এনএএনডি ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে চীনে নিজেদের চিপ প্লান্টে বিনিয়োগ বাড়াতে যাচ্ছে স্যামসাং। ২০১৭ সালে একই প্লান্টে পরবর্তী তিন বছরে ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি, যা বাড়িয়ে আগামী বছরের মধ্যে ৮০০ কোটি ডলার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেমোরি চিপ বাজার ভালো সময় পার করছে। আগামীতে মেমোরি চিপের চাহিদা আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। এ নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির সুবিধা পেতে প্রয়োজন ফাইভজি সমর্থিত ডিভাইস। যে কারণে ফাইভজি মোবাইল ডিভাইসের চাহিদা বাড়ছে। ফাইভজি ডিভাইসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম জোরদার করেছে। এসব ডিভাইসের জন্য মেমোরি চিপের চাহিদা বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে চিপ উৎপাদন কারখানার সক্ষমতা ও উৎপাদন বাড়াতে বিনিয়োগের পূর্বনির্ধারিত অংক বাড়িয়েছে স্যামসাং।
বিশ্বের বৃহৎ এনএএনডি ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপ নির্মাতা স্যামসাং। এ ধরনের মেমোরি চিপে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনে মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে এসব ডাটা কাজে লাগানো সম্ভব হয়। এনএএনডি ফ্ল্যাশ মেমোরি তিন আঙ্গিকে পাওয়া যায়। এগুলো হলো মেমোরি কার্ড, ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ এবং সোলিড-স্টেট ড্রাইভ।
২০১৭ সালে চীনে নিজেদের চিপ প্লান্টে ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল স্যামসাং। ২০২০ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে এ বিনিয়োগ সম্পন্ন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। এ কারখানায় শুধু এনএএনডি ফ্ল্যাশ মেমোরি উৎপাদন করে আসছে স্যামসাং। এরও আগে কারখানাটি থেকে উৎপাদিত মেমোরি চিপ পরীক্ষণ এবং প্যাকেজিংয়ে ১ হাজার ৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
চীনের মেমোরি চিপ কারখানায় বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি স্যামসাং। বৈশ্বিক এনএএনডি মেমোরি চিপ বাজারে স্যামসাংয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক এসকে হাইনিক্স, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মাইক্রোন টেকনোলজি ইনকরপোরেশন এবং তোশিবা করপোরেশন। এখন চীনভিত্তিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আকর্ষণীয় বাজারটিতে প্রবেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বৈশ্বিক প্রতিযোগীদের সঙ্গে এখনো খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি।
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে নেতৃত্ব দিলেও চীনের বাজারে স্থানীয় প্রতিযোগীদের কারণে সুবিধা করতে পারছে না স্যামসাং। গত অক্টোবরের শুরুর দিকে দেশটিতে নিজেদের ফোন উৎপাদন কারখানা বন্ধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ওই সময় বিবৃতিতে স্যামসাং জানায়, তারা চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষেই চীনে নিজেদের ফোন উৎপাদন কারখানার কার্যক্রম বন্ধ করেছে। দেশটিতে ওই কারখানাটিই স্যামসাংয়ের সর্বশেষ চালু থাকা ফোন উৎপাদন কারখানা ছিল। প্রতি মাসে কারখানাটিতে কত ইউনিট ফোন উৎপাদন হতো কিংবা এতে কর্মীসংখ্যা কত ছিল, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি।
বিশ্বের বৃহৎ স্মার্টফোন বাজার চীন। অথচ চলতি বছর দেশটিতে সর্বশেষ চালু থাকা স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানার কার্যক্রমও বন্ধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। জানা যায়, চীনের স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাংয়ের দখল কমে ১ শতাংশের নিচে নেমে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্যামসাং।
গত বছর ডিসেম্বরেও চীনের তিয়ানজিনে একটি মোবাইল ফোন উৎপাদন কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল স্যামসাং। দেশটিতে স্থানীয় সাশ্রয়ী ডিভাইস নির্মাতাদের কারণে তীব্র প্রতিযোগিতা এবং বিক্রি কমে যাওয়ায় কারখানাটি বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এর ছয় মাস পর কার্যক্রম চালু থাকা বাকি একটি মাত্র স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানার উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দেয় স্যামসাং।
স্ট্র্যাটেজি অ্যানালিটিকসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে চীনের স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাংয়ের দখল ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানটির বাজার দখল সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশটিতে অ্যান্টি দক্ষিণ কোরিয়া মনোভাবের কারণে স্যামসাং ডিভাইস বিক্রি কমেছে বলে মনে করা হয়। অবশ্য চীনের বাইরে নিজেদের স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানাগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে স্যামসাং।