এবার নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে রাশিয়া, চীন ও ইরান। মূলত সাইবার জগতে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই তারা এ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
তবে এই দৌড়ে চীন অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে আছে। নিজেদেরকে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বৈশ্বিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চীন ‘দ্য গ্রেট ফায়ারওয়াল অব চায়না’ নামে একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যা এক বিশাল সেন্সরশিপ ব্যবস্থা।
চীনের এই সেন্সরশিপ ব্যবস্থা মূলত সফটওয়্যার নির্ভর। যার মাধ্যমে চীন জনগণের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণ কোন তথ্য, আধেয় বা কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবে, তা চীনের সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে।
অন্যদিকে প্রযুক্তিবিষয়ক সাময়িকী অয়ারডের তথ্যানুযায়ী, রাশিয়াও নিজস্ব ইন্টারনেট তৈরিতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত মাসেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এমন ব্যবস্থা তৈরির জন্য নতুন আইন পাস করিয়েছেন।
ইন্টারনেটের আইপি অ্যাড্রেসকে পাঠযোগ্য করার প্রক্রিয়াকে ডিএনএস বলা হয়। রাশিয়াও এই ডিএনএস ব্যবস্থার একটি নিজস্ব রূপ তৈরি করেছে। ফলে কেউ রাশিয়া থেকে কেউ গুগলের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে গেলে তিনি দেশটির নিজস্ব সার্চইঞ্জিন ইয়ানডেস্কে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই চলে যাবেন। একইরূপে কেউ ফেসবুকে ঢুকতে চাইলে সেখানকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিকেতে চলে যাবেন। গত এপ্রিলে রাশিয়া পরীক্ষা চালিয়ে সফলও হয়।
বিশ্বের আরেক দেশ ইরানও এবার রাশিয়ার পথে হাঁটছে। ‘জাতীয় তথ্য নেটওয়ার্ক’ প্রকল্পের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলেও গত মাসে ইরান ঘোষণা দেয়। এটি সম্পূর্ণ ইরানের ‘নিজস্ব ইন্টারনেট’ ব্যবস্থা গড়ার অংশ।
বর্তমান বিশ্বে সাইবার জগতের নিয়ন্ত্রণ এখন পশ্চিমাদের হাতে। আর পশ্চিমাদের এ নিয়ন্ত্রণে অনেক রাষ্ট্রই নাখোশ। এছাড়া মুক্ত ইন্টারনেটে এমন কিছু সমস্যা আছে, যা সব দেশের জন্যই সমান গুরুতর। তাই একটি দেশের সামরিক স্থাপনা কিংবা বিদ্যুৎ বা জরুরি পানি ব্যবস্থাপনার মতোই বর্তমান সাইবার দুনিয়াও ঝুঁকিপূর্ণ।
অয়ার্ড বলছে, রাশিয়া ও ইরান যদি আলাদা ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরিতে সফল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এমন এক ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরি হবে যার সঙ্গে বর্তমানের কোনো কিছুরই তুলনা চলে না। তবে এক্ষেত্রে বিশাল প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ও জড়িত। সব ঠিকঠাক থাকলে নিজস্ব ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠার পথ কোনোভাবেই অসম্ভব নয়।