হাতের মুঠোয় স্মার্টফোন। ফেসবুক, ইন্টাগ্রাম, টুইটার, স্টাপচ্যাট, হাই ফাইভ, ইমোসহ প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ ম্যাধ্যমগুলোতে সক্রিয় থাকছেন বিভিন্ন বয়সের ব্যবহাকারীরা। নোটিফিকেশন আসছে মুহুর্মূহু।
কেউ যাচ্ছেন সিকিম ঘুরতে, কেউ গেছেন বান্দরবানে, কেউবা একটি দামি রেস্তোরাঁয় বসে সুদৃশ্য প্লেটার নিয়ে খেতে বসে পোস্ট দিয়েছেন সম্প্রতি, কেউবা ঘরে মায়ের সঙ্গে বা সন্তানের সঙ্গে বা বন্ধুদের সঙ্গে নিছক চায়ের আড্ডার ছবি পোস্ট দিয়েছেন।
এভাবেই সামাজিক নেটওয়ার্কে শতশত কনটেন্ট পোস্ট হচ্ছে। আপনি হয়তো অফিসের জরুরি মিটিংয়ে বা বাসে রোড পার হচ্ছেন। অথবা খুবই জরুরি কোনো কাজে আছেন আর একটু পরপর নোটিফিকেশন পেয়ে মুঠোফোনটি খুলে দেখছেন আর কখনও বা রিপ্লাই দিচ্ছেন। দিচ্ছেন লাইক, শেয়ার বা কমেন্ট।
একবার ভেবে দেখেছেন স্মার্টফোনের এ প্রবণতায় কী হচ্ছে আপনার মনোযোগের অবস্থা? কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আপনার ধীশক্তি? কোনো প্রসঙ্গের গভীরে যেয়ে সুষ্ঠু চিন্তাভাবনা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কি হারিয়ে ফেলছি না আমরা এ অতি ডিজিটাল নেটওয়ার্কিং প্রবণতায়?
সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তিকে কিছুদিন আগে ইউরোপীয় গবেষকরা নেশার সবচেয়ে মারাত্মক রূপ, নিকোটিনের নেশা থেকেও মারাত্মক বলে অভিহিত করেছেন।
একজন ডিজিটাল আটিংস্টকে দেখলাম, একটি পেইন্টিংয়ে হেরোইনের নেশার সঙ্গে তুলনা করে ছবি এঁকেছেন। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিনিয়ত শোডাইনের এ প্রবণতায়, নতুন প্রজন্মের মধ্যে মেকি বা মিথ্যা প্রচারের প্রবণতা বাড়ছে। বাড়ছে বাস্তব জীবনে সামাজিক আচার ব্যবহারের প্রবণতা বা চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার ক্ষমতা।
একদিকে ডিজিটাল স্ক্রিনের নীল আলোয় চোখের ক্ষতি, অপরদিকে কিছুক্ষণ পরপর মনোযোগ সরে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রবণতায় বাস্তব থেকে পলায়নপর এ প্রজন্মের প্রতি এখন বিরক্ত অনেকেই।
কেননা, তাদের কিছু বললে তারা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে বা মোবাইলের স্ক্রিনে মনোযোগ রেখে কথা শোনে। আবার, এক কথা তাদের বারবার বলতে হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে কর্মক্ষেত্রে।
ব্রিটিশ লেখক এমিপোর্টফিল্ড, সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেইনার ও বক্তা। তিনি এক জরিপে পেয়েছেন, ৫৬ শতাংশ ব্যবহারকারী প্রতিদিন কমপক্ষে দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন। ৪০ শতাংশ ব্যবহারকারী কমপক্ষে ৪ ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন। তাদের মধ্যে ৩২ শতাংশ বলেন, তারা ৫-৬ ঘণ্টাও সময় ব্যয় করেন।
এমনকি খেতে খেতে ও ফেসবুক ব্যবহার করেন। ৭ শতাংশ বলেছেন, তাদের প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতেও সময় ব্যয় করে থাকেন। তিনি আরও দেখেছেন, পেশাজীবীদের মধ্যে ২২ শতাংশ পুরুষ ও ১১ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে মিটিংয়ের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া চেক করেন।
২৯ শতাংশ পুরুষ ও ২৭ শতাংশ নারী খাবার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া চেক করেন। ১১ শতাংশ পুরুষ ও ৬ শতাংশ নারী শিকার করেছেন তাদের ঘনিষ্ঠজনদের সান্নিধ্য কালীন সোশ্যাল মিডিয়া চেক করেন।
তবে এর বাইরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিপক্ষে কিছু মানুষ অন্তত পেয়েছেন, যারা ক্যারিয়ার ফোকাসড বা নিজস্ব ব্যবসাবাণিজ্য বা একাডেমিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। তারা মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাইরে থাকাটাই শান্তির।