আপনার ওয়েবসাইটের লোডিং টাইম অনেকাংশে নির্ভর করে হোস্টিয়ের উপরে, অর্থাৎ, আপনার ওয়েবসাইটটি ইউজারের ডিভাইসে কতো দ্রুত ওপেন হবে সেটা অনেকাংশে নির্ভর করে আপনার হোস্টিংয়ের উপর। তাই হোস্টিং কেনার কিছু বিষয় অবশ্যই আপনাকে বিবেচনায় রাখতে হবে।
আশা করি নিচের আলোচনাটি আপনাকে হেস্টিং সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা দিতে সক্ষম হবে, যার ফলে আপনি সিন্ধান্ত নিতে পারবেন কি ধরনের হোস্টিং প্রয়োজন এবং কতটুকু প্রয়োজন। আসুন জেনে নেওয়া যাক হোস্টিং সম্পর্কে বিস্তারিত।
হোস্টিং কত প্রকার?
ফ্রি হোস্টিং (Free Hosting)
শেয়ারড হোস্টিং (Shared Hosting)
ম্যানেজড হোস্টিং বা ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং (WordPress Hosting)
ভিপিএস হোস্টিং (Vertual Private Server)
ক্লাউড হোস্টিং
ফ্রি হোস্টিং (Free Hosting) কি?
কিছু হোস্টিং কোম্পানি আছে যারা ফ্রি তে আপনাকে সিমিত আকারে হোস্টিং ব্যবহার করতে দিবে। বিশেষ করে ব্লগ সাইটের জন্য এগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। এই হোস্টিংগুলোতে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যার ফলে ইকমার্স ওয়েবসাইট বা প্রফেশনাল ওয়েবাসাটের জন্য ব্যবাহর করতে পারবেন না।
প্রথম কারণ এই হোস্টিংগুলোর জন্য Bandwidth/Monthly Traffic খুব কম বরাদ্দ থাকে যার ফলে যেকোনো সময় সাইট ডাউন হতে পারে বা আপনার রিসোর্সসের ক্ষতি হতে পারে এবং ২য় যে কারণ তা হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাজনিত। ফ্রি হোস্টিং হওয়াতে আপনার রিসোর্সের জন্য কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা পাবেন না।
শেয়ারড হোস্টিং (Shared Hosting) কি?
বহুল ব্যবহৃত, সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সাশ্রয়ী একটি হোস্টিং। এখানে মূলত একটি কম্পিউটারের সিপিইউ, র্যাম, ডিক্স স্পেস, ব্যান্ডউইথ কয়েকটি ওয়েবসাইটকে ভাগ করে দেওয়া হয়ে থাকে, যার কারণে এটাকে বলা হয়ে থাকে শেয়ারড হোস্টিং।
সকলে ভাগাভাগি করে ব্যবাহরের জন্য এই হোস্টিংয়ে খরচ তুলনামুলকভাবে কম পড়বে। আর যখন আপনার একটি ওয়েবসাইটের জন্য একা একটি কম্পিউটার ব্যবহার করবেন তখন আপনাকে সমস্ত ড্রাইভটির জন্যই দাম দিতে হবে। আপনার ওয়েবসাটের রিসোর্স যদি একেবারেই কম হয়ে থাকে তবে শেয়ারড হোস্টিং ব্যবহার করতে পারেন। আর যেখানে সিকিউরিটি ইস্যু রয়েছে বা রিসোর্সের পরিমান বেশি সেখানে অবশ্যই আপনাকে ভিপিএস বা ডেডিকেটেড সার্ভারের কথা চিন্তা করতে হবে।
শেয়ারড হোস্টিংযের সবাথেকে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি অনেক কম দামে আপনার রিসোর্স/ওয়েবসাইট হোস্টি করতে পারবেন এবং সেটা যদি খুব বড় না হয় তবে মোটামুটি ভালোই চলেবে। তো আপনি যদি স্টাট্রার হন তবে এই হোস্টিং আপনার জন্য উপযুক্ত।
ম্যানেজড হোস্টিং বা ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং (WordPress Hosting) কি?
ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং শুধুমাত্র ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসেইটের জন্যই অপটিমাইজ করা। আপনার ওয়ার্ডপ্রেস কনটেন্ট ম্যনেজমেন্ট সিস্টেমে (CMS) তৈরি করা ওয়েবসাইটটির জন্য যদি এখানে হোস্টিং নিতে চান তবে আগে থেকে সার্ভিস এবং ওয়েবসাইটের ভিজিটর নির্ধারণ করে দিতে হবে।
শেয়ারড হোস্টিং এবং ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং এর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। আপনার শেয়ারড হোস্টিং এর মধ্যে অন্য কোন শেয়ারহোল্ডারের ভিজিটর যদি হঠাৎ বেড়ে যায় তাহলে আপনার ওয়েবসাইট স্লো হয়ে যেতে পারে। তবে ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং বা ম্যানেজড হোস্টিং সার্ভার আপনি কখনো স্লো পাবেন না।
তবে ম্যানেজড হোস্টিংয়ে আপনি ব্যবহারের জন্য যে পরিমাণ রিসোর্স নিয়েছেন, আপনাকে সেই পরিমাণ রিসোর্সই ব্যবহার করতে হবে। এই হোস্টিং এর সুবিধা হচ্ছে এটা আপনাকে নিজ থেকে মেইনটেন করতে হবে না। যাবতীয় আপডেট, নিয়মিত ব্যাকআপ সবকিছুই হোস্টিং কম্পানি আপনাকে করে দেবে। এছাড়া সবসময়ের জন্য কাষ্টমার সাপোর্টের ব্যবস্থাতো আছেই।
ডেডিকেটেড হোস্টিং (Dedicated Hosting) কি?
আপনার ওয়েবসাইট যদি অনেক বড় হয় এবং এটার জন্য বেশি সিকিউরিটর প্রয়োজন হয় তবে ডেডিকেটেড হোস্টিং আপনার জন্য পারফেক্ট। এখানে শুধুমাত্র আপনার ওয়েবসাইটের জন্যই আলাদা একটি কম্পিউটার বরাদ্দ থাকবে।
খানে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় সবধরনের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়ারও ব্যবহারের জন্য পাবেন। পাবেন সার্বক্ষনিক কাষ্টমার সার্ভিস, নিয়মিত ব্যাকআপসহ আরো অনেক ধরনের ফিচার যা একটি প্রফেশনার ওয়েবসাইটের জন্য দরাকার হয়।
যেহেতু এখানে আপনার রিসোর্সের জন্য একটি আলাদা কম্পিউটার বরাদ্দ থাকবে সেহেতু খরচটাও অনেক বেশি পড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে স্পিড ও সিকিউরিটির দিকে গুরুত্ব দিলে অপনি অবশ্যই ডেডিকেটেড হোস্টিং বিবেচনায় রাখবেন।
ভিপিএস বা VPS (Vertual Private Server) হোস্টিং কি?
ভিপিএস (virtual private server) সার্ভার হলো শেয়ারড ও ডেডিকেটেড সার্ভারের মাঝামাঝি একটি হোস্টিং সেবা। সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি একটি ডেডিকেটেড সার্ভারকে একাধিক ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়। যেগুলোর এক একটিকে বলা হয় নোড বা স্লাইস (node)। এই নোড বা স্লাইসগুলো প্রতিটি আলাদা আলাদা সার্ভার হিসাবে কাজ করে।
এই নোডগুলোতে ডেডিকেটেড সার্ভারের মতই আলাদা অপারেটিং সিস্টেমে দ্বারা পরিচালিত হয়। ক্লায়েন্ট ডেডিকেটেট সার্ভারের মতোই এখানে কন্টোল পেয়ে থাকেন ফলে নিজের মতো করে সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন।
ভিপিএস সার্ভারে জন্য একটি ফিজিক্যাল হার্ডওয়াকেই ভার্চুয়ালি ভাগ করে ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাই খরচের দিক থেকে শেয়ারড হোস্টিংয়ের থেকে বেশি। আর পারফরমেন্স যদি তুলনা করা হয় তবে কম বা মাঝারী মানের রিসোর্সের জন্য ভিপিএস অবশ্যই ভালো তবে বেশি রিসোর্সের জন্য আপনাকে অবশ্যই ডেডিকেটেড সার্ভারের জন্য বাজেট রাখতে হবে।
ক্লাউড হোস্টিং কি?
ক্লাউড হোস্টিং প্রচলিত শেয়ারড, ডেডিকেটেড বা ভিপিএস সার্ভার থেকে ভিন্ন। কারণ ক্লাউড হোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে একটি সার্ভার পিসির উপর নির্ভর না করে ভিন্ন ভিন্ন কম্পিউটারের সমন্বয়ে একটি ক্লাস্টার সার্ভার তৈরি করা হয়, যেগুলো বিভিন্ন জায়গাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।
ওয়েবসাইটের ডাটা/রিসোর্চগুলো ভিন্ন ভিন্ন ফিজিক্যাল সার্ভারে বা ক্লাস্টার কম্পিউটারে রাখার ফলে যদি কোন একটি সার্ভার অকার্যকর হয়ে পড়ে বা ডাউন হয়ে যায় তবে ক্লাস্টারের অন্য একটি সার্ভার থেকে ওয়েবসাইটের ডেটা বা রিসোর্স ইউজার ডিভাইসে লোড হতে পারে।
ক্লাউড হোস্টিংয়ের সবথেকে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি খুবই ফাস্ট, কারন সবথেকে কাছাকাছি অবস্থান করা সার্ভার থাকে ইউজারের ডিভাইসে রিসোর্সগুলো লোড হয়। এবং কোন অবস্থাতেই সার্ভার ডাউন হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। তাই বড় বড় প্রযুিক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাউড হোস্টিংয়ের উপরে ভরসা রাখছেন।
হোস্টিং পেতে কোথায় যোগাযোগ করবেন
বর্তমানে আপনার চহিদামত সাশ্রয়ী দামে হোস্টিং পেতে বেশ কিছু কোম্পানি আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এবং জনপ্রিয় যেগুলো আছে সেগুলোঃ
Namecheap
BlueHost
Hostgator
Godaddy
Hostinger
উপরে উল্লেখিত কোম্পানিগুলো ছাড়াও আমাদের দেশি কিছু হোস্টিং কোম্পানিও গড়ে উঠেছে যেখান থেকে আপনি কম দামে হোস্টিং নিতে পারবেন। প্রত্যেকটি হোস্টিং কোম্পানিরই কিছু আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। তাছাড়া আপনার চহিদার উপরেও কিছুটা নির্ভর করবে যে, কোন কোম্পানি হোস্টিং আপনার জন্য ভাল হবে।
হোস্টিং নিতে যেসকল বিষয়গুলি বিবেচনা করা জরুরীঃ
আপনার প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করেই আপনাকে হোস্টিং বাছাই করতে হবে। হোস্টিং বাছাই করতে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা প্রয়োজন তা নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
ওয়েব হোস্টিংয়ের জন্য বাজেট ঠিক করুন
প্রথমেই বছরে হোস্টিংযের জন্য কত খরচ করবেন তার একটি বাজেট ঠিক করুন। বাজারে অনেক হেস্টিং প্রভাইডার রয়েছে যারা বিভিন্ন প্যাকেজের মাধ্যমে বিভিন্ন দামে হোস্টিং প্রভাইড করে। তবে কম দামে ভাল হোস্টিং পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই একটু ভাল করে খুজে দেখতে হবে। তবে ভাল হোস্টিং নিতে হলে আপনার বাজেটও হতে হবে বাস্তব সম্মত।
ওয়েব হোস্টিং করতে কতটুকু স্পেস প্রয়োজন ঠিক করুন
কতটুকু স্পেস প্রয়োজন হবে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য বা আপনার অ্যাপস রাখার জন্য তা হিসাব করে নিন। যদি মাসিক পেইমেন্টে নিতে চান তবে সেইভাবে হিসাব করুন, আর যদি প্রতি বছর বছর নবায়ন করতে চান তবে এক বছরের জন্য হিসাব করুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ১০০ থেকে ২০০ এমবি হলে প্রথম ১ বছর চলে যাবে কিন্তু সেখানে হোস্টিং কিনলেন ১ বছরের জন্য ২ জিবি। ৫১২ কেবি বা ১ জিবি হলেই কাজ চলে যাবে সেখানে বাড়তি খরচ করে চলেছেন বছরের পর বছর। তাই পরামর্শ থাকবে অযথা বাড়তি স্পেস কিনে অতিরিক্ত টাকা খরচ না করে ছোট প্লান থেকে শুরু করুন যা প্রয়োজনে বাড়িয়ে নেবেন।
হোস্টিয়ের কি পরিমান ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন হবে তা ঠিক করে নিন
প্রতি সেকেন্ডে বা একক সময়ের মধ্যে নির্ধারিত পরিমান ডাটা (Data) স্থানান্তরের হারকে ব্যান্ডউইথ (Bandwidth) বালা হয়। BPS বা বিট পার সেকেন্ড হিসাবে এই পরিমাপকে উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডের মধ্যে কত বিট ডাটা স্থানান্তরিত হচ্ছে তার পরিমাপের একক হলো ব্যান্ডউইথ।
ওয়েব হোস্টিংয়ের ক্ষেত্রেও ব্যান্ডউইথ বিষয়টি অনেকটা একই রকম। হোস্টিং সার্ভার থেকে ইউজারের কম্পিউটারে প্রতি সেকেন্ডে বা প্রতি একক সময়ের মধ্যে কতটুকু পরিমান ডাটা ট্রান্সফার হতে পারবে তারই একক।
যদি আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর সংখ্যা প্রতিদিন অনেক বেশি হয়ে থাকে তবে সাধারণ ভাবেই আপনার ব্যান্ডউইথের পরিমান বেশি লাগবে। তাই হোস্টিং প্রোভাইডাররের সাথে কথা বলে আপনার ওয়েব সাইটের ভিজিটর অনুযায়ী হোস্টিং প্যাকেজে কতটুকু নেওয়া প্রয়োজন তা ঠিক করে নিন।
হোস্টিং ব্যান্ডউইথ কিভাবে হিসাব করবেন
ধরুন ৫ টি ওয়েবপেজ রয়েছে আপনার ওয়েবসাইটে, এবং প্রতিটি পেজের সাইজ ১০০ KB (কিলোবাইট)। যদি প্রতিদিন ৫০০ জন ভিজিটর গড়ে ৫টি করে পেজ ভিজিট করে তাহলে মোট ব্যান্ডউইথ দরকার হবে ২,৫০,০০০ KB (কিলোবাইট) বা ২৪৪.১৪ MB (মেগাবাইট)। এছাড়া আপনার ওয়েবসাইটে যদি প্রতিনিয়ত কন্টেন্ট আপডেট করতে থাকেন অথবা প্রতিদিন ভিজিটর সংখ্যা বাড়তে থাকে তবে শুরুতেই এসটিমেট করে ব্যান্ডউইট বাড়িয়ে কিনতে হবে।