ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যারা বিরোধীতা করেছে, যারা ১৫ আগস্টের নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে তারাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। এই অপশক্তি দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে বাংলাদেশকে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক এবং নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে চায়, বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়। তিনি হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এই শত্রæদের আর বাড়তে দেওয়া যাবে না।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় বিটিআরসি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিটিআরসি আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পৃথিবীর ইতিহাসে একজন বিরল মানুষ আখ্যায়িত করে ইতিহাসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে যে জাতি রাষ্ট্রগুলো তৈরি হয়েছে তার প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকে জাতির পিতা, কায়েদে আজম কিংবা জাতির জনক এই সব বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সাথে তাদের পার্থক্য অনেক।
তিনি বলেন, তাদের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পার্থক্য হচ্ছে হাজার বছর বাঙালি পরাজিত ছিল- পরাধীন ছিল। যে জাতির অস্তিত্ব নানাভাবে নানা সময়ে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছিল, নানা পরিচয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু সেই জাতিটাকে সুদীর্ঘ সময় জুড়ে সমন্বিত করে, তাদের একত্রিত করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র তিনি করে দিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, আমরা প্রত্যেকে জীবনে অনুসরণ করার জন্য আদর্শ মানুষ খুঁজি। আদর্শ খুঁজতে হলে, কাউকে অনুসরণ করতে হলে তিনি একজন শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু তার মানুষকে যেমন ভালবাসতেন এদেশের মানুষও তাঁকে ভালবেসেছেন। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে বাংলার এমন কোন বাড়ী ছিল না যখন আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বলেছি মা আমরা খাই নাই, এমন কোন মা ছিল না যে মা তাঁর নিজের খাবার আমাদের খেতে দেয় নাই। আমার মাসহ এই বাংলার হাজার হাজার মাকে জানি, যে মায়েরা বঙ্গবন্ধুর জন্য ৯ মাস রোজা রেখেছেন বলে উল্লেখ করেন মোস্তাফা জব্বার।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী , আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপান্তরের জন্য যে পদক্ষেপ গ্রহণের দরকার, তার ভিত্তি বঙ্গবন্ধু রচনা করে গেছেন উল্লেখ করে বলেন, যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়েও বঙ্গবন্ধ দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে ছিলেন। আন্তর্জাতিক কানেক্টটিভিটির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি ১৯৭৩ সালে বৈশি^ক টেলিকম সংস্থা আইটিইউ এর সদস্যপদ অর্জন এবং বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভ’- কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার হার শতকরা ২০ ভাগ থেকে আজ ৭৩ উন্নীত হয়েছে।
দেশে নারী শিক্ষা শতকরা শূন্য ভাগ থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন শতকরা ৫৩ ভাগ নারী শিক্ষার্থী অন্তভ’ক্ত হয়েছে। পঁচাত্তরের পর থেকে একটানা দীর্ঘ একুশ বছর বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানানোর জন্য যারা সক্রিয় ছিল তাদের দিন এখনো শেষ হয়নি। তারা ছদ্মবেশে বেশে সুযোগের অপেক্ষায় ঘাপটি মেরে বসে আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশ শব্দের সমার্থক শব্দ বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ নামের সমার্থক শব্দ শেখ হাসিনা। এই দুটি নাম এক সাথে মিলে গেছে। এই দুইয়ের মিলিত ¯্রােতধারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আমাদের হাতিয়ার হচ্ছে ডিজিটাল প্রযু্ক্তি।
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ গত দশ বছরে তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসুরি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে। তিনি বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে শীর্ষে। এডিবি‘র মতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮দশমিক এক সেখানে পাকিস্তানের তিন দশমিক ৯। তিনি বলেন, প্রতিটি উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে অনেক অনেক ্এগিয়ে। বাংলাদেশ বিশ^ অর্থনৈতিক সূচকেও অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। ক্রয় ক্ষমতার দিক থেকে বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান ৩২তম অর্থনৈতিক সক্ষমতার দিক থেকে ৪২তম বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহীত ভিশন ২০২১, ভিশন ৪১ এবং ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং রাষ্ট্র দর্শনের এক অভাবনীয় উদ্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশ থাকলে বাংলাদেশ নিরাপদ থাকবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো: জহুরুল হক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বস ব্ক্তৃতা করেন ।