আন্তর্জাতিক চলাচলের ক্ষেত্রে অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি ভ্রমণকে আরও সহজ, ঝামেলামুক্ত ও সময় সাশ্রয়ী করতে আগামী ২২ জানুয়ারি বুধবার দেশে চালু হচ্ছে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) কার্যক্রম। সবকিছু ঠিক থাকলে এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম উদ্যোগ। ওই দিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কীভাবে এই ই-পাসপোর্ট পাওয়া যাবে, তা নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ ও কৌতূহল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে রাজধানীর উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও আগারগাঁও—এই তিনটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু করবে। পরবর্তী সময়ে দেশের ৭২টি আঞ্চলিক ও বিভাগীয় অফিসে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ৮২টি মিশনে এ কার্যক্রম চালু হবে। যা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। ই-গেট পদ্ধতিতে ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পাসপোর্টধারীর প্রকৃত তথ্য ও ফেসিয়াল রিকগনিশন যাচাই করা যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র অনলাইনে অথবা পিডিএফ ফরমেট ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে। এতে কোনও ছবির প্রয়োজন হবে না। কোনও ধরনের কাগজপত্রও সত্যায়িত করতে হবে না। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ (বিআরসি)-সহ মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবেদনপত্র নেওয়ার সময় হাতের দশ আঙুলের ছাপ, ছবি ও চোখের আইরিশ ফিচার নেওয়া হবে।
একটি ই-পাসপোর্ট হবে ৪৮ পাতার, অন্যটি ৬৪ পাতার। পাঁচ বছর ও দশ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হারে ফি জমা দিতে হবে। মান তিন ধরনের। ‘অতি জরুরি’, ‘জরুরি’ ও ‘সাধারণ’। এরমধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘অতি জরুরি’ ৪৮ পাতার ই-পাসপোর্ট মাত্র দুই দিনে পেতে চাইলে ফি জমা দিতে হবে ৭ হাজার পাঁচশ টাকা। ৪৮ পাতার ‘জরুরি পাসপোর্ট’ পেতে সময় লাগবে সাত দিন। এর জন্য ফি জমা দিতে হবে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। ৪৮ পাতার ‘সাধারণ ই-পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে ফি জমা দিতে হবে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।
অন্যদিকে, ৪৮ পাতার ১০ বছর মেয়াদি ‘সাধারণ ই-পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে ফি লাগবে ৫ হাজার টাকা। সাত দিনে ‘জরুরি’ মানের ১০ বছর মেয়াদি ৪৮ পাতার ই-পাসপোর্ট পেতে ফি লাগবে সাত হাজার টাকা। আর মাত্র দুই দিনে ‘অতি জরুরি’ মানের ৪৮ পাতার ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট পেতে ফি জমা দিতে হবে ৯ হাজার টাকা।
পাঁচ বছর মেয়াদি ৬৪ পাতার ‘সাধারণ ই-পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে ফি লাগবে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। সাত দিনে ‘জরুরি ই-পাসপোর্ট’ পেতে ফি জমা দিতে হবে সাত হাজার ৫০০ টাকা। দুই দিনে ‘অতি জরুরি ই-পাসপোর্ট’ পেতে ফি জমা দিতে হবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। একইসঙ্গে ১৫ দিনে ৬৪ পাতার ১০ বছর মেয়াদি ‘সাধারণ ই-পাসপোর্ট’ পেতে ফি জমা দিতে হবে ৭ হাজার টাকা। সাত দিনে ১০ বছর মেয়াদি ৬৪ পাতার ‘জরুরি ই-পাসপোর্ট’ পেতে ফি জমা দিতে হবে ৯ হাজার টাকা। মাত্র ২ দিনে ‘অতি জরুরি’ মানের ৬৪ পাতার ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট পেতে ফি জমা দিতে হবে ১২ হাজার টাকা। এই ফি’র সঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট জমা দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রবিবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘একে একে প্রধানমন্ত্রীর সব স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। ২০০৮ সালে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে ডিজিটাইজ। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো লেগেছিল। আজ এর সুফল সবাই পাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ই-পাসপোর্ট চালু হলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সম্মান বাড়বে। ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে মেশিনে একজন ব্যক্তির প্রকৃত তথ্য মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে যাচাইয়ের সুবিধা রয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ই-পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে। তবে বিভিন্ন ধরনের নাজেহাল এড়াতে এটি অনলাইনে করার চেষ্টা করছি, যেন অতীতের তুলনায় সহজ হয়।’ ২০২০ সালের মধ্যে দেশের সর্বত্র ই-পাসপোর্ট চালু হবে বলেও তিনি জানান।