২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে। এতে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৭৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৫ দশমিক দুই শতাংশ। অথচ এ বরাদ্দে রয়েছে ফাঁকি। কারণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ১৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে। যেটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের এ ব্যয় বাদ দিলে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ দাঁড়ায় ৬৪ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৭ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৬৬ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা করা হয়। এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য রয়েছে ১১ হাজার ৩১৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
সূত্রমতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মিলে শিক্ষা খাতকে বিবেচনা করা হয়। তবে গত কয়েক বছরের মতো এবারও প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কেও একীভূত করে ‘শিক্ষা ও প্রযুক্তি’ খাত করা হয়েছে। শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতেই বাজেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রয়েছে।
এক্ষেত্রে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৪১ কোটি টাকা। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অনুকূলে অনুন্নয়ন এবং উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। আর কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের বরাদ্দ সাত হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে শুধু শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুন্নয়ন বরাদ্দ (বেতন-ভাতা) ৪০ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন বরাদ্দ রয়েছে ২০ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। এর সঙ্গে প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন বরাদ্দ ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা।
প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন বরাদ্দের মধ্যে ১৫ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে, যা একক প্রকল্প হিসেবে সর্বোচ্চ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বিদ্যুৎ খাতের। তাই এটিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আওতায় আনার দরকার ছিল। অথচ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে। এতে প্রকল্পটি চলে গেছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে। অথচ প্রযুক্তির সঙ্গে এ প্রকল্পের কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে উচ্চ বরাদ্দ দেখানোর জন্য এবং সর্বোচ্চ বরাদ্দে ফাঁকি দেওয়ার জন্য এমনটি করা হয়েছে।
যদিও বাজেট বক্তৃতায় মানবসম্পদ উন্নয়ন অংশে শিক্ষা অনুচ্ছেদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বলা হয়েছে ভৌত অবকাঠামো অংশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অনুচ্ছেদে। অথচ বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে।