ফেসবুকে চলছে এখন ঝটিকা পরিচ্ছন্ন অভিযান। এতে করে দুর্বল মানের কন্টেন্ট দিয়ে তৈরি করা এড আর চোখে পড়ছে না। আমি নিজেও কিন্তু এটার একজন ভিকটিম। সম্প্রতি আমার ৩ টি এড অ্যাকাউন্ট অকার্যকর করে দেয় ফেসবুক। যে আইডি দিয়ে বিগত দু বছর ধরে বুস্ট করে আসছিলাম সেটা দিয়ে বুস্ট করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর মধ্যে আবার একটা পেজের পোস্ট বুস্ট করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আপিল করার পর ২ টা এড অ্যাকাউন্ট রি-একটিভ করে দিয়েছে। আইডি এর ওপর থেকে বুস্ট করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তবে আরেকটা এড অ্যাকাউন্ট এর রিভিউ এর রেজাল্ট এখনও পেন্ডিং আছে। করোনার কারণে এখান রিভিউ হতে বেশি সময় লাগছে। তবে আমার আইডি খুব কড়াকড়ি ভাবেই ভেরিফাই করেছে। কোড সেন্ড করে মোবাইল ফোন নম্বর এবং ইমেইল আইডি ভেরিফাই করেছে। এছাডা ছবিযুক্ত আইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করেছে।
কীভাবে পরিচ্ছন্ন অভিযান চলছে?
কীভাবে পরিচ্ছন্ন অভিযান চলছে সেটা ফেসবুক আমাদের কে পরিষ্কার করে জানাচ্ছে না। তবে আমার নিজের কাজের অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ থেকে নিচের ইস্যুগুলো চলে এসেছে।
১। এড কুপন বন্ধঃ ১লা অক্টোবর থেকে ফেসবুক ফ্রি এড কুপন প্রদান করা বন্ধ করে দিয়েছে। এই কুপন নিয়ে চলত রমরমা ব্যবসা। অনেক কম খরচে বুস্ট করা যেত বলে অনেক নিম্নমানের কন্টেন্ট দিয়ে তৈরি করা এড আমাদের ওয়ালে বার বার ঘুরে বেড়াত। এখন নিম্নমানের এড দেখা যায় না।
২। এড অ্যাকাউন্ট ফ্লাগঃ ফেসবুকের এড পলিসি মেনে না চলার কারণে ফেসবুক এখন অনেক বেশি করে এড অ্যাকাউন্ট ফ্লাগ করে দিচ্ছে।
৩। Unusual Activity: বিলিং ঠিকানা এবং অ্যাকাউন্ট ঠিকানার মধ্যে ভিন্নতা পেলেই ফেসবুক সেই এড অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিচ্ছে। তবে ভেরিফাই করার পর তা একটিভ করে দেয়।
৪। আইডি দিয়ে বুস্টে বাধাঃ ফেসবুক আইডি তে সন্দেহভাজন কিছু পেলেই সেই আইডি দিয়ে বুস্ট করতে দিচ্ছে না। তবে ভেরিফাই করার পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তবে এখন ফেক আইডি দিয়ে বুস্ট করা অনেক রিস্ক।
৫। পেজের ওপর নিষেধাজ্ঞাঃ Unusual Activity এর কারণে যদি এড অ্যাকাউন্ট ফ্লাগ হয় কিংবা ফেসবুকের ষ্ট্যাণ্ডার্ড মেনে চলা না হয় সেই ক্ষেত্রে কিছু কিছু পেজে আর বুস্ট করতে দিচ্ছে না।
৬। ফেক আইডি বাতিলঃ যারা ফেক আইডি ব্যবহার করছেন অথবা একই তথ্য দিয়ে একাধিক আইডি খুলেছেন তাদের আইডি বাতিল করে দেয়া হচ্ছে।
৭। এড রিজেকশনঃ আগের চাইতে এড রিজেকশনের হার এখন অনেক বেশি। দুর্বল মানের কন্টেন্ট এবং ফেসবুকের এড পলিসি মেনে না চলার কারণে এড বেশি রিজেক্ট হচ্ছে।
৮। ভিডিও ভিউ কমঃ এখন লাইভ ভিডিও তে রিচ এবং ভিউ অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে। এটার কারণ আমার কাছে যেটা মনে হয় স্পামিং ইস্যু। অনেক পেজে পয়সা খরচ করে লাইভ ভিডিও অনেক বেশি পরিমাণে শেয়ার করা হয়, লাইক দেয়া হয়। ফেসবুকের সিস্টেম এখন এসব বুঝতে পারে এবং এটাকে স্পমিং হিসেবে দেখে। যার ফলে ঐ সব পেজের লাইভ ভিডিও ভিউ এবং রিচ এখন দিন দিন কমে যাচ্ছে।
৯। রিচ কমঃ কন্টেন্ট যদি ভাল না হয়, পেজ অথরিটি যদি দুর্বল হয় এবং এডের অডিয়ান্স সেটিংস যদি সঠিকভাবে না হয় তা হলে সেসব পেজের এড বুস্ট করে ভাল রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে না।
১০। এড চালানের খরচ বৃদ্ধিঃ এখন এড থেকে ভাল রেজাল্ট পেতে গেলে ভালমানের কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এডের বাজেট বাড়াতে হবে। তাই এডের খরচ এখন বেড়ে গেছে।
১১। পেমেন্ট মেথডঃ বাংলাদেশ থেকে ইস্যু করা অনেক কার্ড ফেসবুক এড করতে চায় না।
১২। বিলিং থেরাসহল্ডঃ একটা সময় শুরুতেই বিলিং লিমিট ছিল ২৫ ডলার। অনেকেই ফেসবুকের বিলের টাকা পরিশোধ করে না। তাই এটার লিমিট কমিয়ে ২ ডলার করেছে। আগে এই লিমিট টা জ্যামিতিক হারে বাড়লেও এখন সহজে বাড়ে না।
ফেসবুকের পরিচ্ছন্ন অভিযানের ফলে আমরা ওয়ালে এখন ভালমানের কন্টেন্ট দেখতে পারছি। এটার ফলে যে সব পেজ ভালমানের কন্টেন্ট দিয়ে বুস্ট করবে, ফেসবুকের এড পলিসি মেনে চলবে তাদের এড ভাল পারফর্ম করবে। যারা প্রফেশনাল মানের বুস্ট সার্ভিস প্রদান করবে তারাই মার্কেটে টিকে থাকবে।