বর্তমানে খুব কম পণ্যই আছে যা চীনারা বানায় না। এর কারণ কি জানেন? চট করে বলে ফেলা যায়, কপি পেস্টে তাদের মুন্সিয়ানাই উন্নত-অনুন্নত সব দেশে সাশ্রয়ী মূল্যের চায়না বাহারি পণ্যকে এগিয়ে রেখেছে।
স্মার্টফোনের বেলাতেও ঠিক তাই। সব ধরনের ফোন কিভাবে তারা এত কম দামে দিতে পারে সেটা এক কৌতুহল বটে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে আসা সেসব বিষয় নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।
যদিও চীনের পণ্যের মান ভালো নয়, এমন ধারণা কম-বেশি সবার মধ্যেই আছে। কিন্তু মান ভালো না হওয়ার পরও বাজারে চীনা পণ্যই বেশি দেখা যায়।
কী কারণে চীনের পণ্য দিয়ে বিভিন্ন দেশের বাজার সয়লাব হয়ে গেছে তারই কয়েকটি কারণ এখানে তুলে ধরা হলো-
দামের ভারসাম্য
যেসব কারণে চীনা পণ্য বিভিন্ন দেশের বাজার সয়লাব হয়ে গেছে সেটির মূলে রয়েছে প্রযুক্তি কপি করতে তাদের ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা।
চীনা কোম্পানিগুলো ফোনে উন্নত প্রযুক্তি ঠিকই যুক্ত করে, তবে সেগুলোর গুণমান নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়। যেমন তারা বাজারের সবচেয়ে আধুনিক বা সর্বশেষ প্রযুক্তির হার্ডওয়্যার যুক্ত করে না। ফোনের পারফমেন্স ও দামের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাতেই বেশি মনোযোগ দেয় তারা।
এ কারণেই হাইএন্ড চীনা ফোনের সঙ্গে তুলনা করলে স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এস সিরিজের ফোনের দাম ক্রেতদের কাছে বেশি মনে হয়। স্যামসাং তাদের ফ্ল্যাগশিপ ফোনে যে মানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে বাজারে সেগুলোর দাম কিছুটা বেশি।
যেমন অনেক চীনা ফোনেই মিডিয়াটেকের প্রসেসর থাকে। স্যামসাংয়ের এক্সিনস প্রসেসরের চেয়ে মানের দিক দিয়ে যা অনেক পিছিয়ে। মিডিয়াটেক চীনা কোম্পানি হওয়ায় স্থানীয় ফোন নির্মাতা কোম্পানিগুলো তাদের কাছ থেকে কম দামে প্রসেসর কিনতে পারে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চীনা ব্র্যান্ডের ফোনগুলোতে ডিডিআর৪ র্যামের বদলে ব্যবহার করা হয় ডিডিআর ৩ র্যাম।
এছাড়াও ফোনে ব্যবহার করা হয় কম দামি জাপানিজ বা কোরিয়ান ডিসপ্লে। অ্যামোলেড বা আইপিএস প্যানেলের তুলনায় এই ডিসপ্লেগুলোর মান খারাপ হয়।
প্রচারণা কৌশল
ওয়ানপ্লাস ও শাওমির কোনো বিজ্ঞাপন টিভিতে বা পত্রিকায় খুব একটা দেখা যায় না। কারণ তারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে প্রচারণা চালানোতে জোর দিয়েছে।
তাদের অফিশিয়াল স্টোর কিংবা সার্ভিস সেন্টারের সংখ্যাও খুব একটা বেশি নয়। এসব কারণে তাদের পরিচালন ব্যয় কম। এতে কম দামে ফোন বেচেও তাদের অনেক লাভ থাকে।
ইনস্টাগ্রাম, ফেইসবুক, টুইটার ও উইবোতে তাদের বিপুল সংখ্যক ফলোয়ার আছে। আই কোনো পণ্য সম্পর্কে বিজ্ঞাপন দেওয়া মাত্র তা মুহূর্তের মধ্যে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে।
অপরদিকে, নামি দামি ব্র্যান্ড যেমন স্যামসাং, সনি বা অ্যাপল টিভি কমার্শিয়াল, স্পন্সরশিপ ও তারকাদের মুখপাত্র বানিয়ে প্রচারণা চালাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করেন।
সীমিত স্টক
এক সঙ্গে একই মডেলের অনেক ফোন তারা বাজারে আনে না। তারা সীমিত সংখ্যক ফোন বাজারে আনে পরে দ্রুত ফোনের স্টক শেষ হয়ে গেলে তৈরি হয় চাহিদা। এতে স্টক লট হয় না, যা কোম্পানির ব্যয় সাশ্রয় করে।
রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট
বড় ব্র্যান্ডগুলো যেমন অ্যাপেল, গুগল ও স্যামসাং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগে প্রচুর খরচ করে। অনেক চীনা ফোন কোম্পানিরই রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগই নেই। এ কারণে তাদের তৈরি ফোনে নতুন বা অভিনব কোনো প্রযুক্তির দেখা মেলে না।
এতে বাড়তি অর্থ ব্যয় হয় না চীনা কোম্পানিগুলোর।
কম লাভ
গুগল ও অ্যাপলের তুলায় প্রতি ইউনিট ফোনে তারা লাভের পরিমাণ খুব কম রাখে।
উৎপাদন খরচ কম
উৎপাদন খরচ খুব কম না হলেও চীনা পণ্য বেশ সস্তা। এর অন্যতম কারণ হলো দেশটিতে বিশাল পরিসরে উৎপাদন কাজ চলে। একই পণ্য প্রচুর পরিমাণে তারা উৎপাদন করে। ফলে দাম তারা কম রাখতে পারে।
দেশটিতে কাঁচামালও বেশ সহজলভ্য। দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। তাই কম সময়ে ও কম খরচে পণ্য পরিবহন করা যায়।
এ ছাড়া, চীনের শ্রম অনেক দেশের তুলনায় সস্তা। যদিও শ্রম অধিকারের কথা বলে শ্রমিকদের মজুরি কম বলে চীনে পণ্যের সংযোজন করায় না অ্যাপল। বরং তাদের উৎপাদন ক্ষমতা অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের তুলনায় বেশি হওয়ায় অ্যাপলের সঙ্গে বড় বড় চুক্তি করতে পারে তারা।