মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ি প্রতিবছর আমদানির প্রায় ৩০-৪০ ভাগ হ্যান্ডসেট আমদানি হচ্ছে অবৈধ পথে। গ্রে মার্কেট নিয়ন্ত্রণে দেশে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও মোবাইল ফোনে এই নকল মার্কেট কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
বাংলাদেশের বাজারে শাওমি ব্রান্ডের ফোন ঢোকার পর এবং একই সাথে জনপ্রিয় হবার পর Unofficial Device ব্যাপারটির সম্পর্কে এখন প্রায় সবাইকেই কমবেশি সমস্যার মুখে পড়তে হয়। বিশেষ করে আপনি যদি টেকনিক্যাল জগতে তেমন একটা এক্সপার্ট না হয়ে থাকেন এবং নতুন স্মার্টফোন কিনতে যান তখন এই অফিসিয়াল / আনঅফিসিয়ালের একটি ধাঁধার মধ্যে পড়তে পারেন আপনি। নতুন ডিভাইস কিনতে গিয়ে যে রকম দ্বিধায় পড়েছে এই অফিসিয়াল / আনঅফিসিয়ালের ব্যাপারে তা বলার মতো না।
অফিশিয়ালি কিনেন তাহলে তাদের অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি পাবেন এবং পরবর্তীতে ফোনের কোন সমস্যা হলে ফ্রিতেই ফোনটি সার্ভিসিং করাতে পারবেন এবং আনঅফিসিয়াল ফোন গুলো কিনলে এবং পরবর্তীতে কোন প্রবলেম হলে সেই ফোনের অফিশিয়াল গ্যারান্টি আর থাকে না । দেশে শাওমি ব্রান্ডের ফোন কিনে সব থেকে বেশি সমষ্যায় পড়েছেন আনঅফিসিয়াল ফোন কিনে।
রাজিব হোসেন নামে এক জন্য বলেন , গত দুই মাস আগে আমি শাওমি ব্রান্ডের আনঅফিসিয়াল নোট ৭ ফোনটি বসুন্ধরায় সিটি শপ থেকে ক্রয় করি । আমার ফোনটিতে এখন ডিসপ্লে কাজ করছে না ।দোকানটিতে নিয়ে গেলে বলে ডিসপ্লে পরিবর্তন করতে হবে টাকা লাগবে । কিন্তু কিনার সময় বলেছিল ১ সার্ভিসিং ওয়ারেন্টি আছে ।
তানভীর নামে এক জন্য শাওমি ব্যবহারকারী বলেন, মোবাইল চার্জ এ দিলে কানেক্ট হয় আবার সাথে সাথে ডিসকানেক্ট হয়ে যায়,,আবার কানেক্ট হয় আবার ডিসকানেক্ট হয়ে যায়। দোকানটিতে নিয়ে গেলে বলে কবে নিয়েছেন সার্ভিসিংয়ে টাকা লাগবে । তিনি বলেন ফোনটি কিনার পর থেকে কোন না কোন সমষ্যা লেগেই আছে । আমি আনঅফিসিয়াল ফোন গুলো না ক্রেনার জন্য সবাই কে অনুরোধ করব ।
বিটিআরসির সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, (আগস্ট ২০১৯) ১ তারিখ থেকে নকল-ক্লোন আইএমইআইর মোবাইল হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হলে পরবর্তী সময়ে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রারের (এনইআইআর) মাধ্যমে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করা হবে। সম্প্রতি মোবাইল ইম্পোটার্স অ্যাসোশিয়েশনের পক্ষ থেকে বিটিআরসিতে স্থাপন করা হয়েছে আইএমইআই সংক্রান্ত একটি ডেটাবেইজ। সেখানে মোবাইল ফোন অপারেটরদের আমদানি করা সব ফোনের আইএমইআই সংক্রান্ত তথ্য রাখা আছে।
সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে আনঅফিসিয়াল ও নকল ফোনে বলে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে । এইসব আনঅফিসিয়াল ও নকল ফোনে কারণে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভবিষ্যতে তা দেহের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
দেশে এবং দেশের বাইরে যে সকল শাওমি ফোন বিস্ফোরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বেশি ভাগ ফোনই আনঅফিসিয়াল ও নকল ফোন ছিল বলে জানা গেছে ।
ভারতে শাওমির মোবাইল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির কনজ্যুমার কমপ্লেয়েন্টস নামে একটি ওয়েবসাইটে প্রেমালতা নামে এক ভুক্তভোগী এ অভিযোগ তুলেছিলেন। ওই ভুক্তভোগীর দাবি, কিছুদিন আগে তার শাওমির রেড মি নোট ৪ মডেলের হ্যান্ডসেটটি বিস্ফোরিত হয়। শাওমির রেড মি নোট ৪ মডেলের হ্যান্ডসেটটি অননুমোদিত ছিল বলে জানিয়েছিল শাওমি ।
নারায়নগঞ্জে শাওমি মোবাইল ফোন বিস্ফোরণের একটি অভিযোগ পাওয়া যায়। জাহাঙ্গীর আলম সোহাগ নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী জানান,“সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি শাওমি ফোন সেট হতে সাবধান আমাদের সকলের খুব পরিচিত মুখ খলিল ভাই এর মোবাইল ফোনটি আজ সকালে পুড়ে যায় যা আপনারা ছবিতে দেখতে পারছেন। মোবাইল ফোনটি দুই মাস আগে কেনা হয়।” হ্যান্ডসেটটি অননুমোদিত ছিল গ্রে মার্কেটের ছিল বলে জানা গেছে ।
ফেনীতে শাওমির পোকো এফ ১ ফোন বিস্ফোরণ হয়ে স্বপ্নীল মজুমদার (১৭) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। নিহত মজুমদার স্বপ্নীল ঢাকা আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। শাওমির পোকো এফ ১ ফোন অননুমোদিত ছিল বলে জানিয়েছিল শাওমি ।
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী, কান্ট্রি জিএম, শাওমি বাংলাদেশ, এ সম্পর্কে বলেন, শাওমিতে পণ্যের গুণগত মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। আমরা নিশ্চিত করি যে, আমাদের পণ্যগুলি সর্বোচ্চ মানে তৈরি কিনা তা নিশ্চিত করতে কঠোর মানের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। তবে, অবৈধভাবে দেশের বাজারে যেসব পণ্য আসে সেগুলোর গুণগত মান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঠিক থাকে না। অবৈধভাবে আসা পণ্য কিনে থাকলে সেসব পণ্য ব্যবহারে অনেক সময় নানান দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে, সেক্ষেত্রে ঐ পণ্যের ব্র্যান্ডকে দায়ী করা একেবারেই অনুচিত হবে।
গতকাল বরিশালে ঘটে যাওয়া ঘটনা তদন্ত করতে আমরা বরিশালের ঐ ব্যবহারকারীর সাথে যোগাযোগ করেছি এবং জানতে পেরেছি তিনি যে ফোনটি ব্যবহার করছিলেন, তা অননুমোদিত ছিল। পণ্যটি নকল কিনা তাও খতিয়ে দেখতে আমরা আরও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। ব্যবহারকারীর সর্বোত্তম সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা আমাদের গ্রাহকদের সবসময়ই অনুমোদিত পণ্যগুলি কিনতে অনুরোধ করে থাকি। আমরা এটাও বলতে চাই, যে ঘটনাগুলি ঘটছে সেগুলো সাধারণতা অবৈধভাবে আসা ফোন কেনার অভ্যাসের কারণেই ঘটছে এবং সবার ঘটে যাওয়া এসব দুর্ঘটনা এড়াতে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া উচিত।