তথ্যপ্রযুক্তির যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জরুরি যোগাযোগ থেকে শুরু করে তথ্য আদান-প্রদান, বিনোদন, এমনকি অফিসের কাজ—সবকিছুই করা যাচ্ছে এ ছোট পর্দার যন্ত্রে। কিন্তু সুবিধার পাশাপাশি স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার অনেকের জন্য আসক্তিতে রূপ নিয়েছে। শুধু সময়ের অপচয়ই নয়, নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও। তবে সচেতনতা ও কিছু কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে এ আসক্তি কমানো সম্ভব।
আসক্তির মাত্রা ও প্রভাব
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে ব্যবহারকারীরা এতে আসক্ত হয়ে পড়েন। নোটিফিকেশন, রিঅ্যাকশন, কমেন্টস—এসব মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ করে, যা আনন্দের অনুভূতি দেয়। ফলে বারবার ফোন হাতে নেয়ার প্রবণতা বাড়ে।
তরুণ ও শিশু-কিশোরদের মধ্যে আসক্তি বাড়ার মাত্রা বেশি। গেম, কার্টুন বা সামাজিক মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটানো তাদের মানসিক বিকাশ ও পড়াশোনায় বাধা সৃষ্টি করছে। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাবও উল্লেখযোগ্য। বিশেষজ্ঞরা জানান, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, ঘুমের সমস্যা ও সামাজিক সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি মানসিক বিকৃতি, স্থূলতা, এমনকি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ায়।
আসক্তি কমানোর উপায়
কিছু সহজ পদক্ষেপ নিলেই স্মার্টফোন ও সামাজিক মাধ্যমের আসক্তি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কয়েকটি কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো:
সময়সীমা নির্ধারণ করুন: সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিন। উদাহরণস্বরূপ, রাতের খাবারের পর ১৫-২০ মিনিট। ‘ফ্রিডম’ বা ‘স্টে ফ্রি অ্যাপ’ ব্যবহার করে যেকোনো অ্যাপ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্লক করা যায়।
নোটিফিকেশন বন্ধ করুন: অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন। শুধু গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গ্রুপের নোটিফিকেশন চালু রাখুন। এতে ফোন বারবার চেক করার প্রবণতা কমবে।
স্ক্রিনটাইম-মুক্ত সময় ও এলাকা: বাড়িতে কিছু সময় বা জায়গা নির্ধারণ করুন, যেখানে ফোন ব্যবহার করা যাবে না। ঘুমানোর সময় ফোন বালিশের পাশে না রেখে অন্য ঘরে অথবা হাতের নাগাল থেকে দূরে রাখুন।
ডিজিটাল ডিটক্স: সপ্তাহে একটি দিন বা কয়েক ঘণ্টা ফোন থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকার চেষ্টা করুন। এ সময় বই পড়া, ব্যায়াম বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর মতো কাজে মন দিন। বিশেষজ্ঞদের মতে, তিনদিন ফোন ব্যবহার না করা আসক্তি কমাতে বড় ভূমিকা রাখে।
বিকল্প কাজে মনোযোগ: ফোনের পরিবর্তে সৃজনশীল কাজে সময় ব্যয় করুন। শিশুদের ক্ষেত্রে বাইরে খেলাধুলা, নাচ, গান বা আঁকার মতো কার্যকলাপে উৎসাহিত করুন। প্রাপ্তবয়স্করা নতুন কিছু শেখা, যেমন রান্না বা বাগান করার মতো কাজে মন দিতে পারেন।
মননশীলতার চর্চা: মাইন্ডফুলনেস বা ধ্যানের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যায়। এটি ফোনের প্রতি অবচেতন নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করে।
সমাজ ও পরিবারের ভূমিকা
আসক্তি কমাতে পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকদের উচিত শিশুদের সামনে ফোনের ব্যবহার সীমিত করা। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়, তাই বড়দের ফোন ব্যবহার দেখলে তারাও আগ্রহী হয়। এছাড়া স্কুল-কলেজে ও সামাজিকভাবে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো যেতে পারে।