিনেই সন্তান টিভি, মোবাইলের প্রতি অনাগ্রহী হয়ে উঠবে না। তাকে অভ্যাস বদলের জন্য সময় দিতেই হবে।
বাচ্চাকে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার দিন। খাবার শেষ করার সময়ও বেঁধে দিন।
আপনি নিজেও একই টেবিলে সন্তানের পাশে বসে খাবার খান। ঘড়ি বাঁধা সময়ে খাবার শেষ করে হাত ধুয়ে ফেলুন। তাহলে সন্তানের সময় মেপে খাবার খাওয়ার তাগিদ জন্মাবে।
খাবার সময় বাচ্চাকে টিভি বা মোবাইলে যেমন ব্যস্ত থাকতে দেবেন না, ঠিক তেমনি আপনি নিজে কিংবা পরিবারের কেউ সে কাজ করবেন না। কারণ, বাড়িই শিশুর জীবনের প্রথম এবং অন্যতম প্রধান শিক্ষালয়।
বর্তমানে অনেক বেশি ব্যস্ত আমরা। অফিস, বাড়ির কাজকর্মের ভারসাম্য রক্ষা করাই যেন কঠিন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। একই বাড়িতে থাকলেও পরিজনদের সঙ্গে সময় কাটানো হয়ে ওঠে না অনেকেরই। সন্তানের কথা ভেবে ব্যস্ততাকে কিছুটা দূরে সরান। দুপুরে না হোক রাতে একসঙ্গে পরিবারের সকলে খেতে বসুন। বাড়ির খুদে সদস্যটিকেও সেই সময়েই খাবার দিন। দেখবেন সকলের সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার সময় মোবাইল, টিভির কথা ভুলে গিয়েছে সে। তাতে সঠিকভাবে খাওয়ার অভ্যাস তৈরির পাশাপাশি পরিজনদের সঙ্গে সম্পর্কের বাঁধনও অনেক বেশি শক্তপোক্ত হবে।