বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগল স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহে গোপন প্রকল্প পরিচালনা করছে। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেম ‘অ্যাসেনশন’-এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
গুগলের এ প্রকল্পের নাম ‘প্রজেক্ট নাইটিঙ্গেল’। এর আওতায় লাখো মার্কিনির ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহের জন্য অ্যাসেনশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রজেক্ট নাইটিঙ্গেলের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা অনুসরণ করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুগল-অ্যাসেনশন চুক্তির আওতায় স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেমটির ল্যাব ফলাফল থেকে শুরু করে রোগীর জন্ম তারিখের তথ্য পাবে প্রজেক্ট নাইটিঙ্গেল। ২০১৮ সালে প্রজেক্ট নাইটিঙ্গেলের কার্যক্রম শুরু করে গুগল।
অ্যাসেনশনের স্ট্র্যাটেজি ও ইনোভেশন বিভাগের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট এডুয়ার্দো কনরাডো বলেন, বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা খাত বিকশিত হচ্ছে। অন্যান্য খাতের মতোই স্বাস্থ্যসেবাতেও এখন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। স্বাস্থ্যসেবা দানকারীরা যাতে চাহিদা অনুযায়ী যুগোপযোগী সেবা দিতে পারেন, তার প্রযুক্তিগত সমাধান দেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রয়োজন ও প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দিতে ডিজিটাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে আরো উন্নত ও নতুন স্বাস্থ্যসেবা মডেলের সঙ্গে পরিচয় করানো সম্ভব হবে। এখন অ্যাপ্লিকেশন ও অনলাইন সার্ভিস স্বাস্থ্যসেবা খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
বিষয়টি ঘিরে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি গুগল। এক মুখপাত্র বলেন, প্রজেক্ট নাইটিঙ্গেল ফেডারেল হেলথ লয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। অন্যদিকে অ্যাসেনশনের পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়, মার্কিন আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তারা গুগলের প্রজেক্ট নাইটিঙ্গেলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। গুগলের সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য বিনিময়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বজায় রাখা হয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুগলের একটি বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ মার্কিনিদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগটি। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির সহায়তায় স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য নতুন সফটওয়্যার উন্নয়ন করবে প্রতিষ্ঠানটি, যা অ্যাসেনশনের জন্য রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করবে এবং মানুষকে স্বাস্থ্যের উন্নতির পথ দেখাবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রমতে, অ্যাসেনশনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পর্কে চিকিৎসক কিংবা যেসব রোগীর তথ্য নেয়া হচ্ছে, তারা বিষয়টি জানেন না। এ তথ্য বিনিময় বিষয়ে কাউকে কিছু জানানো হয়নি। তবে গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেটের দেড় শতাধিক কর্মী এবং অন্যান্য স্টাফ অ্যাসেনশনের কাছ থেকে নেয়া এক কোটির বেশি মার্কিনির স্বাস্থ্যসেবা তথ্যে প্রবেশাধিকার পেয়েছেন।
গোপনীয়তা বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যে, হেলথ ইন্সুরেন্স পোর্টাবিলিটি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টাবিলিটি অ্যাক্ট ১৯৯৬ অনুযায়ী, অ্যাসেনশনের কাছ থেকে গুগল যে ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেছে, তা আইনের পরিপন্থী নয়। এ আইনের দ্বারা হাসপাতালগুলোকে নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রোগীর কিছু তথ্য শেয়ারের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেসের ভাষ্যে, রোগীর তথ্য শেয়ারের মাধ্যমে আরো উন্নত ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা প্লাটফর্ম উন্নয়ন করা সম্ভব। কাজেই এখানে তারা কোনো অন্যায় দেখছে না।
বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যবসা বাড়াতে জোর দিচ্ছে একাধিক প্রযুক্তি জায়ান্ট। অ্যাপল ও মাইক্রোসফটও তাদের বিভিন্ন সেবা প্লাটফর্মের মাধ্যমে মার্কিনিদের স্বাস্থ্য তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
সম্প্রতি ফিটনেস ট্র্যাকার ও ফিটনেস ঘড়ি নির্মাতা ফিটবিটকে অধিগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে গুগল। বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যবসা জোরদারের লক্ষ্যে এ অধিগ্রহণ প্রতিষ্ঠানটির। ফিটবিটের বিরুদ্ধে শুধু স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ থাকলেও নানা সময় গুগলের বিরুদ্ধে তাদের সেবা ব্যবহারকারীদের কথোপকথন, অবস্থানসংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে।