বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেছেন, জ্ঞান হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শক্তি। জ্ঞান চর্চা না করলে তা নষ্ট হয়ে যায়। যে বাঙালি লাঙ্গল চালানো ছাড়া আর কিছুই জানত না, সেই হাতে এখন ল্যাপটপ কিংবা স্মার্ট ফোন। বাংলাদেশকে আর থামানো যাবে না। আমরা মহাকাশ জয় করেছি, দারিদ্র জয় করছি, পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র আমরা চালু করতে যাচ্ছি। আমরা ২০২১ সালে প্রযুক্তির বিস্ময়কর আবিস্কার ফাইভজি যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং সোসাইটি ফাইভ পয়েন্ট জিরো শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অথিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। রবি আজিয়াটা লিমিটেডের সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এর সঞ্চালনায় বিটিআরসি‘র এসএস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল আলম অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন। অনুষ্ঠানে সাবেক সচিব শ্যামসুন্দর শিকদার প্রমুখ বক্ততা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হচ্ছে যান্ত্রিক এবং সোসাইটি ফাইভ পয়েন্ট জিরো হচ্ছে মানবিক। তিনি বলেন যন্ত্র মানুষের জন্য কিন্তু যন্ত্রের জন্য মানুষ নয়। জ্ঞানই হচ্ছে সভ্যতার নতুন শক্তি। জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ ডিজিটাল সাম্য সমাজের দিকে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে এমন কোন এলাকা খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে ব্রডব্যান্ড সংযোগ থাকবে না। ২১ সালের মধ্যে আমরা ফাইভ জি প্রযুক্তি চালু করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।। প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। তাঁরই উত্তরসুরি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশে কম্পিউটারের ওপর থেকে ভ্যাট ট্যাক্স প্রত্যাহার এবং চারটি কোম্পানিকে মোবাইল ফোনের লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে দেশে কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনকে সাধারণের নাগালের মধ্যে পৌছে দেন। দেশের স্থাপিত হয় ডিজিটাল প্রযুক্তির ভিত্তি।
তিনি ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসুচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রযুক্তি বিশে^ একটি মাইল ফলক স্থাপন করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসুচি এখন একটি বৈশি^ক কর্মসূচিতে রূপ লাভ করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ধারবাহিকতায় বাংলাদেশ গত এগার বছরে উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে অভাবনীয় সফলতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ আজ পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
মেলার শেষ দিনে মন্ত্রী এবং সিনিয়র সরকারী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণের অংশ গ্রহণে উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তা, ভবিষ্যত বাংলাদেশের চালিকা শক্তি, উন্নত সেবা প্রদানে ডিজিটাল সরকার, স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন্স এবং ডিজিটাল ব্রডকাস্টিং, প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ডিজিটাল প্রযুক্তি শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী‘র তথ্য ও যোগাযোগপ্রযু্িক্ত উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ কর্তৃক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হযেছে তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা ২০২০।
এ মেলায় আইএসপিসহ ৮২টি প্রতিষ্ঠান, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল, ট্রিপল প্লে (এক ক্যাবলে ল্যান্ডফোনের লাইন, ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ), মোবাইল অ্যাপস, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা ও ডিজিটাল প্রযুক্তি ইত্যাদি প্রদর্শন করবে। ওয়ালটন, স্যামসাং, সিম্ফনির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন করছে। এছাড়াও দেশি সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো তাদের তৈরি সফটওয়্যার ও সেবা উপস্থাপন করছে। টেলিকম অপারেটরগুলো তাদের ভয়েস, ইন্টারনেট ও মূল্য সংযোজিত সেবা (ভ্যাস) দেখাচ্ছে। এছাড়া জেডটিই, হুয়াওয়ে, নকিয়া, এরিকসন ফাইভ-জি প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে। দেখাবে লাইভ ব্যবহারের উপযোগিতা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট টেলিমেডিসিন ও এটিএম সেবা দেখাবে। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ভিশন মেলার মাধ্যমে টেলিমেডিসিন প্রদর্শীত হচ্ছে। মেলায় লাইভ দেখা যাচ্ছে ফাইভ-জি।
মেলায় ২৫টি স্টল, ২৯টি মিনিপ্যাভিলিয়ন এবং ২৮টি প্যাভিলিয়ন রয়েচে। এতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ডিজিটাল অগ্রগতি তুলে ধরা হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সব সংস্থা- এতে অংশ নিয়েছে।