থ্রিজি বেসব্যান্ড চিপের দাম অস্বাভাবিক কমিয়ে বিক্রির মাধ্যমে বাজারে অবাধ প্রতিযোগিতায় বাধা সৃষ্টি করেছে কোয়ালকম। যে কারণে মার্কিন বহুজাতিক সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিটিকে ২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার জরিমানা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
বাজার আধিপত্যের প্রভাব খাটিয়ে অন্যায্য ব্যবসায় সুবিধা নেয়ায় গত বছরও ইইউর অ্যান্টিট্রাস্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার বড় অংকের জরিমানার মুখে পড়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
জরিমানা বিষয়ে ইইউর অ্যান্টিট্রাস্ট কমিশনার মারগ্রেথ ভেস্টাগার বলেন, থ্রিজি বেসব্যান্ড চিপ বিক্রির ক্ষেত্রে বাজার আধিপত্যের অবৈধ ফায়দা নিয়েছে কোয়ালকম। ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের দিকে তুলনামূলক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বী চিপ নির্মাতা আইসেরাকে কোণঠাসা করতে নিজেদের চিপের দাম অস্বাভাবিক কমিয়ে দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। এর ফলে বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে ব্যর্থ হয় আইসেরা। পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে কিনে নেয় গ্রাফিকস চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া। গত বছর এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে কোয়ালকমকে চিঠি দিয়েছিল ইইউর অ্যান্টিট্রাস্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
তিনি বলেন, আধিপত্য কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে ব্যবসায় সুযোগ নেয়া প্রতিদ্বন্দ্বীর কারণে বাজারে টিকে থাকা কঠিন। আইসেরা ব্রিটিশ চিপ নির্মাতা। তুলনামূলক ছোট কোম্পানি হলেও কোয়ালকমের থ্রিজি বেসব্যান্ড চিপ ব্যবসার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। বেসব্যান্ড চিপ মোবাইল ডিভাইসকে ইন্টারনেটে যুক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আইসেরাকে বাজার থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য করতে প্রধান ক্রেতাদের কাছে নির্ধারিত মূল্যের অনেক কমে বেসব্যান্ড চিপ সরবরাহ করেছে কোয়ালকম। প্রতিষ্ঠানটি পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করেছে।
ইইউর অ্যান্টিট্রাস্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোয়ালকমকে যে জরিমানা করেছে, তা প্রতিষ্ঠানটির গত বছরের মোট রাজস্বের ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। অবৈধভাবে শ্বাসরুদ্ধকর প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য অ্যাপলকে ঘুষ দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত বছর কোয়ালকমকে ১২৩ কোটি ডলার জরিমানা করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বিবৃতিতে কোয়ালকম জানিয়েছে, তারা ইইউর গত বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আপিল করবে। বিষয়টি ইইউর আদালতে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে সমাধানের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। তবে ইইউর অভিযোগ নাকচ করা হয়েছে।
কোয়ালকমের জেনারেল কাউন্সেল ডন রোজেনবার্গ বলেন, ইইউর সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ নয়। অর্থনৈতিক রীতিনীতি এবং বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি বলেন, ইইউর অ্যান্টিট্রাস্ট কমিশন আমাদের থ্রিজি বেসব্যান্ড চিপের দুই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির ভলিউম নিয়ে কয়েক বছর তদন্ত চালিয়েছে। এ দুই ক্রেতা প্রতিষ্ঠানই জানিয়েছে শুধু কম দামের জন্য নয়, প্রতিদ্বন্দ্বীদের চিপ প্রযুক্তিগতভাবে নিম্নমানের হওয়ায় তারা কোয়ালকমের চিপ ব্যবহার করেছে।
তবে মারগ্রেথ ভেস্টাগার বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী আইসেরার অভিযোগ সত্য ছিল। কোয়ালকম থ্রিজি বেসব্যান্ড চিপের প্রধান দুই ক্রেতার কাছে নিজেদের চিপ বিক্রির জন্য অস্বাভাবিক দাম কমিয়েছিল। অথচ প্রতিষ্ঠান দুটি আইসেরার গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতা ছিল। কোয়ালকম তাদের চিপের দাম কমানোয় আইসেরার পণ্য কেনা বাদ দেয় দুই প্রতিষ্ঠান। এটি থ্রিজি বেসব্যান্ড চিপ বাজারে আইসেরার আধিপত্য বিস্তার ঠেকানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছিল। এরপর এনভিডিয়া আইসেরাকে অধিগ্রহণ করলে প্রতিষ্ঠানটির চিপ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় এবং বাজারটিতে বিনা প্রতিযোগিতায় আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয় কোয়ালকমের।
বিশ্লেষকদের মতে, চিপ ব্যবসা ঘিরে একাধিক অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা মোকাবেলা করছে কোয়ালকম। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়। এর আগে চীনে অবৈধভাবে নিজেদের পণ্যের দাম বাড়ানো এবং বাজারে তাদের অবস্থানের অবৈধ ফায়দা নেয়ার অভিযোগ উঠেছিল। বিষয়টি নিয়ে এখনো তদন্ত চলমান।