দেশে স্মার্টফোন মার্কেটে সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা বাজেট সেগমেন্টের ক্ষেত্রে। এই সেগমেন্টের নতুন সংযোজন হলো এলজি-র ডাব্লু সিরিজ। এই কোরিয়ান স্মার্টফোন ব্র্যান্ডটি গতমাসের ফ্যান ফেস্টে তিনটি ফোন লঞ্চ করেছিল। ফোনগুলির নাম হল এলজি ডাব্লু ১০, এলজি ডাব্লু ৩০, এলজি ডাব্লু ৩০ প্রো । এলজি ডাব্লু ৩০ হলো ১২ হাজার টাকার রেঞ্জের সবচেয়ে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী। এই ফোনটিতে এমন কিছু ফিচার রয়েছে, যেগুলো এই ফোনটিকে করে তুলেছে অনন্য। আজ আমরা এই পোস্টে এমনই পাঁচটি বিশেষ ফিচারের কথা জেনে নেব।
চিত্তাকর্ষক ডিজাইন
এলজি ডাব্লু ৩০ কে দেখলেই ২০১৯ এর মডার্ন ডিভাইসের মতো মনে হয়। এই ফোনটি আপনার হাতে একটি প্রিমিয়াম লুক দেবে। আপনারা ফোনটিতে ওপর একটি ছোট্ট ওয়াটারড্রপ নচ্ পাবেন এবং পিছনে একটি চকচকে ব্যাক প্যানেল পাবেন। এই ফোনটির ক্রোম প্লেটিং দেওয়া সাইড এবং প্লাস্টিক কোটেড কার্ভ দেখতে অসাধারণ। এই ফোনটির ব্যাক প্যানেল আলো বিচ্ছুরিত করতে পারে। এর ফলে ফোনটি আরো সুন্দর হয়।
এলজি ডাব্লু ৩০ ডিজাইনটি খুবই সলিড এবং এটি হাতে ধরতে খুব সহজ। বিশেষত এর সঠিক সাইড এবং গোলাটে কোনগুলির জন্য। ব্যাক প্যানেলে একেবারে সঠিক জায়গায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারটি রয়েছে। সবদিক থেকে দেখতে গেলে বাজেটনির্ভর ফোন গুলোর মধ্যে এটিকে দেখতে খুবই সুন্দর।
পরিবর্তনশীল নচ্
এলজি ডাব্লু ৩০ তে আপনারা পেয়ে যাচ্ছেন ৬.২৬ ইঞ্চির এইচডি প্লাস ফুল ভিশন ডিসপ্লে। ৮৬% স্ক্রিন-টু-বডি রেশিও এবং ১৫২০×৭২০ পিক্সেল রেসোলিউশন। ফোনটির সামনে একটি ওয়াটার ড্রপ নচ্ রয়েছে, যার মধ্যে একটি ১৬ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু এই ফোনটির সবচেয়ে বিশেষ ব্যাপারটি হল এর পরিবর্তনশীল নচ্।
এলজি ডাব্লু ৩০ তিনটি নচ্ স্টাইলের বিকল্প দেবে। প্রথমটিতে আপনারা আগে থেকে দেওয়া ওয়াটার ড্রপ নচ্ ব্যবহার করতে পারবেন। দ্বিতীয় বিকল্পে আপনাদের জন্য থাকছে ইউ আকৃতির নচ্, এবং যদি আপনার নচ্ একেবারেই পছন্দ না হয় তাহলে আপনি সেটিকে তৃতীয় বিকল্পের মাধ্যমে লুকিয়েও ফেলতে পারেন।
ট্রিপল ক্যামেরা
এলজি ডাব্লু ৩০ এর অন্যতম উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো তিনটি রিয়ার ক্যামেরা। ১২ হাজার টাকার কমে তিনটি ক্যামেরাযুক্ত ফোন খুবই কম রয়েছে। এই ফোনটি তিনটি ক্যামেরা সেটআপ এর মধ্যে প্রথমটি ১২ মেগাপিক্সেলের লো লাইট ক্যামেরা, দ্বিতীয়টি ১৩ মেগাপিক্সেলের ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স ক্যামেরা, এবং তৃতীয়টি ২ মেগাপিক্সেলের ডেপ্থ সেন্সিং ক্যামেরা। এই ক্যামেরার মাধ্যমে আপনারা যে কোন জায়গার অনেক ভালো পোট্রেট, বড় ফ্রেমের ছবি তুলতে সক্ষম হবেন।
এলজি আরো জানিয়েছে যে তারা এই ক্যামেরার অ্যাপটিকে আরও সুন্দর এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। আপনারা কেবলমাত্র একটা হাত ব্যবহার করলেই ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তুলতে পারবেন। এছাড়াও এই ক্যামেরা অ্যাপে বিভিন্ন মোডও আপনারা পেয়ে যাবেন, যেমন- নাইট মোড, টাইম ল্যাপস ইত্যাদি। ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপের আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সটির মাধ্যমে বাজেট সেগমেন্টের মধ্যেও ভালো ওয়াইড ক্যাপচার করতে পারবেন।
স্টক অ্যান্ড্রয়েড এক্সপেরিয়েন্স
এলজি ডাব্লু ৩০ চলবে মিডিয়াটেক হেলিও অক্টা-কোর পি২২ চিপসেটের ওপর। এছাড়াও আপনারা কিছু বিশেষ ফিচারও এই ফোনে পেয়ে যাবেন। এই নতুন ফোনটিতে আপনারা এলজির ফ্ল্যাগশিপ ইউজার ইন্টারফেস এলজি ইউএক্স এর পরিবর্তে ভ্যানিলা অ্যান্ড্রয়েড ৯ পাই ইউজার ইন্টারফেস পাবেন। বহু বাজেট রেঞ্জের ক্রেতা স্টক অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। এছাড়াও এই ফোনটিতে ডুরাস্পিড এর মত ফিচারও রয়েছে, যা ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকা অ্যাপগুলিকে বন্ধ করে ফোনটিকে আরো দ্রুত করে দেয়। এছাড়াও আপনারা দৈনিক ব্যবহার হওয়া অ্যাপগুলির জন্য কিছু বিশেষ অ্যাকশন এবং স্মার্ট জেশ্চারও পেয়ে যাবেন। এছাড়াও এলজি আপনাকে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এবং ব্লোটওয়্যার ফ্রী এক্সপেরিয়েন্স দিতে চলেছে এই ফোনটিতে।
বড় ব্যাটারি
ফোনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফোনের পাওয়ারহাউজ বা ব্যাটারি। তাই সেই কথা চিন্তা করেই এলজি ডাব্লু ৩০ তে দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার এমএএইচের একটি বিশাল বড় ব্যাটারি, যা আপনার সাধারন ব্যবহারে একবার চার্জ দিলে একদিন চলে যাবে। এলজির দাবি এই ব্যাটারীটি ১৮ ঘণ্টার ভিডিও প্লেব্যাক, এবং ১১৮ ঘণ্টার অডিও প্লেব্যাক করতে সক্ষম। আপনাকে একটি ১০ ওয়াট এর চার্জার ফোনের বাক্সেই পেয়ে যাবেন যেটি আপনার এলজি ডাব্লু৩০ কে খুব তাড়াতাড়ি চার্জ করে দেবে।
তাহলে সব দিক থেকে বিবেচনা করে দেখতে গেলে শক্তিশালী এবং ফিচারপূর্ণ এলজি ডাব্লু ৩০ বাজেট রেঞ্জের অন্যতম বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। শক্তিশালী হার্ডওয়্যার, স্টক অ্যান্ড্রয়েড এবং ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ সহ এই ফোনটি একটি ভ্যালু ফর মানি ডিভাইস হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এই ডিভাইসটির দাম রাখা হয়েছে 9,999 টাকা। এখন শুধু এটাই দেখার যে চাইনিজ স্মার্টফোন গুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এই ডিভাইসটি কতটা সফল হবে।