হুয়াওয়ে গত বছরের বিক্রয় রাজস্ব ৮৫ হাজার কোটি চাইনিজ ইউয়ান বা ১২১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, যা বিশ্বের বৃহৎ টেলিকম সরঞ্জাম এবং দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির ২০১৮ সালের মোট বিক্রয় রাজস্বের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি। বিশ্বজুড়ে কয়েকটি বাজারে নিজেদের টেলিযোগাযোগ সরঞ্জামের নিরাপত্তা নিয়ে চাপে থাকলেও বিক্রয় রাজস্বে ধারাবাহিক উল্লম্ফনকে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ ব্যবসার জন্য ইতিবাচক মনে করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স ও টেলিকম লিড।
চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে তাদের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম, এন্টারপ্রাইজ এবং স্মার্টফোন ব্যবসা গ্রুপের রাজস্ব প্রাক্কলন পৃথকভাবে প্রকাশ করেনি। তবে প্রতিষ্ঠানটির আশঙ্কা চলতি বছর তাদের আরো কঠোর ব্যবসায় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বৈশ্বিক ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির কারণে গত দুই বছর প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় রাজস্বে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। গত বছরের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধের জেরে খারাপ সময় পার করতে হয়েছে। গত মে মাসে হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এতে মার্কিন অংশীদারদের সঙ্গে হুয়াওয়ের ব্যবসা পরিচালনা স্থগিত হয়ে যায়।
হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেডের রোটেটিং চেয়ারম্যান এরিক জু নতুন বছর সামনে রেখে কর্মীদের উদ্দেশে এক ই-মেইল বার্তায় বলেন, বাড়তি চাপ সামলাতে হলেও তাদের ব্যবসা কার্যক্রম এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। হুয়াওয়ে যেকোনো ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ব্যবসা পরিচালনায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। গত বছরের বিক্রয় রাজস্ব তাদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে ডিজিটাল রূপান্তর অংশীদার হিসেবে বিশ্বব্যাপী সাত শতাধিক শহর কর্তৃপক্ষ এবং ২২৪টি ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ কোম্পানি হুয়াওয়েকে মনোনীত করেছে। এ সংখ্যা আগামীতে আরো বাড়বে। আমরা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় টেলিকম ক্যারিয়ারগুলোর সঙ্গে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি নিয়ে কাজ করছি।
২০১৯ সালের বিক্রয় রাজস্বের প্রাথমিক আর্থিক খতিয়ান প্রকাশের পাশাপাশি কম্পিউটিং বিজনেস স্ট্র্যাটেজি এবং নতুন দুটি অফার চালু করেছে হুয়াওয়ে। এগুলো হলো বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সমর্থিত অ্যাসেন্ড ৯১০ প্রসেসর এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনার জন্য এআই ক্লাস্টার সার্ভিস মডেল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক বাজারে গত বছর হুয়াওয়ের স্মার্টফোন সরবরাহ ২৪ কোটি ইউনিটে পৌঁছেছে। ডিভাইস ব্যবসার পাশাপাশি গত বছর একটি ইকোসিস্টেম উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যে ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে পার্সোনাল কম্পিউটার (পিসি), ট্যাবলেট, ওয়্যারেবল ডিভাইস এবং স্মার্টস্ক্রিন ব্যবহারকারীদের একই ছাতার নিচে নিতে পারবে। এতে হুয়াওয়ের ডিজিটাল ডিভাইস এবং সেবা ব্যবহারে আরো উন্নত অভিজ্ঞতা মিলবে।
এরিক জু বলেন, ব্যবসায় পরিচালনার বাহ্যিক পরিবেশ আগের যেকোনো সময়ের থেকে জটিল হয়ে উঠেছে। এতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে বৈশ্বিক অর্থনীতির নিম্নমুখী গতি। এছাড়া মার্কিন সরকার বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানের নেতৃস্থানীয় প্রযুক্তি উন্নয়নের বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আগামীতে দেশটির পক্ষ থেকে চাপ আরো বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে হুয়াওয়েকে খুব চ্যালেঞ্জিং পরিবেশের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, হুয়াওয়ের ব্যবসায় নীতি অত্যন্ত স্বচ্ছ ও দৃঢ়। যে কারণে বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পেরেছে। আগামী বছরের মধ্যে আমরা ডিজিটাল রূপান্তর এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিকাশের নতুন মাত্রা দেখতে পাব। এক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। এ রকম সময় আমরা অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি, সামগ্রিক কার্যক্রমের মান আরো উন্নত করতে জোর দিচ্ছি, যা গ্রাহক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
তিনি আরো বলেন, এখন তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে গ্রাহক বিশ্বস্ততা অর্জন যেকোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শক্তিশালী সফটওয়্যার প্রকৌশলের মাধ্যমে এ বিশ্বাস গড়ে তোলা সম্ভব। আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ মানদণ্ডে রাখব, সাইবার নিরাপত্তা ও গ্রাহকদের গোপনীয়তা নিশ্চিত করব।