শাওমি, যাত্রার মাত্র নয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। সম্প্রতি শাওমি কর্পোরেশন (“শাওমি” অথবা “গ্রুপ”; স্টক কোড: ১৮১০: হংকং)-এর এক ঘোষণা থেকে এ তথ্য জানা যায়।
২০১৯ সালের ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ তালিকায় ৪৬৮তম স্থান অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠ কোম্পানি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে বেইজিং-ভিত্তিক গ্লোবাল টেকনোলজি লিডার এই কোম্পানি। গত অর্থবছরে কোম্পানিটির রাজস্ব ছিল ২৬,৪৪৩.৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মোট লাভ ছিল ২,০৪৯.৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। কোম্পানিটি ইন্টারনেট সার্ভিসেস অ্যান্ড রিটেইলিং ক্যাটাগরিতেও ৭ম স্থান অর্জন করেছে।
শাওমি’র ফাউন্ডার, চেয়ারম্যান ও সিইও লেই জুন বলেন, “মাত্র নয় বছরে শাওমি ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে। আমাদেরকে সবসময় সমর্থন করে এসেছে এমন সকল মি ফ্যান ও ব্যবহারকারীদেরকে এই মাইলফলক অর্জনে আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই বছরের তালিকায় সবচেয়ে কনিষ্ঠ কোম্পানি হিসেবে স্থান অর্জন আমাদের জন্য একটি গর্ব করার মতো অর্জন, যা আমরা সবসময় মনে রাখব এবং যা আমাদের বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণ যাত্রায় নতুন মাত্রা নিয়ে আসবে”।
তিনি আরও বলেন, “বিগত কয়েক বছরে আমরা আমাদের কোর স্ট্র্যাটেজিস, ম্যানেজমেন্ট স্ট্রাকচারস, টেকনোলজি রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট সিস্টেমস, প্রোডাক্ট লাইনআপস, ব্র্যান্ড ডেভেলপমেন্টস এবং অন্যান্য বিষয়গুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নয়ন ও সমন্বয় সাধন করেছি। এই পদক্ষেপগুলি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীদের সাথে কঠিন প্রতিযোগিতার সময়ও শাওমি’কে ক্রমাগত উজ্জল করতে সক্ষম করেছে। এই সম্মান আমাদের সাধনার সমাপ্তি ঘোষণা করে না, বরং এটি কেবল একটি নতুন শুরু। আমাদের দর্শনভঙ্গী অনুযায়ী, আমাদের মি ফ্যান, ব্যবহারকারী ও বিনিয়োগকারীদের জীবন আরো বেশি উপভোগ্য করে তুলতে আমরা সবসময় অনেস্ট প্রাইসে অসাধারণ ও অত্যন্ত উদ্ভাবনী সব পণ্য নিয়ে আসতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ”।
২০১০ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠিত শাওমি মূলত একটি ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) প্ল্যাটফর্ম দ্বারা কানেক্টেড স্মার্টফোন ও স্মার্ট হার্ডওয়্যারসহ ইন্টারনেট কোম্পানি, যা জুন মাসে ফরচুন’স চায়না ৫০০ লিস্টেও ৫৩তম জায়গা করে নেয়।
২০১২ সালে কোম্পানিটির বিক্রয় রাজস্ব ছিল প্রায় ১০,০০০ মিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১,৪৫৩.৭২ মিলিয়ন ইউএস ডলার) এবং ২০১৭ সালে ১০০,০০০ মিলিয়ন ইউয়ান (আনুমানিক ১৪,৫৩৭.২১ মিলিয়ন ইউএস ডলার)।
শাওমি ধারাবাহিকভাবে তার শক্তিশালী কনজ্যুমার ব্র্যান্ড ইকুইটি এবং সম্ভাবনাময় অগ্রগতি সমৃদ্ধ করে চলেছে। তার জন্য কোম্পানির অনন্য ও শক্তিশালী বিজনেস মডেল “ট্রায়াথলন” এবং এর ডুয়েল কোর স্ট্র্যাটেজি “স্মার্টফোন প্লাস এআইওটি” বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে।
চলতি বছরের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসি-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শিপমেন্ট সেলস ভলিউম অনুসারে শাওমি বিশ্বের চতুর্থ স্মার্টফোন ব্র্যান্ড যার বার্ষিক অগ্রগতির হার ৩২.২%। কোম্পানিটি দুই শতাধিক ইকোসিস্টেম কোম্পানীর পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিনিয়োগ করেছে, যাদের অধিকাংশই স্মার্ট হার্ডওয়্যার নির্মাণে বিশেষায়িত। যার ফলাফল শাওমি বিশ্বের সর্ববৃহৎ কনজ্যুমার আইওটি প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ করেছে, যেখানে স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ ব্যাতিত প্রায় ১৭১ মিলিয়ন আইওটি ডিভাইস সংযুক্ত।
শাওমি বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে ৮০টি বাজারে বিস্তৃত। চলতি বছরের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিস এর দেওয়া তথ্য মতে, শিপমেন্ট এর হিসাব অনুযায়ী ৪০টিরও বেশি বাজারের মধ্যে শাওমি সেরা পাঁচে অবস্থান করে নিয়েছিল এবং ৩১.৪% মার্কেট শেয়ার নিয়ে পরপর সাত ত্রৈমাসিক জুড়ে ভারতের সর্ববৃহৎ স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের জায়গা দখল করে আছে। এছাড়াও পশ্চিম ইউরোপের বাজারে দ্রুতগতির অগ্রগতি বজায় রেখেছে, তাও আবার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করার দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে শিপমেন্ট বিবেচনায় র্যাংকিংয়ে চতুর্থ অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে। আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বাজারেও দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
শাওমি নতুন নতুন কার্যকর রিটেইল নেটওয়ার্ক তৈরি ও বিস্তৃত করার জন্য নিবেদিত, যাতে ওভারসীজ মার্কেটগুলোর অনলাইন ও অফলাইন চ্যানেলসমূহও অন্তর্ভুক্ত। ৩১ মার্চ ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত শাওমির ৪৮০টি অনুমোদিত ওভারসীজ হোম স্টোর আছে, যার ১১০টি ইউরোপে এবং ৭৯টি ভারতে অবস্থিত এবং এই স্টোরগুলো থেকে শাওমির বার্ষিক অগ্রগতি ৯৩.৫%।
‘স্মার্টফোন প্লাস এআইওটি’ ডুয়েল কোর স্ট্র্যাটেজির অংশ হিসেবে পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে ‘অল ইন এআইওটি’ উন্নয়ন, ভবিষ্যতে আর্টিফিসিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স ও উন্নয়ন সম্ভাবনেকে পুঁজি সমৃদ্ধ করা এবং আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরির জন্য ১০ বিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগ করছে। এছাড়া কোম্পানি চীনের বাইরে ওভারসীজ বাজারগুলোতেও বিজনেস স্ট্রাটেজি বৃদ্ধি ও সমন্বয় করার মাধ্যমে সাফল্যর পুনরাবৃত্তি করার পরিকল্পনা করছে।
গ্লোবাল ৫০০ হিসেবে পরিচিত ফরচুন গেদ্বাবাল ৫০০ ধারাবাহিকিভাবে ৬৭ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত ৫০০ কর্পোরেশনের বার্ষিক র্যাংকিং করে এবং তা ফরচুন ম্যাগাজিনে প্রকাশ করে। এই তালিকাটি তৈরি করা হয় বিগত অর্থ বছরে কর্পোরেশনের আয় এবং মোট মুনাফার ভিত্তিতে।