রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেডকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার একটি মার্কিন দৈনিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করেছে, হুয়াওয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে এমন একটি চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছে। খবর রয়টার্স।
গত সোমবার ওয়াশিংটন পোস্ট সংশ্লিষ্ট সূত্র ও গোপন নথির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পান্ডা ইন্টারন্যাশনাল ইনফরমেশন টেকনোলজির সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করছে হুয়াওয়ে। তারা অন্তত আট বছর ধরে উত্তর কোরিয়ায় বেশ কয়েকটি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০১৬ সাল থেকেই হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বিষয়ে তদন্ত করছে। পাশাপাশি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক চালিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে চীনা কোম্পানিটি রফতানি নিয়ন্ত্রণ আইনের লঙ্ঘন করেছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এখন নতুন তথ্যটি যদি সঠিক হয়, তাহলে হুয়াওয়ে উত্তর কোরিয়াতে প্রযুক্তি সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রে মার্কিন রফতানি নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করে কিনা সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠবে। কারণ নিজস্ব টেলিকম সরঞ্জামে মার্কিন কোম্পানির সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে হুয়াওয়ে।
এ ব্যাপারে মার্কিন সিনেটর ক্রিস ভন হলেন ও টম কটন এক বিবৃতিতে বলেন, হুয়াওয়ের যে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে তা জানা গেল। পাশাপাশি কোম্পাানিটি মার্কিন আইন লঙ্ঘন করেই চলেছে তা-ও স্পষ্ট।
তারা জানান, কংগ্রেস প্রতিরক্ষা পুনঃঅনুমোদন সম্পর্কিত একটি বিল পর্যালোচনা করছে। পিয়ংইয়ংয়ের ওপর আরো কঠোর অবরোধ আরোপের বিষয়ে এতে নতুন কিছু বিধান যুক্ত থাকবে। বিলে একটি বিষয় পরিষ্কার বলা থাকবে যে কোনো কোম্পানি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করলে, যেমনটি হুয়াওয়ে করছে বলে জানা যাচ্ছে—সেই কোম্পানির বিরুদ্ধেও অবরোধ আরোপ করা হবে।
গত মে মাসে হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে গৃহীত এ সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, কোনো মার্কিন কোম্পানি হুয়াওয়ের কাছে কোনো সরঞ্জাম বিক্রি করতে চাইলে বিশেষ অনুমতি নিতে হবে।
অবশ্য গত মাসেই জি২০ সম্মেলনের সময় চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে হুয়াওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে পরে একটি বিবৃতি দিয়ে তারা ওয়াশিংটন পোস্টকে জানায়, উত্তর কোরিয়াতে তাদের কোনো ব্যবসায়িক উপস্থিতি নেই। পান্ডা গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পত্রিকা।
তবে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ২০১৬ সালে হুয়াওয়ে ও পান্ডা গ্রুপ উত্তর কোরিয়া থেকে তাদের কার্যালয় গুটিয়ে নেয়।
উল্লেখ্য, ফাইভজি নেটওয়ার্ক উন্নয়নে গত সপ্তাহে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে হুয়াওয়ে। রুশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এমটিএসের সঙ্গে এ চুক্তির আওতায় আগামী বছরের মধ্যে রাশিয়ায় পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি অবকাঠামো নির্মাণ ও সেবা চালুর লক্ষ্যে কাজ করবে চীনা কোম্পানিটি।