বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর হাতে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেবার প্রয়াসে একত্রে কাজ করবে গ্রামীণফোন, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ব্যাংকিং লাইসেন্সধারী ইউরোপভিত্তিক অর্থপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ফেরাটম গ্রুপ এবং সৃজনী ফাউন্ডেশন। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সম্প্রতি একটি অংশীদারি চুক্তিতে আবদ্ধ হয় প্রতিষ্ঠান তিনটি।
হাজারো ডিজিটাল সেবা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছে দেশের মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের ক্ষেত্রে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বাইরে রয়ে যাওয়ার হার আশংকাজনক রকমের বেশি। গ্রামীণফোন, সৃজনী ফাউন্ডেশন এবং ফেরাটমের এই যৌথ উদ্যোগের ফলে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে গ্রামীণ নারীদের মাঝে স্মার্টফোন ব্যবহারের উপযোগিতা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি, সাশ্রয়ী মূল্যের স্মার্টফোন ক্রয়ে নারীদের জন্যে বিশেষ ক্ষুদ্রঋণ প্রদান এবং সংযোগসহ স্মার্টফোন ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রথম ৬ মাসের জন্যে ২০ গিগাবাইট ইন্টারনেট ডাটা প্রদান করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীদের জন্যে স্মার্টফোন ক্রয়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানে কাজ করবে সৃজনী ফাউন্ডেশন এবং ফেরাটম গ্রুপ এবং স্মার্টফোন এবং ডাটাসহ সংযোগ প্রদান করবে গ্রামীণফোন।
এই উপলক্ষে ৮ ডিসেম্বরে একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় গ্রামীণফোনের প্রধান কার্যালয়ের ইনোভেশন ল্যাবে। আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মেহের আফরোজ, এমপি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও ও সিএমও ইয়াসির আজমান, প্রোডাক্ট বিভাগের প্রধাম এ ই এম সাইদুর রহমান, ডিভাইস বিভাগের প্রধান সরদার শওকত আলী এবং হেড অব এক্সটারনাল কমিউনিক্যাশনস মুহাম্মদ হাসান।
বেগম মেহের আফরোজ বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রয়াসের মূলে রয়েছে দেশের সকল জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল সেবার আওতায় নিয়ে আসা। এই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যেই প্রতি ১০ জনে ৬ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। আমাদের এখন মূল লক্ষ্য হতে হবে ইন্টারনেট সেবার বাইরে রয়ে যাওয়া জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের সকল সেবা তাঁদের দোরগড়ায় পৌঁছে দেয়া। এক্ষেত্রে গ্রামীণফোন, ফেরাটম গ্রুপ এবং সৃজনীর এই যৌথ উদ্যোগ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল সেবার আওতায় নিয়ে আসতে অসামান্য ভূমিকা পালন করবে।”
গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও ও সিএমও ইয়াসির আজমান বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশের উৎকর্ষের এই সময়ে এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা শহুরে জীবনের সুযোগ সুবিধা গুলো বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে পারি।”
সৃজনী ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী ড. এম হারুন অর রশিদ বলেন, “বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে গতানুগতিক ব্যাংকিং সেবাসমূহ এখনো হাতের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে। বিশেষ করে সঞ্চয়, ঋণ গ্রহণ কিংবা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় সেবার প্রাপ্তির সম্ভাবনা অপ্রতুল। ঋণ গ্রহণের প্রক্রিয়া সহজিকরণের সাথে উৎপাদনমূলক কর্মকান্ড সরাসরি সম্পর্কিত বলে মনে করে সৃজনী। বিশেষ করে স্মার্টফোন ডিভাইসের ক্ষেত্রে অর্থায়নের সুযোগ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরাসরি ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এই যৌথ উদ্যোগের ফলে সমাজের অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত এবং স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর মাঝে তথ্য সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে, ফলে কৃষি নির্ভর আর্থিক কর্মকান্ড কিংবা দারিদ্র বিমোচনের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত কার্যক্রমকে করবে আরও গতিশীল।”
বিশেষ এই উদ্যোগ হতে পাওয়া অভিজ্ঞতা এবং এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তুলে ধরেন গ্রামীণফোনের জেনারেল ম্যানেজার রাশেদুল হাসান স্টালিন এবং প্রোডাক্ট লিড স্পেশালিষ্ট ও ডিভাইস ফাইন্যান্সিং প্রজেক্ট-এর ম্যানেজার কে এম রেজওয়ান শাকিল। অন্যান্যদের মাঝে ফেরাটম গ্রুপের পরিচালকবৃন্দ এবং সৃজনী বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন।