নিঃসন্দেহে স্মার্টফোন এখন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। দিনের একটা বড় সময় আমরা ব্যয় করি যোগাযোগে অথবা কেবলই স্মার্টফোনের স্ক্রিন স্ক্রল করতে করতে।বহুল এই ব্যবহার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মার্টফোনকে করে দেয় দুর্বল। দু’দিন আগে অথবা পরে আমাদের স্মার্টফোনে একটু ল্যাগিংয়ের দেখা দিয়েই থাকে। আর তখনই আমাদের মাথায় আসে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী নতুন স্মার্টফোন কেনার কথা। তবে সাধের এই বস্তুটি কিন্তু মোটেই সস্তা নয়। পাশাপাশি এটি ই-বর্জ্যের অন্যতম বড় উৎস। এসব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিছু পরামর্শ, যেগুলো স্মার্টফোনের আয়ু বাড়িয়ে আপনার খরচ কমাতে সহায়ক।
নতুনত্বের শুরু হোক বাইরে থেকে
কথায় আছে- আগে দর্শনধারী, পরে গুণ বিচারী। তাই স্মার্টফোনের পুরনো চেহারা পাল্টে ফেলুন। একটি স্কিন জুড়ে দিন ব্যাক কভারে। তার ওপরে বসান ট্রান্সপারেন্ট ব্যাক কভার। ব্যস, অল্প টাকায়ই আপনার ফোনটিতে এসে যাবে নতুনত্ব।মার্কেট এবং ধরনভেদে স্কিনের দাম ১০০-৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। দেশের বাজারে প্রচলিত প্রায় সব মডেলের জন্যই স্কিন পেপার পেয়ে যাবেন হাতের নাগালেই। আজকাল নির্দিষ্ট মডেলের জন্য না বানিয়ে কোম্পানিগুলো একটি সাধারণ মাপে স্কিন পেপার প্রস্তুত করে। দোকানে সেগুলো সাইজ অনুযায়ী মেশিনে কেটে বসিয়ে দেওয়া হয় আপনার স্মার্টফোনে।
ব্যাটারির কী খবর?
যত্ন নিয়ে চালালে একটি স্মার্টফোনের আয়ু কম-বেশি পাঁচ বছর। এক্ষেত্রে প্রথম খেয়াল করতে হবে ব্যাটারির দিকে। কারণ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির একটি নির্দিষ্ট চার্জিং সাইকেল আছে। প্রতিবার সম্পূর্ণ চার্জ এবং ডিসচার্জের প্রক্রিয়াকে বলা হয় চার্জিং সাইকেল।
প্রতিদিন একবার ঠিকভাবে চার্জ করলে স্মার্টফোনের ব্যাটারি অন্তত দুই বছরের জন্য ভালো থাকে। তবে বাইরের বিভিন্ন প্রভাবকের কারণে ব্যাটারির আয়ু কমতে পারে। অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা, দুর্ঘটনা, পড়ে গিয়ে ক্ষতি হওয়া ইত্যাদি কারণে ব্যাটারির আয়ু কমতে পারে।
ব্যাটারিজনিত কোনো সমস্যা দেখা দিলে বিশ্বস্ত রিপেয়ারিং সেন্টারে নিয়ে যান। সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হলো- ব্যাটারি বদলে ফেলা।ব্যাটারির দাম নির্দিষ্ট করে বলা একটু কঠিন। দুই হাজারেও পেতে পারেন আবার অ্যাপলের ফোন হলে আট হাজার বা তার বেশিও খরচ হতে পারে।
আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য সুপরামর্শ হলো, ফোনটিকে নিকটস্থ অ্যাপল-স্বীকৃত রিপেয়ার সেন্টারে নিয়ে যান। অন্যথায় ব্যাটারি পাল্টাবেন ঠিকই কিন্তু বিরক্তিকর সমস্যাগুলো আপনার পিছু ছাড়বে না।
লাঞ্চারটা ম্যাড়মেড়ে
অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা লাঞ্চার বদলে ফোনকে দিতে পারেন নতুন রূপ। গুগল প্লে স্টোরে শত শত সুন্দর লাঞ্চার পেয়ে যাবেন একদম বিনামূল্যে। অনেক দিন ধরে বহুল জনপ্রিয় নোভা লাঞ্চার থেকে আমি সম্প্রতি রেশিও নামের আরেকটি লাঞ্চার ইন্সটল করি। নতুন এই অভিজ্ঞতা ছিল সত্যিই চমৎকার। অপেক্ষাকৃত হালকা এই লাঞ্চার আমার ফোনে প্রায় অর্ধেক র্যাম, প্রসেসর, চার্জ খরচ করছে। আইফোন ব্যবহারকারীরা এক্ষেত্রে ইচ্ছেমতো কাস্টমাইজ করে নিতে পারেন আপনার হোম স্ক্রিনকে। অ্যাপ লোগোর পরিবর্তে উইজেট ব্যবহার করতে পারেন। অপারেটিং সিস্টেম যা-ই হোক না কেন, স্মার্টফোনের লুক বদলে ফেলার অপশন আপনারই হাতে।
আপডেট
যে মাপেরই হোক। অ্যাপ অথবা পুরো অপারেটিং সিস্টেম আপডেট দিতে ভুলবেন না। বাগ আর সিকিউরিটি ইস্যু দূর করার পাশাপাশি আপডেট অ্যাপ কিংবা ওএসকে আরও সুন্দরভাবে চলতে সহায়তা করে। বড় আপডেট যেমন- আইওএস ১৫ থেকে ১৬ কিংবা অ্যান্ড্রয়েড ১৩ থেকে ১৪-তে আপডেটের সময় কয়েকদিন অপেক্ষা করা যেতে পারে। কিন্তু অন্যান্য আপডেটগুলো শুভস্য শীঘ্রম। যেসব অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে আর অফিসিয়াল আপডেট আসবে না সেগুলোর ক্ষেত্রে কাস্টম রমের ব্যবহার পুরো অভিজ্ঞতাই পাল্টে দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বুটলোডার আনলকের পাশাপাশি আরও কিছু কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হবে। তাই পরিষ্কার ধারণা না থাকলে এই পথে না হাটাই উত্তম।
হালকা সারাই
একদিন হয়ত দেখলেন, মাইক্রোফোন ঠিকঠাক কাজ করছে না। অথবা স্পিকারে গান বাজানোর সময় উদ্ভট সব আওয়াজ হচ্ছে স্পিকারে। মেকানিকের কাছে নিয়ে অল্প খরচেই এই সমস্যার পরিত্রাণ হতে পারে। সামান্য সমস্যা মানেই যে পুরো ফোন পাল্টে ফেলতে হবে, এমন ভাবাটা ঠিক নয়। স্মার্টফোনের অনেক সমস্যাই ছোট ছোট মেরামতির মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলোর খরচও সামান্য।
স্মার্টফোন ইউটিউব
ব্যাটারি সমস্যার পাশাপাশি অনেকেই স্মার্টফোনের চার্জিং পোর্ট ভেঙে ফেলেন। এ কারণে ফোন ঠিকমতো চার্জ নেয় না। ২০-২৫ হাজার টাকা দামের ফোনে হাজার-দু হাজার খরচে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মেলা সম্ভব।
অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ সরান, জায়গা বাঁচান
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মার্টফোনে ছবি তোলা, বিভিন্ন ফাইল সংরক্ষণ এবং অ্যাপ ইন্সটল করা হয়। প্রয়োজন শেষে ফেলে রাখলে এসব জিনিস আপনার ফোনের স্টোরেজ ভরে ফেলবে। ফলে ফোন হয়ে যাবে স্লো।প্রতি দুই-তিন মাসে একবার অপ্রয়োজনীয় ফাইল-অ্যাপ সরান। হয়ত কোনো বন্ধুর পরামর্শে একটি অ্যাপ ইন্সটল করেছিলেন কিন্তু এখন আর সেটি ব্যবহার করছেন না। সেটিকে নির্দ্বিধায় ডিলিট করে দিন।অনেক ফোনেই অপ্রয়োজনীয় প্রি-ইন্সটলড অ্যাপ থাকে। ফোন কেনার সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলো মুছে ফেলুন। কিছু অ্যাপ আবার আরও কিছু অ্যাপকে ডেকে আনে। সেগুলোও মুছে ফেলুন নির্দ্বিধায়। আর পুরোনো ছবি-ভিডিও রাখতে ক্লাউড স্টোরেজ যেমন গুগল ওয়ান ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার ফাইলও থাকলো, ফোনের জায়গাও বাঁচলো।
কিনবেনই তো, একটু দেরি করুন না!
আজকালকার স্মার্টফোনগুলো কিন্তু ঠুনকো নয়। ভালো মানের একটি ফোন সাবধানে চালালে পাঁচ বছর পার করে দেওয়াই যায় অনায়াসে।পুরোপুরি ব্যবহার অনুপযোগী অথবা প্রায়ই মেরামতের দরকার না হলে নতুন ফোন কেনা অপচয় মাত্র।
খুঁটিনাটি মেরামত, নিয়মিত ট্র্যাশ ডিলিট, বাইরের দিকটা পরিষ্কার এবং প্রয়োজনীয় অ্যাকসেসরিজ পাল্টে আপনি পুরোনো ফোনের মায়ায়ই বন্দি হয়ে থাকতে পারেন দীর্ঘদিন।তবে প্রতি বছরই শক্তিশালী স্পেসিফিকেশন নিয়ে ফোন আসে। এ বছর ফোন না কিনলে সামনের বছর আরও ভালো ফোন কিনতে পারবেন।