বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগলের কার্যক্রম নিয়ে কর্মীদের আস্থার সংকট তীব্র হচ্ছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির গৃহীত কয়েকটি উদ্যোগের বিরুদ্ধে কর্মীদের বিক্ষোভে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এবার অনলাইনে প্রকাশিত এক অডিও রেকর্ডিংয়ে ইস্যুটি নিয়ে গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুন্দর পিচাইয়ের উদ্বেগের বিষয়টি সামনে এসেছে। ওই অডিওতে সুন্দর পিচাইকে বলতে শোনা যায়, গুগলকে কর্মীদের আস্থা সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে লড়াই করতে হচ্ছে। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট।
সাম্প্রতিক সময় গুগল নানা ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। কর্মীবাহিনীতে বৈচিত্র্যহীনতা এবং মানবাধিকার ও নীতি-নৈতিকতা বর্জন করে চীনে বিশেষ সার্চ ইঞ্জিন চালুর ‘ড্রাগনফ্লাই’ প্রকল্প হাতে নেয়ায় সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয় প্রতিষ্ঠানটি। দুদিন আগেও একটি ডিজিটাল সার্ভিলিয়েন্স টুল নিয়ে কর্মীদের তোপের মুখে পড়ে গুগল। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের অভিযোগ, বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ ঠেকানো এবং শ্রম ও শ্রমিকসংশ্লিষ্ট সমাবেশে অবৈধভাবে হস্তক্ষেপের লক্ষ্যে নতুন সার্ভিলিয়েন্স টুল উন্নয়ন করা হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় নীতিমালার পরিপন্থী।
অনলাইনে প্রকাশিত অডিওতে সুন্দর পিচাইকে বলতে শোনা যায়, গুগল বেশকিছু কর্মীর আস্থা ভেঙেছে। কর্মীর আস্থা সংকট ছাড়াও আরো কিছু ইস্যু নিয়ে আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে। কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়েও সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
গত আগস্টে কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের আচরণ কেমন হবে, সে বিষয়ে কঠোর নীতিমালা প্রকাশ করে গুগল। যেখানে কর্মক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে আলোচনা না করতে সতর্ক করা হয়েছিল। এছাড়া গুগলের কর্মকাণ্ড ঘিরে কর্মীদের নিজেদের মধ্যে বিতর্কে না জড়ানোর কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়।
গুগলের নতুন নির্দেশিকায় প্রায় এক লাখ কর্মীর উদ্দেশে বলা হয়, অফিসে বসে আর খোলামেলা রাজনৈতিক আলোচনা নয়। কাজের বাইরের বিষয়ে তর্কবিতর্ক বন্ধ করতে হবে। এমনকি কোনো কর্মীর নাম নিয়ে তাকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ বা উত্ত্যক্ত করার অভ্যাস থাকলে তাতে দাঁড়ি টানতে হবে। তবে কাজ-সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা চলতে পারে। কর্মীদের কটু মন্তব্য বা বেসামাল আচরণ দেখলে, তা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
গুগল আকস্মিক কর্মক্ষেত্রে কর্মীর আচরণ নিয়ে নতুন নীতিমালা প্রকাশ করেছিল কেন? সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, ওই পদক্ষেপ প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে নেয়া হয়েছিল। কারণ নানা কারণে তীব্র সমালোচনায় পড়েছে গুগল। এসবের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের পাশাপাশি প্লাটফর্মে ভুল তথ্য পরিবেশন করার অভিযোগ রয়েছে।
বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে হোয়াইট হাউজের তোপের মুখে পড়ে গুগল। প্রতিরক্ষা-বিষয়ক নীতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে গুগল কর্মীরা খোলামেলা সমালোচনা করেন, এমন অভিযোগও উঠেছিল। যে কারণে অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতি ঢেলে সাজাতে কর্মী বাহিনীর জন্য নতুন নির্দেশিকা জারি করে গুগল।
গুগলের গত আগস্টের বিবৃতিতে বলা হয়, অনেক কর্মী জানতে চান, প্রতিষ্ঠানের কী করা উচিত বা উচিত না। দেখুন আমাদের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো, যে কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে, তা যথাযথভাবে পালন করা। কাজের সময় তার বাইরের কোনো বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্ক করে অযথা সময় নষ্ট করা নয়। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো বিষয়ে আলোচনা করা থেকে বিরত থাকুন, যা প্রতিষ্ঠানের নীতিবিরোধী কিংবা ক্ষতিকর। গুগলের কর্মী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এসে বর্তায় আমাদের ওপর। কারণ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন নির্ভুল ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের জন্য আমাদের ওপর নির্ভরশীল। কাজেই সবার জন্য গুগলপণ্য ও সেবার মান বজায় রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কমিউনিটি গাইডলাইনে পরিবর্তন আনার আগে গুগলের অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠানটির ধ্বংসের কারণ বলে উল্লেখ করেছিলেন সাবেক সিইও এরিক শিমিড। তার ভাষ্যে, অতীতের চেয়ে এখন বেশি সমালোচিত হচ্ছে গুগল। এর প্রধান কারণ নীতিভ্রষ্ট প্রতিভাকে প্রতিষ্ঠানটির স্বীকৃতি দান। তবে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এ ধরনের প্রতিভাকে এড়িয়ে চলারও উপায় নেই। নিজস্ব ব্র্যান্ডের পণ্যের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে অনেক নীতিভ্রষ্ট কর্মীকে ধরে রাখতে হয়। এতে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠান লাভবান হলেও সুনাম নষ্ট হয়, যা একটি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডমূল্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।