আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ হচ্ছে অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহার। এজন্য দেশে বৈধভাবে আমদানি করা সেটগুলোর একটি আইএমইআই নাম্বারের তথ্যভাণ্ডার স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্রে জানা গেছে, নকল-অবৈধ আইএমইআই এর মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হলে পরবর্তীতে ন্যাশনাল ইক্যুপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রারের (এনইআইআর) মাধ্যমে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করা হবে। এজন্য মোবাইল ফোন কিনতে আইএমইআই যাচাই ও রশিদসহ ফোন কিনতে পরামর্শ দিয়েছে বিটিআরসি।
সম্প্রতি মোবাইল ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিটিআরসিতে আইএমইআই-সংক্রান্ত একটি তথ্যভাণ্ডার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বৈধভাবে আমদানি করা সকল ফোনের আইএমইআই-সংক্রান্ত তথ্য রাখা হচ্ছে।
আপনার মোবাইল ফোন অবৈধ বা নকল কি-না জেনে নিন
মোবাইল ফোন অবৈধ বা নকল কি-না তা দেখতে যে কেউ ম্যাসেজে KYD টাইপ করে স্পেস দিয়ে ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর দিয়ে সেটি ১৬০০২ নম্বরে পাঠালে ফিরতি এসএমএসে আইএমইআই নম্বরটি বিটিআরসির ডেটাবেজে সংরক্ষিত রয়েছে কি-না তা জানতে পারবেন।
নতুন মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে প্যাকেটের গায়ে লেখা ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর (*#/,. ইত্যাদি বিশেষ চিহ্ন বাদে শুধুমাত্র ১৫টি নম্বর) এবং ব্যবহৃত মোবাইলের ক্ষেত্রে *#০৬# চেপে প্রাপ্ত ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বর পাওয়া যাবে।
সূত্র জানায়, দেশে অবৈধভাবে মোবাইল ফোন আমদানি হওয়ায় সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এছাড়া অবৈধ পথে দেশে আসা এসব হ্যান্ডসেট ক্রয়ে গুণগতমান ঠিক না থাকায় গ্রাহকরাও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার প্রেক্ষিতে বিটিআরসি আইএমইআই ডেটাবেস চালু করছে। আর এ প্রকল্পের পুরো অর্থায়ন করছে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ)।
নীতিমালা অনুযায়ী, প্রত্যেক যাত্রী প্রতিটি বোর্ডিংপাস বা সংশ্লিষ্ট ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজ অনুয়ায়ী বিটিআরসির অনাপত্তিপত্র ছাড়া আটটি মোবাইল ফোন নিয়ে আসতে পারবেন। তবে এসব মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের মধ্যে সর্বোচ্চ দুটি আনা যাবে বিনা শুল্কে। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে কাস্টমস সংশ্লিষ্ট আইন প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া আটটির বেশি মোবাইল ফোন আনার ক্ষেত্রে বিটিআরসি থেকে ‘ভেন্ডর এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ নিয়ে সেগুলো কাস্টমস থেকে খালাস করা যাবে। তবে তা হতে আমদানির তারিখ থেকে এক বছরের মধ্যে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, যারা চোরাই পথে হ্যান্ডসেট আমদানি করে তারা হ্যান্ডসেটগুলোতে বিভিন্ন রকম নকল আইএমইআই ব্যবহার করে। তবে দেশে আইএমইআই ডেটাবেস চালু হলে চোরাই পথে আসা হ্যান্ডসেটগুলোতে একের অধিক আইএমইআই ব্যবহার করতে পারবে না।
তারা আরও বলেন, দেশে আইএমইআই ডেটাবেসের অভাব এবং তা পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায়, গ্রে (চোরাই) মার্কেটে বৃদ্ধি পাচ্ছে অবৈধপথে আসা ফোন বিক্রি। যদিও বিগত বছরগুলোর চেয়ে অবৈধপথে আসা হ্যান্ডসেট আসা কিছুটা কমেছে। তবে এটি পুরোপুরি বন্ধ করতে পারলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, বিভিন্নভাবে হ্যান্ডসেট প্রবেশ করায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটি বন্ধ করতে আইএমইআই ডেটাবেস চালু করা হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ হলে দেশে একদিকে যেমন অবৈধ পথে হ্যান্ডসেট প্রবেশ বন্ধ হবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ের ভূমিকা রাখবে। আইএমইআই হলো মোবাইল ফোনের অপরিহার্য একটি উপাদান। এটি দিয়েই গ্রাহকের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।’
তথ্যমতে, আইএমইআইয়ের একটি ১৫-ডিজিট সিরিয়াল নম্বর আছে, যেটি সব হ্যান্ডসেটে দেওয়া থাকে। এটি বৈধ ডিভাইসগুলো শনাক্ত করার পাশাপাশি কোনো নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস এটি ব্যবহার হচ্ছে বা চুরি হয়েছে সেটিও শনাক্ত করবে এ ডেটাবেস। *#০৬# ডায়াল করলে হ্যান্ডসেটের পর্দায় আইএমইআই নম্বর দেখতে পাওয়া যায়। বিএমপিআইএ’র তথ্যমতে, অবৈধ পথে আসা মোবাইল ফোনের কারণে তাদের সংগঠনের সদস্যরা বাজার হারাচ্ছে। আর ব্যবসায়ীরা গ্রে মার্কেটে মোবাইল অনেক কম দামে বিক্রি করতে পারছেন। ওদের দামের কাছে তারা টিকতে পারছেন না। ফলে তারা বাজার হারাচ্ছেন, আর অবৈধ ব্যবসায়ীদের বাজার বড় হচ্ছে। অবৈধ ফোনগুলোর ওয়ারেন্টি ও সার্ভিস ওয়ারেন্টি না দিয়ে, কম মূল্য হ্যান্ডসেট দিয়ে শুধু সার্ভিস ওয়ারেন্টি অফার করে থাকে। এতে ক্রেতারাও নিজের অজান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আইএমইআই ডেটাবেস তৈরি, নিবন্ধনের ব্যবস্থা এবং প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকলে দেশে অবৈধ পথে মোবাইল ফোনের প্রবেশ বন্ধ হবে।