বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকারের চাহিদার ভিত্তিতে নিয়মিতভাবে আইফোন ব্যবহারকারীর তথ্য সরবরাহ করে অ্যাপল। এ তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে কয়েক বছরের মধ্যে চীন সরকারের এ চাহিদা অস্বাভাবিক বেড়েছে। গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে রেকর্ড প্রায় দেড় লাখ ডিভাইসের তথ্য চেয়েছে দেশটি। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে এ তথ্য দিয়েছে অ্যাপল। খবর জিডিনেট।
অ্যাপলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের দ্বিতীয়ার্ধে চীন সরকার অ্যাপল ডিভাইসের তথ্যে প্রবেশের ৬৮৯টি অনুরোধ করেছে। এসব অনুরোধের মাধ্যমে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫৯৫টি ডিভাইসে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছে দেশটির সরকার, যা একই সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে প্রবেশের অনুমতি চাওয়া ডিভাইসের সাত গুণ এবং বিশ্বব্যাপী অনুরোধের অর্ধেকেরও বেশি।
একই বছরের প্রথমার্ধের সঙ্গে তুলনায় দেখা গেছে, প্রথমার্ধে চীনা সরকার যে সংখ্যক ডিভাইসে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছিল, দ্বিতীয়ার্ধে তা ৪৫০ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে প্রথমার্ধে চীনের অনুরোধের সংখ্যা বেশি হলেও অনুপ্রবেশ চাওয়া ডিভাইসের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩০ হাজার ৭৬৪!
ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে ২০১৮ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিভিন্ন সরকারের অনুরোধ এবং সরবরাহকৃত তথ্যের বিস্তারিত তুলে ধরেছে অ্যাপল।
অ্যাপলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে চীন সরকারের বেশির ভাগ অনুরোধ ছিল ইন্স্যুরেন্স প্রতারণা এবং হারানো ডিভাইস অনুসন্ধানসংক্রান্ত। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে অধিকাংশ অনুরোধ ছিল দেশটির কর প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর ফাঁকির তদন্তসংশ্লিষ্ট।
এ সময় চীন সরকারের ৬৮৯টি অনুরোধের ৯৬ শতাংশই রেখেছে অ্যাপল। কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট ডিভাইস শনাক্তকরণে প্রয়োজনীয় তথ্য, যেমন সিরিয়াল নম্বর বা আইএমইআই নম্বর সরবরাহ করেছে কোম্পানিটি।
ব্যবহারকারীর তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রে ডিভাইস সংখ্যার হিসেবে চীনের পরই যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির অবস্থান। ২০১৮ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এ দুটি দেশ ১৯ হাজারের কিছু বেশি ডিভাইসের তথ্যে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছে।
অ্যাপলের দেয়া তথ্যমতে, জার্মানি মূলত হারানো ডিভাইস অনুসন্ধান এবং যুক্তরাষ্ট্র হারানো ডিভাইস অনুসন্ধান ও প্রতারণা তদন্তের উদ্দেশ্যে তথ্য চেয়ে অ্যাপলের কাছে অনুরোধ পাঠিয়েছে।
তবে ব্যবহারকারীর আইটিউনস এবং বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য চেয়ে অনুরোধ পাঠানোর দিক থেকে সবার চেয়ে এগিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। এসব তথ্যের মধ্যে পড়ে ব্যবহারকারীর নাম, ঠিকানা, অনেক ক্ষেত্রে স্টোরেজে থাকা ছবি, ই-মেইল, ডিভাইস ব্যাকআপ, কন্ট্যাক্ট নম্বর অথবা ক্যালেন্ডার।
ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ ২ হাজার ৬৬৯টি অনুরোধের মাধ্যমে ৯ হাজার ৯২৪টি অ্যাকাউন্ট এবং চীন ৪২টি অনুরোধের মাধ্যমে ৭ হাজার ১৫৪টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র অর্ধেক অনুরোধ রক্ষা করেছে অ্যাপল। অন্যদিকে চীনকে শুধু কনটেন্টের বাইরের তথ্য দিয়েছে মার্কিন কোম্পানিটি। অ্যাপল জানিয়েছে, এক্ষেত্রে চীনের অনুরোধের বেশির ভাগই ছিল আর্থিক প্রতারণার অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট।
অবশ্য পাঁচ বছর ধরে বিশ্বব্যাপীই অ্যাপল ডিভাইস ব্যবহারকারীর তথ্য চেয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আবেদনের হার বেড়েছে। ২০১৩ সালে সারা বিশ্বে এমন আবেদন ছিল মাত্র তিন হাজারটি, ২০১৮ সালে তা বেড়ে নয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
অ্যাপল এখন সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ সরানোও শুরু করেছে। এখানেও চীন সবার চেয়ে এগিয়ে। ৫৬টি অনুরোধের মাধ্যমে ৬২৬টি অ্যাপ সরানোর অনুরোধ করেছিল চীন। অ্যাপল ৫১৭টি সরিয়েছে। যেখানে সারা বিশ্ব থেকে ৭৭০টি অ্যাপ সরাতে অনুরোধ এসেছে ৮০টি, সেখানে অ্যাপল সরিয়েছে ৬৩৪টি। অ্যাপলের তথ্যমতে, চীন সরকারের অ্যাপ সরানোর অনুরোধে প্রধান দুটি কারণ ছিল অবৈধ জুয়া ও পর্নোগ্রাফি।