প্রায় নয় বছর আগে দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা হিসেবে যাত্রা শুরু যশোরের। সেই জেলার ১২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ অব্যবহূত থাকছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব বিদ্যালয়ের মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তবে তদারকির অভাব, অদক্ষতা ও বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক বিদ্যালয়ে শুরু থেকেই মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহূত হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার আধুনিকায়ন ও শিশুদের ক্লাসে মনোযোগী করতে যশোর জেলার ১ হাজার ২৮৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭১২টির শ্রেণীকক্ষে মাল্টিমিডিয়া সুবিধা দেয়া হয়। তবে শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই, এমনকি বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, এমন বিদ্যালয়েও মাল্টিমিডিয়া উপকরণ দেয়ায় সেসব কোনো কাজে আসছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১২৩টি বিদ্যালয়ের মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট থাকায় এসব বিদ্যালয়ের ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম চলছে না। এর মধ্যে অভয়নগর উপজেলায় ৫০টি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষের মধ্যে ১০টি, কেশবপুরে ৭০টির মধ্যে ১৬টি, চৌগাছায় ১৩৮টির মধ্যে ১১টি, ঝিকরগাছায় ১১৩টির মধ্যে ১৪টি, বাঘারপাড়ায় ৮২টির মধ্যে ২১টি, মণিরামপুরে ৪৩টির মধ্যে ২৭টি, শার্শায় ১২২টির মধ্যে নয়টি এবং সদর উপজেলার ৯৪টি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষের মধ্যে ১৫টি অকেজো হয়ে আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, মাল্টিমিডিয়া পাঠদানের কাজে ব্যবহূত ল্যাপটপ সাধারণত প্রধান শিক্ষকের বাসায় থাকে। অনেক বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ নেই। চার্জ দেয়ার জন্য শিক্ষকরা ল্যাপটপ বাসায় নিয়ে যান। অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আইসিটি প্রশিক্ষণ দেয়ার আগেই ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, এমন বিদ্যালয়েও দেয়া হয়েছে। এখন তারা ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঘারপাড়া খাজুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপনের আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে প্রায় ছয় মাস ধরে সেগুলো পড়ে আছে। বিদ্যালয়ের আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নাসরিন আক্তার কেয়া জানান, নষ্ট ল্যাপটপ ও প্রজেক্টরের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এখানে শিক্ষার্থীদের একদিনের জন্যও মাল্টিমিডিয়া পাঠদান সম্ভব হয়নি।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সালমা আহমেদ জানান, ল্যাপটপ নষ্ট থাকায় তারা এখনো ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি।
একই অবস্থা মণিরামপুর উপজেলার উত্তর জয়পুর বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসকে অনেকবার জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম বলেন, ১২৩টি বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে পাঠদান করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে ৭৭টি বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ এবং ৪৬টি বিদ্যালয়ের প্রজেক্টর নষ্ট হয়ে গেছে।
শিক্ষা কর্মকর্তার অভিযোগ, বিভিন্ন সময় শ্রেণী শিক্ষকদের আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। তার পরও তাদের অযত্ন ও অবহেলার কারণেই মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জামগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।
তবে নষ্ট সরঞ্জাম ও যেসব বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ নেই, সেগুলোর একটি তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন বলে জানান শেখ অহিদুল আলম। দ্রুতই সব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন তিনি। সুত্র:বণিক বার্তা