স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে অনেকে দামের পাশাপাশি র্যাম, স্টোরেজ, ক্যামেরা, প্রসেসর ও ব্যাটারি সক্ষমতার ওপর জোর দিয়ে থাকেন।
আবার যারা স্মার্টফোনে গেম খেলেন কিংবা ভিডিও দেখেন, তারা ডিসপ্লে প্রযুক্তির ওপর বেশি জোর দেন। বাস্তবে স্মার্টফোনের জন্য সেরা ডিসপ্লে প্রযুক্তি কোনটি?
মোবাইল ডিভাইস; বিশেষ করে স্মার্টফোনে প্রধানত দুই ধরনের ডিসপ্লে প্রযুক্তি দেখা যায়। একটি হলো অ্যামোলেড বা সুপার অ্যামোলেড; অন্যটি আইপিএস এলসিডি।
আইএইচএস মার্কিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী যত সংখ্যক ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি হবে, তার ৩০ শতাংশে ‘অ্যাক্টিভ-ম্যাট্রিক্স অর্গানিক লাইট-এমিটিং ডায়োড বা অ্যামোলেড’ ডিসপ্লে থাকবে এবং ২০২৩ সালে বৈশ্বিক বাজারে যত সংখ্যক ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি হবে, তার ৫০ শতাংশের বেশি ডিভাইসে অ্যামোলেড ডিসপ্লে প্রযুক্তি ব্যবহার হবে। অর্থাৎ স্মার্টফোন নির্মাতা এখন অ্যামোলেড ডিসপ্লে প্রযুক্তিসংবলিত ডিভাইস উন্মোচনে বেশি জোর দিচ্ছে।
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার কয়েক বছর ধরে খারাপ সময় পার করছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এবং নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট করতে স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো ডিভাইসে নতুন ফিচার যোগ করতে জোর দিচ্ছে। যে কারণে অ্যামোলেড ডিসপ্লে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। অ্যামোলেড ডিসপ্লে প্রযুক্তির নমনীয়তা, ইমেজের গুণমান এবং বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বৈশিষ্ট্যের কারণে স্মার্টফোন বাজারে ‘থিন-ফিল্ম-ট্রানজিস্টার লিকুইড-ক্রিস্টাল কিংবা টিএফটি-এলসিডি’ ডিসপ্লে প্রযুক্তি বাজার হারাচ্ছে।
আইএইচএস মার্কিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের কয়েকটি টেলিকম বাজারে স্বল্প পরিসরে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজির ব্যবহার শুরু হয়েছে। সেলফোন অপারেটরগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে ফাইভজির কার্যক্রম শুরুতে কার্যক্রম জোরদার করেছে। দ্রুতগতির এ নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির সুবিধা পেতে প্রয়োজন ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন ডিভাইসের। ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা বিবেচনা করে স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো এখন ফাইভজি সমর্থিত ডিভাইস উন্মোচনে কার্যক্রম জোরদার করেছে। ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হলে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে সুদিন ফিরবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আইএইচএস মার্কিটের ক্ষুদ্র-মাঝারি ডিসপ্লে বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক হিরোশি হায়াসে বলেন, ফাইভজি সমর্থিত হাই-এন্ড ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসে আরো যুগোপযোগী ফিচার যুক্ত করতে অ্যামোলেড ডিসপ্লে প্রযুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। ডিভাইস নির্মাতারা স্মার্টফোনে অ্যামোলেড ডিসপ্লে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছে। এর ফলে স্মার্টফোন ডিভাইসে আরো অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হবে। এছাড়া ফাইভজির কল্যাণে মোবাইল ডিভাইসে বিডিও কনটেন্ট দেখা এখনকার চেয়ে কয়েক গুণ বাড়বে। যে কারণে স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো আরো উন্নত ডিসপ্লে প্রযুক্তিসংবলিত ডিভাইস আনতে জোর দিচ্ছে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) তথ্যমতে, বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন সরবরাহ ৩৫ কোটি ৮৩ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগের একই প্রান্তিকের চেয়ে দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। পূর্ণাঙ্গরূপে ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হলে স্মার্টফোন বাজার আগের অবস্থানে ফিরবে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির।
ট্রেডফোর্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যামোলেড প্যানেলের বাজার ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারণ হচ্ছে। আগামী বছর অ্যামোলেড ডিসপ্লে প্যানেল বাজারে ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে, যা চলতি বছরের ৩২ দশমিক ৮ শতাংশের চেয়ে বেশি।
স্যামসাং, অ্যাপল, হুয়াওয়ে, অপো, ভিভো ও শাওমির মতো ডিভাইস নির্মাতারা তাদের হাই-এন্ড মডেলগুলোয় অ্যামোলেড ডিসপ্লে প্যানেল ব্যবহার করছে। ডিভাইস ব্যবহারকারীকে ফুলস্ক্রিন ভিউর অভিজ্ঞতা দিতে ভবিষ্যতে এ ব্র্যান্ডগুলোর স্মার্টফোনে অ্যামোলেড ডিসপ্লে প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বাড়বে।