বাংলাদেশে প্রায় ৫৫.৫ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত ধানের বেশিরভাগই শুকানো হয় রোদে। এতে ধানকে চাল এবং চালকে ভাত করে খাবার টেবিলে পৌঁছাতে প্রায় ১৪ ভাগ ধানের অপচয় হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে ধান শুকানো অনেকটা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। তা ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ধান শুকাতে প্রচুর দুর্ভোগও পোহাতে হয়।
এ পরিস্থিতিতে ‘বাউ-এসটিআর’ নামে ধান শুকানো যন্ত্র দিয়ে মাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টায় ৫০০ কেজি পর্যন্ত ধান শুকানো সম্ভব। বিদ্যুৎ ব্যবহারে এই যন্ত্রে এক মণ ধান শুকাতে খরচ হবে মাত্র ২৮ টাকা। আর জ্বালানি তেল ব্যবহারে খরচ পড়বে ৩৩ টাকা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত কর্মশালায় উদ্ভাবিত যন্ত্রের কর্মদক্ষতা সম্পর্কে এসব কথা বলেন গবেষক মো. মঞ্জুরুল আলম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলনকক্ষে গতকাল বুধবার ‘সাসটেইনেবল অ্যাগ্রিকালচার মেকানাইজেশন অ্যান্ড পোস্টহারভেস্ট প্রাকটিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে গবেষক মঞ্জুরুল আলম বলেন, স্বল্প খরচে কম সময়ে বিপুল পরিমাণ ধান শুকাবে বাউ-এসটিআর নামের যন্ত্রটি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ যন্ত্র পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার হয়েছে। এতে ধানবীজের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতাও পাওয়া গেছে প্রায় ৯০ ভাগ। এখন এ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা দরকার। এতে চালের উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কমে যাবে।
কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. নুরুল হকের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এম এ সাত্তার মণ্ডল। প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুল হাসান।
কর্মশালার বৈজ্ঞানিক সেশনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুস সাত্তার ও মো. আবদুল আওয়াল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বি কে বালা, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের মুখ্য প্রকৌশলী মো. লুৎফুর রহমান।
প্রধান অতিথি সাত্তার মণ্ডল বলেন, আগে বিদেশ থেকে আনা যন্ত্রের গুণগত মান পরীক্ষা করা হতো না। এখন এ বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখা হচ্ছে। দেশে অনেক ভালো, টেকসই ও সাশ্রয়ী যন্ত্র উদ্ভাবন করা হচ্ছে। এতে আমদানিনির্ভরতা কমলেও প্রযুক্তি সম্প্রসারিত হচ্ছে না। প্রযুক্তিগুলো কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।