এক দিনে সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি ফ্যান বিক্রি করলো ওয়ালটন গ্রুপ। এর মধ্যে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের আওতায় পৌণে তিন লাখ এবং মার্সেল ব্র্যান্ডের আওতায় ৮৫ হাজার ৫’শ ইউনিট ফ্যান বিক্রি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি- একদিনে দেশের বাজারে এতো ফ্যান বিক্রি আর কখনো হয়নি। অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় ওয়ালটন ও মার্সেল ফ্যানে বাতাস বেশি, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, টেকসই এবং দামও সাধ্যের মধ্যে থাকায় এ সাফল্য এসেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ওয়ালটন ফ্যান বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে।
জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর সোমবার এ বিক্রয় আদেশ পেয়েছে ওয়ালটন ও মার্সেল। এসব ফ্যানের মধ্যে রয়েছে বিপুল পরিমান সিলিং, টেবিল, দেয়াল, রিচার্জেবল, প্যাডেস্টাল ও এগজাস্ট ফ্যান।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর বসুন্ধরায় ওয়ালটন গ্রুপের কর্পোরেট অফিসে বিশালাকার কেক কেটে ফ্যান বিক্রির এই সাফল্য উদযাপন করা হয়। সেসময় ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর ও মার্সেল সেলস নেটওয়ার্ককে অভিনন্দন জানান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শামছুল আলম এবং পরিচালক এস এম মাহবুব আলম মৃদুল।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন বিপণন বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ইভা রিজওয়ানা, হেড অব ডিস্ট্রিবিউটর মার্কেটিং এমদাদুল হক সরকার, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টরস নজরুল ইসলাম সরকার, এস এম জাহিদ হাসান, হুমায়ূন কবীর, উদয় হাকিম, মো. রায়হান ও আমিন খান, মার্সেলের হেড অব সেলস ড. মো. সাখাওয়াৎ হোসেন, অ্যাডিশনাল অপারেটিভ ডিরেক্টর সোহেল রানা, ফ্যান সেলস এন্ড মার্কেটি বিভাগের প্রধান সৈয়দ কোহিনূর রহমান, ফ্যান মার্কেটিং বিভাগের ইনচার্জ মো. ওমর খালিদ, ফ্যান আরএনডি বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী রুবেল আহমেদ প্রমূখ।
ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর সেলস নেটওয়ার্ক বিভাগের প্রধান এমদাদুল হক সরকার বলেন, দেশের বাজারে ওয়ালটন ইলেকট্রিক ফ্যানের আশাতীত বিক্রি বেড়েছে। চলতি বছর সারা দেশে ৬ লাখেরও বেশি ফ্যান বিক্রি হয়েছে ওয়ালটনের। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৯০ শতাংশ বেশি। আগামি বছর ১৫ লাখ ফ্যান বিক্রির টার্গেট নিয়েছে ওয়ালটন।
তিনি জানান, এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ফ্যানের প্রি-সেলস বুকিং। এর শুরুতেই ডিস্ট্রিবিউটর চ্যানেলের আওতায় ১ দিনে বিক্রি হয়েছে ২,৭৩,২৬৩ ফ্যান। আগামী দিনগুলোতে বিক্রি আরো বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী।
মার্সেলের হেড অব সেলস ড. মো. সাখাওয়াৎ হোসেন জানান, আগামী বছর দেড় লাখ ফ্যান বিক্রির টার্গেট নিয়েছে মার্সেল। সেই লক্ষ্য পূরণে প্রি-সেলস বুকিং এর প্রথম দিনেই পাওয়া গিয়েছে ৮৫ হাজার ৫’শ ইউনিট ফ্যান বিক্রির আদেশ। আশা করছি- আগামি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পরিমাণ ফ্যান বিক্রি হবে।
ফ্যানের সেলস এন্ড মার্কেটি বিভাগের প্রধান সৈয়দ কোহিনূর রহমান জানান, ওয়ালটন গ্রুপের সেলস নেটওয়ার্কে রয়েছে ৬টি শাখা। ওয়ালটন প্লাজা, ডিস্ট্রিবিউটর, করপোরেট, ইন্টারন্যাশনাল, অনলাইন বেজড ই-প্লাজা এবং মার্সেল। এর মধ্যে শুধু ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্ক মার্সেলের ডিলারদের কাছ থেকে মিলেছে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক ফ্যান বিক্রির অর্ডার। অন্যান্য সেলস নেটওয়ার্ক থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমান ফ্যান বিক্রির অর্ডার পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন গ্রুপের আওতাধীন মাইক্রো-টেক করপোরেশনে গড়ে তোলা হয়েছে ফ্যান তৈরির অত্যাধুনিক কারখানা। জার্মানি, জাপান, তাইওয়ান থেকে আনা হয়েছে মেশিনারিজ। গড়ে তোলা হয়েছে ডিজাইন, মান নিয়ন্ত্রণ এবং পণ্য গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ। উচ্চ শিক্ষিত, মেধাবি ও দক্ষ প্রকৌশলী এবং টেকনিশিয়ানদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে শক্তিশালী কর্মীবাহিনী। যারা প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে দেশেই উৎপাদন করছেন উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক ফ্যান।
আরএনডি বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী রুবেল আহমেদ বলেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যে এসব ফ্যানের মান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে কঠোরভাবে। মান নিয়ন্ত্রণে অনুসরণ করা হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ইলেকট্রোটেকনিক্যাল কমিশন (আইইসি)-এর স্ট্যান্ডার্ড। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে এসব ফ্যান।
তিনি জানান, ফ্যানে ব্যবহৃত মোটরের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে ওয়ালটন ও মার্সেল ফ্যানেই প্রথম ব্যবহার করা হচ্ছে ইনলাইন কপার ভারনিশিং প্রসেস। সিলিং ফ্যানের সম্পূর্ণ বডি ও পাখা তৈরি হচ্ছে অ্যালুমিনিয়ামে। ফলে, বাতাসের ধাক্কায় ফ্যানের পাখার অ্যাঙ্গেল পরিবর্তন হয় না। বাতাসও বেশি দেয়। মরিচা না পড়ায় টেকেও অনেক বছর। ফ্যানের আর্মেচার বা কয়েলে প্রায় শতভাগ (৯৯.৯৯%) বিশুদ্ধ এনামেল কপার এবং এইচ ক্লাস ইন্সুলেশন ক্যাবল ব্যবহার করায় উচ্চ ভোল্টেজ ও তাপমাত্রায় মোটর সহজে পুড়ে না। আবার প্রায় শতভাগ (৯৯.৯৯%) বিশুদ্ধ সিলিকন শীটে আর্মেচার বডি তৈরি করায় ওয়ালটন ও মার্সেল ফ্যানে তাপমাত্রা যেমন কম থাকে, তেমনি বিদ্যুৎ খরচ হয় কম। ইউরোপীয়ান স্ট্যান্ডার্ড বলবিয়ারিং ও উন্নতমানের ক্যাপাসিটর ব্যবহার করায় এসব ফ্যানের উচ্চ গতি বজায় থাকে।
প্রকৌশলীরা জানান, ওয়ালটন ও মার্সেলের সিলিং ফ্যানে অ্যারোডায়নামিক ডিজাইনের প্রশস্ত ও লিফট অ্যাঙ্গেলযুক্ত পাখা ব্যবহারের ফলে ফ্যানের বাতাস রুমের সর্বত্র সমানভাবে ছড়ায়। অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি বাতাস দেয়। এনার্জি সাশ্রয় হয় ৩৫ থেকে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত।
সিলিং ফ্যানের বডির জন্য রয়েছে ১০ বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি। আইএসও সনদপ্রাপ্ত সার্ভিস ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিস্তৃত ৭০টিরও বেশি সার্ভিস সেন্টার এবং ৩’শর অধিক কাস্টমার কেয়ার থেকে গ্রাহকদের দ্রুত বিক্রয়োত্তর সেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। রয়েছে কাস্টমার কেয়ার কল সেন্টার। গ্রাহকরা ১৬২৬৭ নাম্বারে কল করে পাবেন বিক্রয়োত্তর সেবা।