যুক্তি বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করে চীন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং দীর্ঘতম ‘ফাইভ জি’ নেটওয়ার্ক সেবা চালু করার পর আবারো একবার নড়ে-চড়ে বসেছে প্রযুক্তিবিদসহ নেটিজেনরা। অতি সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সেবাদানকারী তিনটি প্রতিষ্ঠান একযোগে ওয়্যারলেস এই প্রযুক্তি সেবা প্রদান শুরু করার এই সংবাদ প্রযুক্তি প্রেমীদের কাছে নতুন নয়। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে চীন কীভাবে এটা সফল করেছে? কিংবা এই প্রযুক্তি সম্প্রসারণে আমেরিকার বাজারে নিষিদ্ধ হওয়া চীনের প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ের ভূমিকাই বা কী?
চীনে ৮৫ কোটি মানুষ স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এসব ব্যবহারকারীদের মধ্যে ‘ফাইভ জি’ সেবা পৌঁছানোর পর নিশ্চয়ই বৈশ্বিক বাজার দখল করতেও চেষ্টা চালাবে চীন। যাতে করে প্রযুক্তিগত মূল্যায়নে চীন আরো প্রভাবশালী হয়ে উঠবে। দাম এবং নেটওয়ার্ক বিবেচনায় এই ‘ফাইভ জি’ সেবা শুধু চায়নাতে নয় যোগান চক্রে সারা বিশ্বে এক বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
এখন চোখ রাখা যাক, চীনের ‘ফাইভ জি’ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে হুওয়াইয়ের ভূমিকার দিকে:
চায়না মোবাইল (সিএইচএল), চায়না টেলিকম (সিএইচএ) ও চায়না ই্উনিকম (সিএইচইউ) চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত এই তিনটি প্রতিষ্ঠান ‘ফাইভ জি’ সেবা প্রদান করবে। যেখানে আল্ট্রা ফাস্ট ইন্টারনেট সুবিধা পাবে ব্যবহারকারীরা। এই সুবিধা নিরবচ্ছিন্ন ও বিস্তৃত করতে কাজ করে চলেছে চীন। অন্যদিকে সার বিশ্বের প্রযুক্তি বাজারে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতেও মরিয়া বেইজিং।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকিমিউনিকেশন যন্ত্রাংশ তৈরি প্রতিষ্ঠান ‘হুয়াওয়ে’ যারা বেশ সুনামের সাথে স্মার্টফোনের ব্যবসায়ও নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। চায়নার এই ‘ফাইভ জি’ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে হুয়াওয়ের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেনজেন ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান চায়নার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থাগুলোর সাথে ব্যবসা করে থাকে। যেখানে ‘চায়না মোবাইল’ (রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম প্রতিষ্ঠান) হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থা যারা কিনা তাদের অর্ধেকের মত ‘ফাইভ জি’ নেটওয়ার্কের চুক্তি করেছে হুয়াওয়ের সাথে। এ থেকে সহজেই অনুমেয় পারছেন হুয়াওয়ের ভূমিকা কতটুকু।
এই বাজারে হুয়াওয়ের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এরকিসন, নোকিয়া এবং জেডটিই-এর মত প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্ত তারা যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে নেই। চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা ‘চায়না ডেইলি’ এই সংবাদ প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হুওয়াইয়ের ব্যবসা সংকুচিত হওয়ার পর ওয়াশিংটন হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে ‘ফাইভ জি’ সেবার মাধ্যমে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগ এনে, এর সব ধরনের যন্ত্রাংশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের বাজারেও নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্ত হুয়াওয়ের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ বরাবরে মত প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এমনকি হুয়াওয়ে বলছে, তাদের ব্যবসা দিন দিন বেড়ে চলেছে। হুয়াওয়ে ইতোমধ্যে ‘ফাইভ জি’ সেবার জন্য ক্রেতা তৈরিতে মুনশিয়ানা দেখিয়েছে, এমন দাবি পক্ষে যুক্তিও উপস্থাপন করেছে। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি এরিকসন এবং নোকিয়াকে পেছনে ফেলে গত মাসেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘ফাইভ জি’ সেবার জন্য ৬০টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্টটি।
‘ফাইভ জি’ স্মার্টফোন বিক্রি
চায়নার অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ‘ফাইভ জি’ স্মার্টফোন তৈরি এবং তা বিক্রি শুরু করেছে। কিন্ত হুয়াওয়ের সাথে তারা পেরে উঠছে না। হুয়াওয়ের অবস্থান সবসময়ের মতো শীর্ষে। ক্যনালিস গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একজন গবেষক নিকল পেনগ বলেছেন, সেবা প্রদানে অপারেটরদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের তাদের নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম, হুয়াওয়ের এই সফলতার পথকে সহজ করেছে।
গত বুধবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যনালিসের একজন নিকল পেনগ তার এক গবেষণা নোটে বলেছেন, ‘হুওয়াইয়ের ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বি অপো, ভিভো এমনকি শাওমির জন্যেও এই বিভাগে বড় ধরনের কোন আশার আলো তিনি দেখছেন না।’