সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক কর্মী বৈচিত্র্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে ২০২৪ সাল নাগাদ নারী কর্মী দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গত মঙ্গলবার কর্মী বৈচিত্র্য নিয়ে নিজেদের লক্ষ্য প্রকাশ করেছে। খবর ব্লুমবার্গ।
বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠানের কর্মী বাহিনীতে নারী ও সংখ্যালঘুদের নিয়োগ বাড়ানোর বিষয়টি এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনা হচ্ছে। অধিকাংশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। টানা কয়েক বছর কর্মী বাহিনীতে বৈচিত্র্য আনতে কাজ করছে ফেসবুক। তবে এ বিষয়ে তারা সামান্যই এগোতে পেরেছে। এ নিয়ে আরো কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। যে কারণে আগামী পাঁচ বছরে নারী কর্মীর সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুণে নেয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মী বাহিনীর অর্ধেক পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী থেকে নিয়োগ দিতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
ফেসবুকের কর্মী বৈচিত্র্য বিভাগের প্রধান ম্যাক্সিন উইলিয়ামস এক ব্লগ পোস্টে জানান, বিশ্বের সব বর্ণ-গোত্রের মানুষ পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে ফেসবুক ব্যবহার করছে। মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো সেবা সরবরাহে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কর্মী বাহিনীতে বৈচিত্র্য আনতে আমাদের এখনো অনেক দূর যেতে হবে। আমরা ফেসবুককে এমন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চাইছি, যেখানে আগামী পাঁচ বছরে ৫০ শতাংশ কর্মী নারী থাকবে। এ নারী কর্মীদের নিয়োগ দেয়া হবে কৃষ্ণাঙ্গ, স্প্যানিশ, নেটিভ আমেরিকান, প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ থেকে। এছাড়া ফেসবুকে প্রতিবন্ধী নিয়োগ বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মী বাহিনীতে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীগুলো থেকে ৫০ শতাংশ নিয়োগের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। এটি ফেসবুকের কার্যক্রম আরো প্রসারিত করবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুকের কর্মী বাহিনীর ৪৩ শতাংশ বিভিন্ন সুবিধাবঞ্চিত গ্রুপের।
ফেসবুকের বার্ষিক কর্মী বৈচিত্র্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন বৈশ্বিক কর্মী বাহিনীতে নারী রয়েছেন ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ, যা এক বছর আগের ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশের চেয়ে কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুকের কর্মী বাহিনীতে কৃষ্ণাঙ্গ ও স্প্যানিশ কর্মীর উপস্থিতি রয়েছে ৯ শতাংশ, যা এক বছর আগে ছিল ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। গত মার্চ শেষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠানটির কর্মী সংখ্যা ৩৮ হাজারে পৌঁছেছে।
ম্যাক্সিন উইলয়ামসের ভাষ্যে, ২০১৪ সাল শেষে ফেসবুকের বৈশ্বিক কর্মী বাহিনীতে যতসংখ্যক নারীর উপস্থিতি ছিল, তা এখন ২৫ গুণ বেড়েছে। একই সময়ের চেয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে ১০ গুণ। বর্তমানে কৃষ্ণাঙ্গ ও স্প্যানিশ কর্মীরা ফেসবুকের কারিগরি পদগুলোর মাত্র ৫ শতাংশের দখলে রয়েছেন, যা ২০১৪ সালের চেয়ে মাত্র ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে।
২০১৩ সালে ফেসবুকে যোগ দেয়া ম্যাক্সিন উইলিয়ামস বলেন, ফেসবুক নয় বছর আগে কর্মী বাহিনীতে বৈচিত্র্য আনতে কাজ শুরু করেছিল। এটি সহজ কাজ নয়। টানা কয়েক বছর এ নিয়ে কাজ করলেও লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি। এ নিয়ে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
বৈশ্বিক প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো কর্মী বাহিনীতে বৈচিত্র্য আনতে চাপে রয়েছে। বিশেষ করে এসব প্রতিষ্ঠানের কারিগরি পদগুলোর সিংহভাগ দখলে রেখেছে শ্বেতাঙ্গ ও এশীয়রা।
২০১৪ সালে বেশকিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী বাহিনীর বৈচিত্র্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করে। একই বছর থেকে ফেসবুক তাদের কর্মী বৈচিত্র্য শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মী বাহিনীতে নারী ও সংখ্যালঘুদের নিয়োগ না দেয়ার অভিযোগ বেশ পুরনো। এমন অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে অনেক প্রযুক্তি জায়ান্ট নিজেদের মতো করে কাজ করছে। এতে সার্বিক অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।