চীনভিত্তিক সোস্যাল মিডিয়া কোম্পানি বাইটডান্স টিকটক অ্যাপ দিয়ে খুব অল্প সময়ে পরিচিতি পেয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে দামি স্টার্টআপের তকমাটিও দখলে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে টিকটক অ্যাপ দিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সেলিব্রিটিদের আদলে বিতর্কিত ভিডিও তৈরির সুবিধার কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তরুণ প্রজন্ম টিকটক অ্যাপে আসক্ত হয়ে পড়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া অ্যাপটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের ব্যবহারকারীদের তথ্য চীনে পাচারের অভিযোগও রয়েছে। সামগ্রিকভাবে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে টিকটকের প্যারেন্ট কোম্পানি বাইটডান্স। যে কারণে টিকটক অ্যাপ ব্যবসার অর্ধেক বেচে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।
২০১২ সালের মার্চে কার্যক্রম শুরু করে বাইটডান্স। গত বছর শেষে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য ৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। বাইটডান্সের টিকটক অ্যাপের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। অ্যাপটি উন্মোচনের পরপরই বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও তৈরির এ অ্যাপ। একই সঙ্গে অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হওয়া নিয়েও সমালোচনা বাড়তে থাকে। বাইটডান্স শুধু টিকটকের মতো জনপ্রিয় অ্যাপ উন্মোচন করেই থেমে থাকেনি। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি স্মার্টিসান টেকনোলজি নামের স্থানীয় এক ডিভাইস নির্মাতার সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে স্মার্টফোন বাজারেও নাম লিখিয়েছে। টিকটকের কার্যক্রমকে এরই মধ্যে নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা নিয়ে বাড়তি চাপ সামাল দিতে টিকটকের কার্যক্রম মূল প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথক করার পাশাপাশি অ্যাপটির সিংহভাগ অংশীদারিত্ব বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। টিকটকের অর্ধেক মালিকানা ছেড়ে দিয়ে ১ হাজার কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে বাইটডান্স।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্যমান ব্যবসার প্রায় অর্ধেক বিক্রি করে দেয়া হলেও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে বাইটডান্সই থাকার চেষ্টা করছে। তবে আদৌ সম্ভব হবে কিনা, তার ওপর নির্ভর করছে। চীনা টেলিকম সরঞ্জাম নির্মাতা জিটিই, হুয়াওয়ের মতো বাইটডান্সের ব্যবসা মডেল নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে পরে যেকোনো ধরনের জটিলতা এড়াতে ব্যবসা বিক্রি করতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও নিজেদের কার্যক্রমের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে।
বাইটডান্সের দাবি, টিকটক বিভিন্ন দেশের আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এছাড়া টিকটক অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ব্যবহারকারীদের তথ্য চীনে পাচারের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তার পক্ষে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেনি।
বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও টিকটকের কার্যক্রম নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। গত এপ্রিলে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের মাদ্রাজ হাইকোর্ট টিকটক নিষিদ্ধ করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছিলেন। টিকটক পর্নোগ্রাফিকে উৎসাহিত করছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারপতি এস কিরুবাকারান ও এসএস সুন্দরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে টিকটক ব্যবহার করে নির্মিত কোনো ভিডিও গণমাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধ করতেও নির্দেশনা দেয়া হয়।
মাদ্রাজ হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশে বলা হয়েছিল, আদালত পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, টিকটকের মতো মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অহরহ পর্নোগ্রাফি ও অনুপযুক্ত কনটেন্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার সরকার টিকটক নিষিদ্ধ করেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র শিশুদের রক্ষায় চিলড্রেন অনলাইন প্রাইভেসি অ্যাক্ট নামে নতুন একটি আইন পাস করেছে। ভারতেও এ রকম একটি আইন পাস করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে তরুণ প্রজন্মকে ইন্টারনেটের আপত্তিকর আসক্তি থেকে বের করে আনতে অশ্লীল কনটেন্ট, অনলাইনে জুয়া খেলা কিংবা তরুণদের বিপথে পরিচালিত করে, এমন সাইট বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। এরই অংশ হিসেবে সে সময় টিকটক অ্যাপের কার্যক্রমও বন্ধের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল।