বিজ্ঞাপনের স্বার্থে গ্রাহকদের ফোন নম্বর ও ই-মেইল আইডি ব্যবহার করেছে টুইটার। যদিও এসব তথ্য ব্যবহারকারীরা অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তায় টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের জন্য ব্যবহার করেছিল। সম্প্রতি এক ব্লগ পোস্টে এ তথ্য স্বীকার করে গ্রাহকদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। টুইটারের দাবি, শুধু বিজ্ঞাপনের স্বার্থে গ্রাহকদের এসব ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে এবং এখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু করা হয়নি। তৃতীয় কোনো পক্ষের হাতেও এসব তথ্য তুলে দেয়া হয়নি। খবর রয়টার্স ও বিবিসি।
অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ফোন নম্বর ও ই-মেইল আইডি সংগ্রহ করে থাকে টুইটার। এসব ফোন নম্বর ও ই-মেইল আইডি প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে। ব্লগ পোস্টে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর ও ই-মেইল আইডি বিজ্ঞাপনের স্বার্থে ব্যবহারের ঘটনা নজরে এসেছে। এটা বড় একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভুল। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ভুলের জন্য টুইটার কর্তৃপক্ষ আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা হবে। তাছাড়া ১৭ সেপ্টেম্বরের পর ফোন নম্বর ও ই-মেইল শুধু নিরাপত্তার স্বার্থেই সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তবে কতসংখ্যক ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর ও ই-মেইল আইডি বিজ্ঞাপনের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে, সে বিষয়ে টুইটার সুস্পষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, গ্রাহকদের ফোন নম্বর ও ই-মেইল আইডি টুইটারের কাছেই নিরাপদে সংরক্ষণ করা আছে। তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে এসব তথ্য হস্তান্তর করা হয়নি।
নিরাপত্তা নিয়ে টুইটার নিয়ে বিতর্ক এটিই প্রথম নয়। কয়েক বছর ধরেই মাইক্রো ব্লগিং সাইটটির পিছু ছাড়ছে না বিতর্ক। সর্বশেষ গত মাসে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জ্যাক ডরসির অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়ে বর্ণবাদী পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর এসএমএসের মাধ্যমে টুইট করার ফিচার বন্ধ করে দেয়া হয়।
এমন ধারাবাহিক ঘটনার মধ্যে গত বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির ৩৩ কোটি গ্রাহককে তাত্ক্ষণিকভাবে পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের পরামর্শ দেয়া হয়। ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড প্রকাশ হয়ে যাওয়ার একটি ত্রুটি শনাক্ত হওয়ার পর এ পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া ফোন নম্বর ফাঁস হয়ে যাওয়ার নিরাপত্তা ত্রুটি জানার পরও প্রায় দুই বছর পর কোম্পানির পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়।
এটিই শেষ নয়, ২০১৭ সালের শুরুর দিকে কয়েক হাজার টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে একজন তুর্কি হ্যাকার নািসবাদী টুইট পোস্ট করেন। এ ঘটনার জন্য টুইটারের কাউন্টার অ্যাপের নিরাপত্তা ত্রুটিকেই দায়ী করা হয়। আর ২০১৫ সালে রুশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় হ্যাকাররা মার্কিন সরকার ও প্রতিরক্ষা শিল্পের টুইটার নেটওয়ার্ক হ্যাক করে এবং ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে দেয়।
সর্বশেষ ঘটনায় সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনকে অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তায় অন্যতম নির্ভরযোগ্য কৌশল বলে বিবেচনা করা হচ্ছিল, সেটি দ্বিতীয়বারের মতো প্রশ্নবিদ্ধ হলো। এর আগে ফেসবুকও এ অথেনটিকেশন সিস্টেমের ব্যবহূত মোবাইল নম্বরের অপব্যবহারের কথা স্বীকার করেছে।
উল্লেখ্য, টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা টুএফএ হলো পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তার আরেকটি স্তর। যেখানে তৃতীয় কোনো অ্যাকাউন্ট বা ফোন নম্বরের মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করার কাঙ্ক্ষিত অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। আধুনিক বায়োমেট্রিক হলো এক্ষেত্রে তৃতীয় স্তর।