সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজে তিলে তিলে গড়ে তোলা স্টার্টআপ কোম্পানি ‘ফারবোট রোবটিক্স’ ধ্বংসের গল্প লিখেছেন তরুন বাংলাদেশের রোবট গবেষণার এক উজ্জ্বল মুখ এ এস ফারদিন আহমেদ । দীর্ঘ ১২ বছরের রোবট গবেষণা অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করছেন আন্তর্জাতিক মানের রোবট; যেগুলা গুনে মানে উন্নত দেশের রোবটের মতোই আধুনিক, কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী। গত ৩ বছর ধরে বিকাশ লিমিটেড একটি রোবট প্রজেক্টের জন্য নির্মম ভাবে পরিশ্রম করে ১ টি টাকাও দেওয়া হয়নি ফারদিন আহমেদকে। শুক্রবার বিকাল ৫টার একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বিকাশ লিমিটেডের টাকা না দেওয়ার বিষয় ফেসবুকে লিখেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো: একটি স্টার্টআপ কোম্পানি ধ্বংসের গল্প? গত ৩ বছর ধরে বিকাশ লিমিটেড একটি রোবট প্রজেক্টের জন্য আমাকে নির্মম ভাবে পরিশ্রম করিয়ে শেষ পর্যন্ত ১ টি টাকাও দেয় নি। বিকাশ লিমিটেডকে বিশ্বাস করে দীর্ঘ সময়ের এই বিশাল প্রজেক্টি করতে গিয়ে এবং প্রজেক্টির খরচ চালাতে গিয়ে ধ্বংস হয়েছে আমার তিল তিল করে গড়ে তোলা ‘ফারবোট রোবটিক্স’। বিকাশ লিমিটেডের এই কাজ টা করতে গিয়েই ভয়ংকারভাবে ডেংগুতে আক্রান্ত হয়ে যখন হাটা চলার মতও অবস্থা ছিলো না, তখনও শরীরের ওপরে পিসি রেখে রোবটটির সফটওয়্যারের কাজ চালিয়ে গেছি। নিজে একটি ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করে এই প্রজেক্টের ব্যায় বহন করেছি। আমি কখনই ভাবি নি এত বড় একটা কোম্পানি আমার সাথে এরকম করবে।
*************
২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বিকাশ লিমিটেড একটি পত্রিকায় আমার রোবটের ফিচার দেখে তাদের হেড অফিস থেকে ৩ জনের একটি টিম আমার মিরপুরের অফিসে আসে। তারা আমার কাছে থেকে একটি কাস্টমার কেয়ার রোবট নিবে বলে জানায়।
.
তখন তারা আমার রোবটটিকে তাদের হেড অফিসে নিয়ে যেতে বলে এবং সেখানে যাওয়ার পর বিকাশ লিমিটেডের সিএমও সহ আরও ১০-১২ জন অথরিটি লেভেলের ব্যাক্তিবর্গ রোবটটি দেখে। তারাও সেখানে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করে এবং সেখান থেকে রোবটটি মডিফিকেশনের কাজ দেয়।
.
প্রায় ৬ মাস পরিশ্রম করে সেই কাজ শেষ করি। রোবটটি আবার তাদেরকে দেখালে আবার নতুন কাজ দেয়। আমি ডাউন পেমেন্ট ছাড়া নতুন কাজ করতে না চাইলেও তারা বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে নতুন কাজটি করায়।. এভাবে ২য়, ৩য়, ৪র্থ এবং ৫ম বার তাদের দেয়া কাজ ১০০% করে শেষ করি।
.
প্রত্যেকটি কাজ করতে ৬ মাস, ৮ মাস, ১ বছর করে লেগে গেছে।
.
প্রত্যেক বারই তাদেরকে বিনীত ভাবে অনুরোধ করেছি ডাউন পেমেন্ট ছাড়া নতুন কোন কাজ না দিতে। কিন্তু তারা কোন বারই কোন ডাউন পেমেন্ট দেয় নি, বরং এমন একটা আচারন করেছে মনে হত এবারের কাজ টুকু শেষ হলেই দিবে।
.
আমি কাজ টা ছেড়েও দিতে পারি নি এই ভরসায় যে বিকাশ লিমিটেড আমার এত কঠোর পরিশ্রমের মুল্য অবশ্যই দিবে।
.
তাই অন্য সব ক্লায়েন্টদের কাজ রেখেও তাদের কাজ করে গেছি।
.
‘”””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””
@ডাউন পেমেন্ট ছাড়া কেন আমি তাদেরকে কাজ টা চালিয়ে গিয়েছি?
.
১. বিকাশ লিমিটেডের হেড অফিস থেকে প্রথম যেদিন আমার কাছে ৩ জনের টিম এসেছিলো আমি সেদিন শুরুতে তাদেরকে বাজেটের কথা জানতে চেয়েছিলাম। তারা বলেছিলো বিকাশের বাজেট নিয়ে কোন সমস্যা নেই।
.
২. তারা বলেছিলো তারা প্রথমে একটি রোবট নিবে এবং পরবর্তীতে তাদের সব গুলো কাস্টমার কেয়ারে একটি করে রোবট বসাবে।
.
৩.** প্রথম যখন ৬ মাস কাজ করে নতুন কাজ দেয় তখন ভেবেছিলাম ৬ টা মাস পরিশ্রম করলাম আর কিছুদিন করি, না হলে বিগত ৬ মাসের শ্রম পুরোপুরি বৃথা। এভাবেই একটা টাইম ট্রাপে পড়েছিলাম। এই ট্রাপেই মূলত ৩ বছর তারা যখন যেভাবে কাজ দিয়েছে করেছি। **
.
৪. দেশের বড় কোম্পানি গুলো প্রযুক্তি খাতে (AI, Robotics) এ বিনিয়োগ এবং আগ্রহ কম।। আমি ভেবেছিলাম বিকাশ লিমিটেডের মত একটি কোম্পানি যদি রোবটের ব্যবহার শুরু করে তাহলে তাদেরকে দেখে অনেক কোম্পানির শুরু করবে।
.
*****************
২০২৩ এর ডিসেম্বর মাসে বিকাশ লিমিটেড রোবটি নিয়ে আবার বিকাশের হেড অফিসে যেতে বলে । ৪ জনের জনের একটি টিম নিয়ে রোবোটটি সহ যাই।
.
দুপুরে দেড ঘন্টা লাঞ্চ টাইম বাদে সারা দিন আমারা রোবোটির কাছেই ছিলাম এবং রোবটটি তাদের সিএমও, সাপ্লাই চেইন এর প্রধান এবং অন্যান্য ব্যাক্তি বর্গ বোবটি দেখে। সিএমও আশ্বাস দিয়েছিলেন ১ সপ্তাহের মধ্যে আমাকে একটা বিল দিবে।
.
.
তারা আমাকে নতুন একটি বাজেট রেডি করতে বলে।
২০২৪ এর ফেব্রুয়ারী মাসে তাদের কথা অনুযায়ী বাজেট রেডি করে পরে আবার বিকাশের হেড অফিসে যাই।
.
**********
সেখানে সাপ্লাই চেইনের হেড এর বক্তব্য শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ে। ২-২.৫ নির্মমভাবে কাজ করানো পরে সে বলে আমাদের বিকাশ থেকে অ্যাডভান্স পেমেন্ট দেয়ার নিয়ম নেই
.
আমি তার কথা শুনে মনে হচ্ছিলো আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছিলো। সেখানে বিকাশ লিমিটেডের ডিজিটাল মার্কেটিং
এবং স্ট্রেটিজির ২ জন কর্মী এবং আমার দুইজন কর্মী আমাকে বিভিন্ন ভাবে বুঝাতে থাকে। তারা জানায় আমার বিলের ব্যাপারে উপর মহলে কথা হয়েছে, এবং টেনশন না করতে।
.
বিকাশ লিমিটেড শেষ বারের মত আবার কাজ দেয় এবং জানায় সাপ্লাই চেইন আবার কাজটি দেখবে।
.
২০২৫ সালে সেই কাজ টাও শেষ করলাম আরও ১ বছর খেটে। তাদেরকে কাজের আপডেট পাঠালে আর কোন রেস্পন্স করছে না এবং সব ধরে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
.
*****************************************************
কতটা পরিশ্রম করলে একটা প্রজেক্ট ফাইল ৩.৫ গিগাবাইট হতে পারে!!!
.
আমার দিন নেই, রাত নেই, ঘুম নেই, রাতের পর রাত জেগে এই প্রজেক্টির কাজ করে গিয়েছি। এই প্রজেক্ট এর জন্য নিজের শরীর আর ব্রেইনের উপর দিনে পর দিন টর্চার করেছি।
.
.
এটা ভেবে আরও বেশি করে প্রজেক্টির জন্য খেটে যেতাম যেন বিকাশ লিমিটেডকে একেবারে নিখুত একটা প্রজেক্ট দিতে যেন তারা কোয়ালিটি নিয়ে যেন ১০০% সন্তুষ্ট থাকে।
.
যে কোম্পানিটি এক বছরে ২৫ বিলিয়ন রেভিনিউ করে তারা আমাদের মত ছোট একটি স্টার্টআপকে বছরের পর বছর খাটিয়ে একটা টাকাও দিলো না।
.
শুধু এই টুকু বলতে পারি এখানে যে পরিমান কম্পলেক্স কাজ ছিলো এই কাজ টা বড় কোন কোম্পানিকে দিয়ে করাতে গেলে মিনিমাম ৫ কোটি টাকা চার্জ করতো।
.
এটি একটি গবেষণা ধর্মীপ্রজেক্ট,
সাধারণ সফটওয়্যার প্রজেক্ট নয়। মেশিন লার্নিং, ডেটা এনালইসিস, প্যারালাল কম্পিউটিং এবং রোবটিক্স এর একটা বিশাল কাজ ছিলো।
.
এত সুযোগ থাকতেও ভালো কোন দেশে পাড়ি না জমিয়ে এই দেশে পরে আছি শুধু একদিন দেশের গবেষণা এবং প্রযুক্তি খাতের একটা বড় পরিবর্তন আসবে সেটা দেখার আশায়।
.
আমার সাথে ঘটে যাওয়া এই নি র্মম ঘটনা টা আমি কখনই প্রকাশ করতে চাই নি।
.
আমার স্টার্টআপের যেভাবে ধ্বংস হয়েছে আমি চাইনা এই দেশের আর কোন স্টার্ট আপের সাথে কোন কোম্পানি এমনটা করুক।
.
এখানে যা যা তুলে ধরেছি তার মধ্যে 0% কথাতেও কোন প্রকার ভুল নেই। ৩ বছরে অসংখ্য বার তাদের সাথে প্রজেক্টির কাজের অগ্রগতি নিয়ে মিটিং হয়েছে।
.
তাদের দেয়া কাজ গুলোর ইমেইল, মিটিং সব কিছুর প্রমান তারিখ সহ এখনও আছে।
.
আমি জানি এই পোস্ট টা পড়ার পরে তারা আমাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করতে পারে! তখন আমার পাশে কাউকেই পাবো না।
করুক।
.
*
ধ্বংস স্তুপের উপর দাঁড়িয়ে আর কোন কিছু ধ্বংস হবার ভয় করি না।
*
((এখন দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া টাই আমার একমাত্র ইচ্ছা))