সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে (ভাইরাল) পড়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত ছবিটি শেয়ার হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ বার। যাঁরা ছবিটি শেয়ার করছেন, তাঁদের মধ্যে অনেক তারকা আছেন।
ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই-জেনারেটেড) দিয়ে তৈরি। ছবিতে অসংখ্য তাঁবু দিয়ে গড়ে তোলা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়শিবিরের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই ছবিতে একটি স্লোগান লেখা আছে: ‘অল আইস অন রাফা’। অর্থাৎ সবার চোখ রাফার দিকে।
ফিলিস্তিনের গাজার রাফায় একটি শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ ছবিটি ইনস্টাগ্রামে ব্যাপকভাবে শেয়ার হচ্ছে।
গত রোববার দিবাগত রাতে রাফায় নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে ঘোষিত একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থীশিবিরে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী।
তাল আস-সুলতান এলাকায় তাঁবু দিয়ে গড়ে তোলা এই শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হন। আহত প্রায় ২৫০ জন। হামলার পর শরণার্থীশিবিরের তাঁবুগুলোয় আগুন ধরে যায়। এতে অনেকে আগুনে পুড়ে মারা যান। এ হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র তোপের মুখে পড়ে ইসরায়েল।
‘সবার চোখ রাফার দিকে’ ছবিটি ব্যাপকভাবে শেয়ারের প্রবণতাকে ইন্টারনেট অ্যাকটিভিজম হিসেবে দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেনবার্গ স্কুল ফর কমিউনিকেশনের সহযোগী অধ্যাপক সারাহ জ্যাকসন। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, ইন্টারনেট অ্যাকটিভিজমের সূত্রপাত গত শতকের নব্বইয়ের দশকে।
সারাহ জ্যাকসন টাইমকে বলেন, এখন ইনস্টাগ্রাম সামাজিক পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। অ্যাকটিভিস্টদের কাছে এই প্ল্যাটফর্মটির আবেদন রয়েছে। এর মূলে আছে ইনস্টাগ্রামের ভিজ্যুয়াল দিক। এখানে ব্যবহারকারীরা যেমন ভিডিও শেয়ার করতে পারেন, আবার স্থিরচিত্রও দিতে পারেন।
জ্যাকসন আরও বলেন, মাঠপর্যায়ে বা ঘটনাস্থলে যা ঘটছে, তা শেয়ার করার জন্য অনেক ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করছেন। এই সাংবাদিকদের অনেককেই সরাসরি নিশানা করা হয়েছে, সেন্সর করা হয়েছে। কিন্তু ইনস্টাগ্রাম এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যা তাঁদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
জ্যাকসন উল্লেখ করেন, সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মের অ্যালগরিদম নির্দেশিকার কারণে অনেক অ্যাকটিভিস্ট গাজার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করার ক্ষেত্রে জটিলতার মুখে পড়েন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এ ধরনের বিষয়বস্তু (গ্রাফিক কনটেন্ট) ঢেকে দেয় বা মুছে দেয়। কেন লোকজন কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এ ধরনের বিষয় শেয়ার করে, তা বোঝার পর ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের গ্রাফিক সহিংসতা সম্পর্কে সতর্কতার কথা ছবির ক্যাপশনে দিতে উৎসাহিত করে।
ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ছবিটি প্রথম দেন ‘shahv 4012’ নামের এক ব্যবহারকারী। তিনি ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লিখেছেন, যা-ই করুন না কেন, রাফা ইস্যুকে অবহেলা করবেন না। এটি (ছবি) ছড়িয়ে দিন, যাতে তারা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে কাঁপতে থাকে।
ছবিটিতে ব্যবহার করা স্লোগানটি সম্ভবত গাজায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধি রিচার্ড পিপারকর্নের একটি বক্তব্য থেকে নেওয়া হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, রাফায় যা ঘটছে, সব চোখ সেদিকে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইনস্টাগ্রাম ছাড়া এক্সসহ (সাবেক টুইটার) অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্লোগানটি উল্লেখযোগ্যভাবে সাড়া ফেলেছে। ছবিটি হাজারো ফিলিস্তিনির প্রতীক, যাঁরা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের মুখে উপত্যকাটির রাফায় অসংখ্য তাঁবু দিয়ে তৈরি শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।