বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এশিয়ার দেশগুলো সবচেয়ে বড় বাজার। এ কারণে এসব দেশে পণ্যের আনা-নেয়া সবচেয়ে বেশি হয়। বিশেষত এশিয়ার সমুদ্রবন্দরগুলোকে বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি বিবেচনা করা হয়। বিশ্বের ব্যস্ততম ১০টি সমুদ্রবন্দরের সবগুলোই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। স্বাভাবিকভাবে অনলাইন হ্যাকার কিংবা সাইবার হামলাকারীদের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকে এ অঞ্চলের সমুদ্রবন্দরগুলো। বিভিন্ন সময়ই এশিয়ার ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দরগুলো সাইবার হামলার শিকার হয়। এ রকম একেকটি হামলায় এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমুদ্রবন্দরের ১১ হাজার কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লয়েড। খবর রয়টার্স ও বিজনেস ইনসাইডার।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমুদ্রবন্দরগুলোর সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে লয়েডের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা করেছে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর রিস্ক স্টাডিজ। সাইবার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট শীর্ষক এ গবেষণায় বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমুদ্রবন্দরগুলো সাইবার হামলার উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। সেই তুলনায় হামলা মোকাবেলা কিংবা হামলা পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে এসব সমুদ্রবন্দরের প্রস্তুতি বেশ কম। এ অঞ্চলের যেকোনো ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দরে সাইবার হামলায় ১১ হাজার কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, যা গত বছর বিশ্বব্যাপী সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতির অর্ধেক।
সাইবার হামলার কারণে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমুদ্রবন্দরগুলোকে সাইবার বীমার সুপারিশ করেছে লয়েড। বলা হয়েছে, বিশ্বের বুকে সবচেয়ে বেশি সাইবার বীমা করে যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্রবন্দরগুলো। ফলে যেকোনো ধরনের সাইবার হামলার পর দেশটির সমুদ্র বন্দরগুলো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়। মার্কিন সমুদ্রবন্দরের তুলনায় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বন্দরগুলোর সাইবার বীমা করার হার বেশ কম। এমনকি ইউরোপীয় সমুদ্রবন্দরগুলোর মধ্যেও সাইবার বীমা করার আগ্রহ কম। এ কারণে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও ইউরোপের সমুদ্রবন্দরগুলোর সাইবার হামলাজনিত ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিও বেশি।
লয়েডের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ব্যস্ততম ১০০ সমুদ্রবন্দরের তালিকায় প্রথম ১০টিই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের। এতে রয়েছে চীনের সাংহাই, সিঙ্গাপুর, চীনের নিংবো-ঝুশান, শেনজেং, গুয়াংজু, দক্ষিণ কোরিয়ার বুশান, হংকং, চীনের কিয়াংদাও, তিয়ানজিন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই সমুদ্রবন্দর রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে শিল্পপণ্য, তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিক পণ্য ও জ্বালানির সাপ্লাই চেইনে এসব সমুদ্রবন্দরকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বা হাব বিবেচনা করা হয়।
তবে সাইবার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টে জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের ১৫টি বড় সমুদ্রবন্দরের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বীমা না করা থাকায় এসব বন্দরের সাইবার হামলার ঝুঁকি ৯২ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। বড় ধরনের হামলা হলে ১১ হাজার কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে পারে এসব সমুদ্রবন্দর। উল্লেখ্য, হামলাকারীরা সমুদ্রবন্দরের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে বিভিন্ন সময় সাইবার হামলা চালায়। এমনকি এর আগে সমুদ্রবন্দরের কিংবা জাহাজের কম্পিউটার হ্যাক করে কার্গো ডাটাবেজ রেকর্ড হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা দেখা গেছে।
লয়েডের প্রধান জন নেইল বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার ও অটোমেশনের পথে সমুদ্রবন্দরগুলো যত অগ্রসর হচ্ছে, সাইবার হামলার ঝুঁকি ততই বাড়ছে। ঝুঁকি ও সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বন্দরগুলোকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সাইবার বীমা করতে হবে।
শুধু সমুদ্রবন্দরগুলো নয়, বরং সাইবার হামলার কারণে বৈশ্বিক পরিবহন খাতে বছরে ২ হাজার ৮২০ কোটি ডলার ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছে লয়েড। বৈশ্বিক ম্যানুফ্যাকচারিং ও রিটেইল খাতে এর পরিমাণ দাঁড়াতে পারে যথাক্রমে ২ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার ও ১ হাজার ৮৫০ কোটি ডলারে।