পালিত হলো বিশ্ব রেফ্রিজারেশন দিবস। এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশি মাল্টিন্যাশনাল ব্র্যান্ড ওয়ালটন আয়োজন করে একটি সেমিনারের। যার প্রতিপাদ্য ছিলো ‘বিশ্বসেরা রেফ্রিজারেশন পণ্য তৈরির প্রত্যয়ে ওয়ালটন’। এতে বক্তারা আধুনিক বিশ্বের জন্য রেফ্রিজারেশন-এর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। যাতে পরিবেশ-বান্ধব রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বিশ্বসেরা রেফ্রিজারেশন পণ্য তৈরির প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের এপ্রিলে সারা বিশ্বের ব্যবসায়িক সংগঠন এবং উদ্যেক্তারা ২৬ জুন বিশ্ব রেফ্রিজারেশন দিবস হিসেবে পালনের বিষয়ে একমত হয়। ইনস্টিটিউট অব রেফ্রিজারেশন এর প্রেসিডেন্ট স্টিফেন গিল হলেন এ ধারণার প্রবক্তা। এক দশক ধরে তিনি রেফ্রিজারেশন দিবস পালনের উদ্যেগ নিয়ে কাজ করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে প্রতি বছর ২৬ জুন বিশ্ব রেফ্রিজারেশন দিবস হিসেবে পালনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা (ইউএনইপি)র ওজোনঅ্যাকশন বিভাগের মাধ্যমে দিবসটি পালনে সমর্থন দিয়েছে।
বুধবার (২৬ জুন, ২০১৯) রাজধানীতে ওয়ালটন করপোরেট অফিসে অনুষ্ঠিত ওই সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন ইউএনডিপির কেমিক্যাল ও মন্ট্রিল প্রোটেকল বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক আশরাফুল আম্বিয়া, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. আফসার আলী, ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক ইভা রিজওয়ানা, এস এম জাহিদ হাসান, হুমায়ূন কবীর, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ও তানভীর রহমান, আন্তর্জাতিক বিজনেস ইউনিট প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম প্রমুখ।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরের ডেপুটি সিইও তৌফিক-উল কাদের। বক্তব্য রাখেন সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর আনিসুর রহমান মল্লিক এবং ডেপুটি অপারেটিভ ডিরেক্টর আল ইমরান।
আশরাফুল আম্বিয়া জানান, ফ্রিজ ও কম্প্রেসরে ক্ষতিকারক এইচএফসি গ্যাস ফেজ আউট প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্ববধানে জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপি ও ওয়ালটন যৌথ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ওয়ালটন কারখানা এবং সার্ভিস সেন্টারে ফ্রিজ এবং কম্প্রেসর থেকে পুরোপুরি এইচএফসি ফেজ আউট করে গ্রিন হাইড্রোকার্বন টেকনোলজির ব্যবহার নিয়ে কাজ চলছে। উক্ত প্রকল্পে এইচএফসি-১৩৪এ রেফ্রিজারেন্টের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব এইচসি-৬০০এ (আইসোবিউটেন) রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে।
ওয়ালটনের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে বায়ুমন্ডলে বাৎসরিক প্রায় ২৩০ মেট্রিক টন এইচএফসি গ্যাসের নিঃসরণ রোধ হবে। এর মাধ্যমে বাৎসরিক প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার টন কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে ওয়ালটন তথা বাংলাদেশ।
অধ্যাপক আফসার আলী বলেন, ওয়ালটন রেফ্রিজারেশন পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী। কিন্তু তারা এসব পণ্যে পরিবেশের ক্ষতিকর দিক নিয়ে গবেষণা করছে। তারা পরিবেশ এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রেফ্রিজারেন্ট ও উপাদান ফেজ আউটের জন্য যে পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে, তাতে আমি অভিভূত।
ইভা রিজওয়ানা বলেন, আধুনিক বিশ্বের জন্য রেফ্রিজারেশন ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। খাদ্যদ্রব্য এবং ঔষধসহ বিভিন্ন পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষরণ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্য এ প্রযুক্তি যুগান্তকারী আবিস্কার। ওয়ালটন এ প্রযুক্তি সব শ্রেণীর মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করছে।
এস এম জাহিদ হাসান বলেন, ওয়ালটন কারখানায় শতভাগ কমপ্লায়েন্স রক্ষা করা হয়। উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিতে ব্যাপক জোর দেয়া হচ্ছে। যে কারণে গত বছর ওয়ালটন অর্জন করে জাতীয় পরিবেশ পদক। বিশ্বসেরা পণ্য তৈরির পাশাপাশি বিশ্বসেরা সার্ভিস দিতেও ওয়ালটন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে তৌফিক-উল কাদের জানান, বিশ্বে এখন প্রায় ২.৩ বিলিয়ন রেফ্রিজারেটর এবং ফ্রিজার চালু আছে। যা বৈশ্বিক বিদ্যুতের প্রায় ৪ শতাংশ ব্যবহার করছে। রেফ্রিজারেশন পণ্যে এনার্জি লেভেল এ স্টার রেটিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে ওয়ালটন ইনভার্টার টেকনোলজি সম্বলিত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ বাজারে ছাড়ছে। যা ক্রেতা চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ব্যাপক বিদ্যুৎ ও অর্থ সাশ্রয় করছে।