দাপ্তরিক কাজে ভীষণ ব্যস্ত, নিত্যদিনের সদাই কিনতে বাজারে যাওয়ার ফুরসত নেই কিংবা দোরগোড়ায় কোনো উৎসব কড়া নাড়ছে, এখনো প্রিয়জনের জন্য উপহার কেনা হয়নি—এ রকম পরিস্থিতিতে চটজলদি সমাধান দেয় অনলাইন কেনাকাটা। দেশী-বিদেশী অসংখ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, আপনি ঘরে কিংবা অফিসে বসেই যেকোনো পণ্য পছন্দ করে আঙুলের ছোঁয়ায় তা কিনে নিতে পারছেন। টাকাও পরিশোধ হয়ে যাচ্ছে অনলাইনে। আধুনিক প্রযুক্তির এ সুবিধা বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পিছিয়ে নেই ভারতীয়রাও। পেপল ও আইপিএসওএসের এক যৌথ জরিপে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেয়া ৮৮ শতাংশ ভারতীয় স্মার্টফোন ব্যবহার করে অনলাইনে কেনাকাটা ও অর্থ পরিশোধ করেছেন। এ কারণে অনলাইন কেনাকাটার বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য ভারত একটি বড় বাজার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ও টেলিকমলিড।
বৈশ্বিক অনলাইন বাজার নিয়ে ‘এমকমার্স রিপোর্ট’ নামের একটি জরিপ পরিচালনা করেছে পেপল ও আইপিএসওএস। জরিপে অংশ নিয়েছেন ১১টি দেশের ২২ হাজার ভোক্তা ও অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ৪ হাজার উদ্যোক্তা। ভারত থেকে অংশ নিয়েছেন ২ হাজার ভোক্তা। তাদের বয়স ১৮-৭৪ বছরের মধ্যে। আরো অংশ নিয়েছেন অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ৩০০ উদ্যোক্তা ও নীতিপ্রণেতা। তাদের কাছে অনলাইন ব্যবসার ক্রেতা-বিক্রেতার আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
জরিপে দেখা গেছে, ৮৮ শতাংশ ভারতীয় অংশগ্রহণকারী নিজেদের স্মার্টফোন ব্যবহার করে অনলাইনে কেনাকাটার পর অর্থ পরিশোধ করেছেন, যা অনলাইন পেমেন্টের বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে বেশি। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেয়া ৭১ শতাংশ অনলাইনে কেনাকাটার পর পেমেন্টে অভ্যস্ত।
জরিপ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ভারতের ৪৫ শতাংশ অনলাইন উদ্যোক্তা মনে করেন আগামী দিনগুলোতে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বহুল ব্যবহূত মাধ্যম হবে স্মার্টফোন। কেননা এতে সময় খুব কম লাগে। বাড়তি কোনো ঝামেলা থাকে না। এছাড়াও মোবাইল পেমেন্টে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি লেনদেন হয়। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সম্পর্ক স্থাপিত হয়, যা ব্যবসার জন্য উপযোগী।
অনলাইনে অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অ্যাপের ব্যবহার ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভারতে। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন তারা অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনে অর্থ পরিশোধে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যেখানে অ্যাপের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধের বৈশ্বিক গড় ৯০ শতাংশ। মূলত ভারতীয় তরুণদের কাছে অনলাইন কেনাকাটা ও অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়াটি বেশি জনপ্রিয়। ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ও ফ্যাশন পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ভারতীয়রা সবচেয়ে বেশি অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করেন।
এদিকে লন্ডনভিত্তিক জিএসএমএ অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সাল শেষে ভারতে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ছিল ৭৫ কোটি। ২০২৫ সাল নাগাদ দেশটিতে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৯২ কোটিতে। এর মধ্যে ৮ কোটি ৮০ লাখ ব্যবহারকারী পঞ্চম প্রজন্মের ফাইভজি নেটওয়ার্কের আওতায় আসতে পারেন। এর মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক টেলিকম খাতে চীনের সঙ্গে ভারতের প্রতিযোগিতা আরো জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর ৩০ শতাংশকে ফাইভজি নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে চীন।
জিএসএমএ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী যত মানুষ নতুন করে মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করবেন, তাদের এক-চতুর্থাংশ হবেন ভারতীয়। দেশটিতে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির এ প্রাক্কলন খুবই আশাব্যঞ্জক। এর ফলে একদিকে ভারতের টেলিকম ব্যবসার পরিধি বাড়বে, অন্যদিকে টেলিকম খাতের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত অন্যান্য ব্যবসাও (অনলাইন কেনাকাটা, বিনোদন প্রভৃতি) ফুলে-ফেঁপে উঠবে