দেশে মহাকাশ গবেষণা ও মহাকাশ নিয়ে কাজ করার জন্য বিশেষায়িত স্পেস ল্যাব তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের মহাকাশ গবেষণার জন্য ছোট থেকেই আগ্রহী করার জন্য দেশ স্পেস সিটি করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে দ্বিতীয় স্পেস সামিট আয়োজনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “কিভাবে একটি স্পেস শাটল, কিভাবে একটি রকেট তৈরি এবং তা পাঠাতে হয় এমন সিমুলেশন সেন্টার আছে যুক্তরাষ্ট্রে। আমরা শুরু করছি দেরিতে, তবে আমরা থেমে থাকবো না। আমরা ল্যাব দিয়ে শুরু করবো।”
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল হাসান অপু। তিনি বলেন, আমরা দেশে মহাকাশ গবেষণা নিয়ে বিস্তর কাজ করতে চাই। সে জন্য আমাদের যথপোযুক্ত ল্যাব দরকার। যেখানে শিক্ষার্থীরা, শিশু-কিশোর-তরুণরা বসে গবেষণা করতে পারে।
তিনি প্রধান অতিথির কাছে দাবি জানান দেশে যুক্তরাষ্ট্রের আদলে একটি স্পেস সিটি তৈরির। যেখানে স্পেস বা মহাকাশ নিয়ে বিস্তর জানান সুযোগ পাবেন শিশু-কিশোর-তরুণরা। যেখান থেকে তারা আগ্রহী হবে। বক্তব্যে আরিফুল হাসান অপু বলেন, নাসায় এক প্রশিক্ষণে গিয়ে দেখেছি, সেখানে কত ধরনের কাজ করতে হয়। আমরা প্রাথমিকভাবে কথাও বলেছি। তারা আমাদের স্পেস ল্যাব ও স্পেস সিটি তৈরির জন্য সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। আমরা চাই সরকার এখন বিষয়টিতে এগিয়ে আসুক।
তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না, তবে সংকল্প করছি। আমাদের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে বড় জায়গা আছে। আমি কথা বলবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে। আপনাদের এই দাবিগুলো তুলে ধরবো। যেখানে একটি স্পেস ল্যাব এবং একটি স্পেস সিটি তৈরির, যেখানে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা গিয়ে সরেজমিনে দেখতে পারে কিভাবে তারা মহাকাশে যেতে পারে, সেখানে কোন ধরনের রোবট লাগে, কোন ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলো প্রয়োজন সেগুলো সম্পর্কে জানতে পারবে।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যখনই কোন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে গেছি তখনই সেটা নিয়ে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে। একটা পক্ষ সেটার বিরোধীতা করে। কিন্তু সেটাতে থেমে থাকলে হবে না। তিরি বলেন, আমরা এক এক করে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, বিগ ডেটা, ডেটা অ্যানালিসিস, মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আমরা এখন স্পেস বা মহাকাশ নিয়েও কাজ শুরু করেছি। আসলে সমালোচনায় থেকে থাকলে কাজ করা সম্ভব হয় না।
দেশ প্রথম স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে মহাকাশে। এরপর যেসব স্যাটেলাইট পাঠানো হবে সেগুলোতে দেশের তরুণ বিজ্ঞানীরা যাতে কাজ করতে পারেন বিষয়টিতে জোর দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী চান, আমরা যেন দেশ থেকেই স্যাটেলাইট তৈরি করতে পারি, আমাদের তরুণরাই যেন সেটা করে সেজন্য যে ধরনের সহযোগিতা দরকার তা দেবার জন্য আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।
এই কাজের জন্য যা দরকার তার মধ্যে এই স্পেস নিয়ে সামিট। যেখান থেকে স্পেস বা মহাকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। গবেষণার উৎসাহ পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। দ্বিতীয় দরকার একটা ল্যাব সেটআপ। স্পেস ল্যাব। আমরা দেশের ১৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা করে স্পেশালাইজড ল্যাব স্থাপন করছি।
আমরা ২০৪১ সালে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে যে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের কথা বলছি, সেখানে তরুণদের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হলে গবেষণার বিকল্প নেই বলেন জানান প্রতিমন্ত্রী।
এছাড়াও আগামী অক্টোবরে সরকার ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো করার পরিকল্পনা করেছে। যেখানে বাংলাদেশের যত ইনোভেশন আছে, যত ধরনের আবিষ্কার আছে সেগুলো প্রদর্শন করা হবে এবং দেশি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
আগামী বছর থেকে ছোট পরিসরে হলেও স্পেস ইনোভেশন সামিটের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ কাজ করবে বলে জানান তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল হাসান অপু, আইইউবির কোষাধ্যক্ষ খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর সাজ্জাদ হোসেন।