সদ্য ক্রয় করা স্মার্টফোনটি আসলেই নতুন কিনা, তা নিশ্চিত করতে কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করতে পারেন ভোক্তারা। অনেক সময় দেখা যায়, পূর্বে ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোকে নতুন ফোন হিসেবে বিক্রি করা হয়, যা ক্রেতাদের জন্য বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে। তাই নতুন ফোন কেনার সময় কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি।
আপনার সদ্য ক্রয়কৃত মোবাইল ফোনটি ইতিপূর্বে ব্যবহার হয়েছে কিনা যাচাই করতে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপায় নিচে দেওয়া হলো:
১. প্যাকেজিং এবং সীল পরীক্ষা
নতুন ফোনের প্যাকেজিং অক্ষত এবং সিলযুক্ত থাকে। মডেল, রঙ ও আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) সহ ফোনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদির লেবেলসহ প্যাকেজিংটি বেশ মজবুত থাকে। প্রস্তুতের পর একদম সদ্য মার্কেটে আসা পণ্যগুলোতে প্রায়ই সুরক্ষা সিল থাকে। একবার খুলে ফেললে পুনরায় সিল করার পরেও আগের ভাঙা সিলের চিহ্ন থেকে যায়। সুরক্ষা সিলটি খুললে তার চিহ্ন থাকবে, তাই সিল বিহীন প্যাকেজিং দেখলে সাবধান হতে হবে। যেমন- আইফোনের বাক্সগুলো সাধারণত সিম্লেস প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো থাকে। ভিভোর ডিভাইসগুলোতে ব্র্যান্ডের স্টিকার ব্যবহার করা হয়, যা একবার খুলে ফেলার পর নষ্ট সিল বেশ ভালোভাবে দৃষ্টিগোচর হয়।
২. ফোনের বাহ্যিক অংশ পর্যালোচনা
ফোনের স্ক্রিন, চার্জিং পোর্ট, স্পিকার এবং ক্যামেরা পরীক্ষা করুন। যদি কোন দাগ, স্ক্র্যাচ বা ধুলো থাকে, তা মানে ফোনটি পূর্বে ব্যবহৃত হতে পারে। সাধারণত ওয়ানপ্লাস এবং অপ্পোর মডেলগুলোর ধাতব ফ্রেম এতটাই মসৃণ থাকে যে পূর্ববর্তী ব্যবহারে সৃষ্ট ছোট ছোট বিচ্যুতিগুলো নিমেষেই ধরা পড়ে।
৩. সিরিয়াল নম্বর এবং আইএমইআই যাচাই
ফোনের সিরিয়াল নম্বর এবং আইএমইআই নম্বর যাচাই করতে হবে। এগুলোর সাথে ফোনের বাক্সে থাকা তথ্য মিলে না গেলে, ফোনটি আগে ব্যবহৃত হতে পারে।
৪. চার্জের পরিমাণ পরীক্ষা
নতুন ফোনের ব্যাটারি ১০০% চার্জ থাকা উচিত। ফোনের ব্যাটারি অবস্থাও পরীক্ষা করুন।
৫. আভ্যন্তরীণ সফ্টওয়্যার পরীক্ষা
সদ্য বাজারে প্রকাশিত ফোনে ফ্যাক্টরি ইন্সটল করা অ্যাপ এবং ওএস-এর সর্বশেষ সংস্করণ থাকে। থার্ড-পার্টি অ্যাপ, অসংলগ্ন সেটিংস বা পুরানো সফ্টওয়্যার মানেই ফোনটি এর আগে একবার ব্যবহার হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কি কি অ্যাপ থাকে তা দেখার সবচেয়ে কার্যকরী কৌশল হলো ফ্যাক্টরি রিসেট করা।
কোনো কোনো ফোন রিসেট করার পর শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় সিস্টেম অ্যাপ দেখা যাবে। তাই এ ক্ষেত্রে আগে থেকে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ্স থাকাটা ইতোপূর্বে ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়। এছাড়াও অব্যবহৃত ফোনে কখনোই পুরানো সংস্করণের কোনো সফ্টওয়্যার থাকবে না। পুরনো অ্যাপের অর্থ হলো ফোনটি আগে সক্রিয় ছিল এবং মাঝের সময়টিতে অ্যাপটির আপডেট করা হয়নি।
৬. ওয়ারেন্টি এবং অ্যাক্টিভেশনের তারিখ নিরীক্ষা
অ্যাক্টিভেশনের তারিখ ও ওয়ারেন্টি অনুসরণ করে একটি ফোন কবে প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল তা বের করা যায়। এই তথ্যাবলি যাচাইয়ের জন্য অধিকাংশ ফোন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অনলাইন পরিষেবা রয়েছে। ফোনের সিরিয়াল নাম্বার দিয়ে সেই সাইটগুলোতে সংশ্লিষ্ট ফোনের অ্যাক্টিভেশনের তারিখ এবং ওয়ারেন্টি কভারেজ জানা যায়। সাধারণত নতুন বাজারে আসা ফোনের ওয়ারেন্টি কেনার তারিখ থেকে শুরু করে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত থাকবে। শেষ সীমাটি যদি খুব কাছাকাছি হয় তাহলে বুঝতে হবে ডিভাইসটি অনেক আগে থেকেই চালু ছিলো।
৭. মেরামতের কোনো চিহ্ন আছে কিনা তা দেখা
কেসিংসহ পুরো বডির যেকোনো অংশে কোন ধরণের মেরামত করা হলে তা ফোনে ছাপ রেখে যায়। স্ক্রুগুলোতে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে সেগুলোর আশেপাশে ক্ষুদ্র দাগ রয়েছে। কখনও কখনও মেরামতের পর স্ক্রুগুলো ভালোভাবে লাগানো হয় না। অন্যদিকে, নতুন ডিভাইসে কোনরকম স্ক্র্যাচ ছাড়াই যুতসইভাবে স্ক্রু লাগানো থাকে। কোনো কোনো ফোনে স্ক্রুর উপর ক্ষুদ্রাক্ষুদ্র বুশ ব্যবহার করা হয় যা ছিদ্রের সঙ্গে মাপ মতো যুক্ত হয়ে থাকে। কিন্তু পুরাতন ফোনে দেখা যাবে এগুলোর একটি নেই অথবা থাকলেও তার মাপ সমান নয়।
এছাড়া প্রায় সময় ফোনের আভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশগুলো আনঅফিসিয়াল বা মানহীন যন্ত্রাংশ দিয়ে বদলে দেওয়া হয়। এর ফলে ফোনের দীর্ঘায়ুর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
৮. ফোনের সাথে সরবরাহকৃত সামগ্রী যাচাই
ফোনের সাথে দেওয়া চার্জার, কেবল বা অন্য সামগ্রীও পরীক্ষা করুন। যদি এসবের গায়ে কোনো অপ্রত্যাশিত চিহ্ন থাকে, বুঝতে হবে ফোনটি ব্যবহৃত।
৯. ডায়াগনস্টিক টেস্ট
ফোনের স্ক্রিন, সেন্সর, স্পিকার এবং ক্যামেরা পরীক্ষা করতে ডায়াগনস্টিক টেস্ট করুন।ফোনের হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডায়াগনস্টিক টেস্টের গুরুত্ব অপরিসীম। আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড উভয় ধরনের ফোনে স্ক্রিন, সেন্সর এবং ব্যাটারি পরীক্ষা করার জন্য নিজস্ব ডায়াগনস্টিক মেনু এবং টুল রয়েছে। ডিসপ্লে, স্পিকার এবং ক্যামেরা পরীক্ষার দিকেও সতর্ক নজর রাখা প্রয়োজন।
আইফোনের ক্ষেত্রে প্রথমে পাওয়ার-অফ করতে হবে। তারপর এ অবস্থায় ভলিউম আপ ও ডাউন বোতাম দুটি একসঙ্গে চেপে রেখে ফোনকে চার্জে লাগাতে হবে। কিছুক্ষণ পর অ্যাপল লোগো প্রদর্শিত হলে বোতামগুলো ছেড়ে দিতে হবে। তারপর প্রদর্শিত বার্তার নিচে ‘স্টার্ট সেশন’-এ ট্যাপ করলেই ডায়াগনস্টিক মুড সক্রিয় হয়ে যাবে।
অ্যান্ড্রয়েডের জন্য ‘*#*#৪৬৩৬#*#*’-এ ডায়াল করে ব্যাটারিসহ সমগ্র ফোনের পারফর্মেন্সের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে। এছাড়া ‘টেস্টএম’ বা ‘ফোন ডক্টর প্লাস’-এর মতো বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে যেগুলো অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমে ডায়াগনস্টিক মুড সক্রিয় করে।
১০.ক্রয়ের রশিদসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র পর্যালোচনা
ক্রয়ের রশিদ ও অন্যান্য নথিপত্র যাচাই করে ফোনের বৈধতা নিশ্চিত করুন।ক্রয়ের রশিদসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র পর্যবেক্ষণ
একটি পণ্যের পাশাপাশি তার খুচরা বিক্রেতার বৈধতা নিরুপণের একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলো পণ্য ক্রয়ের রশিদসহ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় নথিপত্র। প্রসিদ্ধ ব্র্যান্ডগুলোতে বিস্তারিত ইনভয়েসের সঙ্গে ক্যাটালগ ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিপণনের কাগজপত্র দেওয়া হয়। এগুলোর মাধ্যমে ডিভাইস অ্যাক্টিভেশন স্ট্যাটাস এবং পণ্য সংক্রান্ত অন্যান্য ইতিহাস জানা যায়। অনুমোদনবিহীন বিক্রেতারা আনঅফিসিয়াল ফোন বিক্রি করে থাকেন। ফলে এগুলোর সঙ্গে সহায়ক কোনো নথি দেখা যায় না।
এখানে উল্লেখ্য যে, এককভাবে শুধু নথিপত্রের উপর নির্ভর করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ফোনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলোর সঙ্গে নথিপত্রের তথ্য মিলিয়ে দেখা বাঞ্ছনীয়।
সার্বিকভাবে, ফোনের প্যাকেজিং, সিরিয়াল নম্বর, বাহ্যিক অংশ, এবং সফটওয়্যার পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারেন যে, আপনার নতুন ফোনটি আসলেই নতুন এবং অব্যবহৃত।