স্যামসাং ডিসপ্লে নতুন আঙ্গিকের আরো উন্নত ‘কোয়ান্টাম ডট’ ডিসপ্লে উৎপাদনে বিদ্যমান কারখানা এবং একটি উৎপাদন লাইন হালনাগাদে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার (১৩ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ওন) বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে এ অর্থ বিনিয়োগ করবে প্রতিষ্ঠানটি। গত বৃহস্পতিবার স্যামসাং ডিসপ্লের পক্ষ থেকে নতুন এ বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। খবর রয়টার্স।
দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং ইলেকট্রনিকস কোম্পানি লিমিটেডের ডিসপ্লে উৎপাদন বিভাগ স্যামসাং ডিসপ্লে, যা প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের বিভিন্ন ডিভাইসের অন্যতম ডিসপ্লে সরবরাহকারী। টেলিভিশন এবং স্মার্টফোনের মতো ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের ডিসপ্লের বৈশ্বিক চাহিদা পূরণে ডিসপ্লে কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন বিনিয়োগের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৫ সালের মধ্যে এ বিনিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে জানানো হয়েছে।
মোবাইল ডিভাইস, বিশেষ করে সেলফোন ও পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ ডিসপ্লে। বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যে এখন অর্গানিক লাইট এমিটিং ডায়োড (ওএলইডি) ডিসপ্লে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। তবে লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লের (এলসিডি) চাহিদাও রয়েছে। ওএলইডি কিংবা এলসিডি যে ধরনের হোক আল্ট্রা-ক্লিয়ার ডিসপ্লে ব্যবসাকে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ব্যবসায় সুযোগ হিসেবে দেখছে স্যামসাং ডিসপ্লে। যে কারণে বিদ্যমান কারখানায় ডিসপ্লে প্যানেল উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন বিনিয়োগের এ পরিকল্পনা।
বৈশ্বিক এলসিডি ডিসপ্লে বাজার খারাপ সময় পার করছে। কারণ টেলিভিশন এবং স্মার্টফোনে এলসিডি ডিসপ্লের ব্যবহার কিছুটা কমেছে। চীনভিত্তিক ডিসপ্লে নির্মাতাদের কারণেও বাজারটিতে চাপে রয়েছে স্যামসাং ডিসপ্লে। বিদ্যমান পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ডিসপ্লে কারখানায় বড় অংকের বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়েছে স্যামসাং ডিসপ্লে।
বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিপণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান ডিভাইস চাহিদার কথা বিবেচনা করে অনেক প্রতিষ্ঠান ডিসপ্লের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। স্যামসাং ডিসপ্লে এর মধ্যে অন্যতম। বৈশ্বিক ডিসপ্লে বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠানটির। এলসিডি এবং ওএলইডি ডিসপ্লে বাজারে আধিপত্য ধরে রাখতে এরই মধ্যে কারখানা স্থাপনে বড় অংকের বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এবার বিদ্যমান কারখানায় নতুন আঙ্গিকের আরো উন্নত কোয়ান্টাম ডট ডিসপ্লে উৎপাদন বাড়াতে নতুন করে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি বছর বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে সরবরাহ ঘাটতির কারণে ডিসপ্লের চাহিদা কিছুটা কমেছে। তবে স্মার্টফোনের জন্য ডিসপ্লের চাহিদা কমলেও টিভি কিংবা অন্যান্য ডিভাইসের ডিসপ্লের চাহিদা বাড়ছে।
বিবৃতিতে স্যামসাং জানিয়েছে, তারা মোট ছয়টি ডিসপ্লে কারখানা পরিচালনা করছে। এর মধ্যে একটি এলসিডি ডিসপ্লে প্যানেল উৎপাদন কারখানা রয়েছে। গত মাসে একটি এলসিডি ডিসপ্লে উৎপাদন লাইন বন্ধ করা হয়েছে। আরো উন্নত ডিসপ্লে প্যানেল উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কোয়ান্টাম ডট প্রযুক্তির ডিসপ্লে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগের অর্থ ব্যয় করা হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক স্মার্টফোন ডিসপ্লে প্যানেল বাজারে চীনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের কারণে তীব্র প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে স্যামসাং ডিসপ্লেকে। অন্যদিকে স্থানীয় বাজারে ওএলইডি ডিসপ্লের চাহিদা বাড়লেও টিভির মতো বড় ইলেকট্রনিকস পণ্যে এলসিডি ডিসপ্লের চাহিদা কমেছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন আঙ্গিকের ডিসপ্লে উৎপাদনে জোর দিচ্ছে স্যামসাং ডিসপ্লে।
গত আগস্টে এক বিবৃতিতে স্যামসাং ডিসপ্লে জানায়, তারা স্থানীয় বাজারে নিজেদের একটি এলসিডি ডিসপ্লে প্যানেল উৎপাদন কারখানা বন্ধের বিষয়ে ভাবছে। কারণ বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে ওএলইডি ডিসপ্লেসংবলিত ডিভাইসের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। কারখানাটি গত মাসে বন্ধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
স্যামসাং ইলেকট্রনিকস জানিয়েছে, ডিসপ্লে ব্যবসা তাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ। গত এপ্রিল-জুন প্রান্তিকেও ডিসপ্লে বিভাগের ব্যবসা পরিসর বাড়াতে তারা ৫০ হাজার কোটি ওন বিনিয়োগ সম্পন্ন করেছে।
২০১০ সালে প্রথমবারের মতো স্যামসাং তাদের স্মার্টফোনে ফুলস্ক্রিন অ্যাক্টিভ-ম্যাট্রিক্স অর্গানিক লাইট এমিটিং ডায়োড (এএমওএলইডি) ব্যবহার করে সাড়া ফেলেছিল। ক্রমে স্মার্টফোন নির্মাতাদের নজর কাড়ে এ ডিসপ্লে প্যানেল। এর ফলে প্রায় সব ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনে এএমওএলইডি ডিসপ্লে প্যানেলের ব্যবহার শুরু হয়।
২০১৮ সালে স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাংয়ের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপলও তাদের আইফোনে ওএলইডি ডিসপ্লে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ওএলইডি ডিসপ্লের জন্য স্যামসাং ডিসপ্লের দ্বারস্থ হয় মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি।